বেগম মুজিবের ৯২তম জন্মবার্ষিকী আজ
‘একজন পুরুষের সাফল্যের পেছনে একজন নারী থাকে।’ কথাটি প্রতিটি মানুষের জীবনেই প্রভাব ফেলে। ঠিক যেমন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাফল্যের পেছনে রয়েছে বেগম মুজিব।
বেগম মুজিব হলেন বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী। তার পুরো নাম বেগম ফজিলাতুন্নেছা। ১৯৩০ সালের ৮ আগস্ট গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তার ডাকনাম রেণু। তার বাবার নাম শেখ জহুরুল হক ও মায়ের নাম হোসনে আরা বেগম। এক ভাই ও দুই বোনের মধ্যে বেগম মুজিব ছিলেন ছোট।
যখন বেগম মুজিবের বয়স পাঁচ বছর তখন তার মা-বাবা মারা যান। তিনি ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমানের চাচাতো বোন। বাবা-মা মারা যাওয়ার আগে শেখ মুজিবুর রহমানের বয়স যখন তেরো এবং বেগম মুজিবের বয়স তিন, তখনই তাদের বিয়ে ঠিক করেন পরিবারের বড়রা। এরপর ১৯৩৮ সালে শেখ মুজিবের বয়স ১৮ এবং বেগম মুজিবের বয়স ৮ তখন তাদের বিয়ে দেওয়া হয়। এই দম্পতির ঘরে ছিলেন দুই কন্যা ও তিন ছেলে। তারা হলেন শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শেখ রাসেল।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন স্বাধীন রাষ্ট্রের পথপ্রদর্শক। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বেই দীর্ঘ লড়াই ও সংগ্রামেই বাংলা আজ স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র। লড়াইয়ে প্রেরণা দানকারী ব্যক্তি ছিলেন বেগম মুজিব। বঙ্গবন্ধু যখন পাকিস্তানি শাসকদের কাছে বন্দি ছিলেন তখন বেগম মুজিবের কাছেই ছুটে এসেছিলেন সবাই। তাদের সবাই সাহস জুগিয়ে গিয়েছিলেন বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। বঙ্গবন্ধুকে নানা কাজে অনুপ্রেরণাও জুগিয়েছিলেন বেগম মুজিব।
বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা লাভ করে বাংলাদেশ। আর বঙ্গবন্ধুর পাশে ছায়া হয়ে থেকে তাকে সাহায্য করেন বঙ্গমাতা বেগম মুজিব।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বেগম মুজিব নিজে ভেঙে না পড়ে নানা পরিস্থিতি সামাল দিয়েছেন। বিশেষ করে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় যখন বঙ্গবন্ধু প্যারোলে মুক্তি নিয়ে কিছু কুচক্রী মহল স্বাধীনতা সংগ্রামকে বিপন্ন করার ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছিল, তখন প্যারোলে মুক্তির বিপক্ষে বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের দৃঢ়চেতা অবস্থান বাংলার মুক্তি সংগ্রামকে ত্বরান্বিত করেছিল। এটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
স্বাধীনতার পরবর্তী সময়েও দেশ পুনর্গঠনে বঙ্গবন্ধুর পাশে থেকে কাজ করে গিয়েছিলেন বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। বীরাঙ্গনাদের বিয়ের ব্যবস্থা করে তাদের সমাজে প্রতিষ্ঠা করার মতো মহৎ কাজ করে গিয়েছিলেন বেগম মুজিব। দেশের প্রতি, দেশের মানুষের প্রতি তার কাজের জন্যই তাকে বঙ্গমাতা উপাধি দেওয়া হয়েছিল। বাঙালি জাতির জন্য কাজ করে যাওয়া মহীয়সী এই নারী ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে পুরো পরিবার ঘাতকচক্রের বুলেটের আঘাতে শহীদ হন।
আজ ৮ আগস্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৯২তম জন্মবার্ষিকীতে তার প্রতি রইলো বিনম্র শ্রদ্ধা। বঙ্গমাতার জন্মবার্ষিকীর এবারের প্রতিপাদ্য হলো ‘মহীয়সী বঙ্গমাতার চেতনা :অদম্য বাংলাদেশের প্রেরণা’। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা লাভ করে বাংলাদেশ। আর বঙ্গবন্ধুর পাশে ছায়া হয়ে থেকে তাকে সাহায্য করেন বঙ্গমাতা বেগম মুজিব। তাই তিনি হলেন বাংলাদেশের অনুপ্রেরণা।
অনন্যা/এসএএস