ধর্ষণ প্রতিরোধে দরকার জিরো টলারেন্স নীতি
ধর্ষণ এখন নিত্য-নৈমত্তিক ঘটনা মাত্র! পরিণত বয়সের নারী, বৃদ্ধা থেকে শুরু করে চার-পাঁচ বছরের শিশুও বাদ যাচ্ছে না ধর্ষকের শিকার থেকে। ধর্ষণ ঘটছে, ঘরে, অফিসে, পথেও। এমনকি আজকাল স্কুল-মাদ্রাসাও আর নিরাপদ নয়। সম্প্রতি চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদার দর্শনায় একটি মাদ্রাসায় শিশুছাত্রী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এতে বিষয়টি নতুন করে আবারও সবার সামনে এসেছে। যে শিক্ষককে বলা হয় মানুষ গড়ার কারিগর, তার কাছেই যদি শিশু শিক্ষার্থী নিরাপদ না থাকে, তাহলে মানুষ যাবে কোথায়?
![](https://a.kha.icu/wp-content/uploads/2022/04/rddtd-1024x576.jpg)
মানুষ গড়ার কারিগর যখন শিক্ষার্থীর ধর্ষক হয়ে ওঠে, তখন জাতির ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা না জাগার কোনো কারণ দেখি না। সম্প্রতি মাদ্রাসা শিক্ষকরা যেভাবে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ধর্ষক হয়ে উঠছে, মাদ্রাসাগুলো হয়ে উঠছে উৎকণ্ঠা-উদ্বেগের জায়গা।
![](https://a.kha.icu/wp-content/uploads/2022/04/dzzzzzzzzzzz-1024x576.jpg)
শুধু যে মাদ্রাসায় শিশু শিক্ষার্থী ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে, তা নয়। ধর্ষণ এখন ‘মহামারী’ আকারে ছড়িয়ে পড়ায় বাসা-কর্মস্থল-ফুটপাত, হোটেল-রেস্তোরাঁ, গণপরিবহন; সর্বত্রই একই চিত্র। ধর্ষণের জন্য পুরুষতন্ত্র প্রতিনিয়ত ওঁৎপেতে থাকে। এই ওঁৎপেতে থাকাদের হাতে প্রথম সুযোগ আসে নারীর অসহায়ত্ব-দারিদ্র্য। একশ্রেণীর নীচু পুরুষ নারীর অসহায়তার সুযোগ নিয়ে তাকে নানাভাবে জিন্মি করে ফেলে। অনেক নারী পুরুষতন্ত্রের ছড়ানো ‘জাল’ ছিঁড়তে না পেরে নিজেকে সমর্পণ করতেও বাধ্য হচ্ছে।
![](https://a.kha.icu/wp-content/uploads/2022/04/rssssssssssss-1024x576.jpg)
দারিদ্র্যের পর আসে চাকরি সুযোগ প্রসঙ্গ। নারীকে দেশে-বিদেশে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার কথা বলেও নিজের মতো করে চালাতে থাকে। একসময় ওই সাহায্যপ্রার্থী নারী ওঁৎপেতে থাকা পুরুষের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ে। তখনই ঘটে সর্বনাশ।
এভাবে চলতে থাকলে হয়তো এমন দিনও আসবে, ধর্ষণ শিকার হয়নি, এমন নারী-শিশু খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। তাই ধর্ষণ প্রতিরোধে রাষ্ট্রকে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে। না হলে ধর্ষণ আরও ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে। নারী-শিশুর জীবন হয়ে পড়তে পারে বিপন্ন।
![](https://a.kha.icu/wp-content/uploads/2022/04/rtryr-1024x576.jpg)
রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে ধর্ষণ প্রতিরোধে প্রচারণা চালাতে হবে। ধর্ষণ দমনে ‘জিরো টলারেন্স-নীতি’ গ্রহণ করতে হবে। এই জিরো ‘টলারেন্স-নীতি’ এখন সময়ের দাবি। অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করাতে হবে। পাশাপাশি গড়ে তুলতে হবে সামাজিক আন্দোলন। অর্থাৎ আইন প্রয়োগের সঙ্গে সঙ্গে ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগতভাবে সামাজিক প্রতিরোধ তৈরি করতে হবে।
![](https://a.kha.icu/wp-content/uploads/2022/04/yuyio-1024x576.jpg)
সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য সবার আগে ভূমিকা রাখতে পারেন জনপ্রতিনিধিরা। বিশেষত ইউনিয়ন পর্যায়ে চেয়ারম্যান, মেম্বার এবং পৌর এলাকায় কাউন্সিলররা। তারা উঠোন বৈঠক, পাড়ায়-মহল্লায় মতবিনিময় সভার ব্যবস্থা করতে পারেন। এসব সভায় তারা জনগণকে ধর্ষণের বিরুদ্ধে সচেতন করে তুলতে পারেন। আর শিক্ষকেরা শ্রেণীকক্ষে কেবল পাঠদানেই ব্যস্ত না থেকে সামাজিক দায়িত্ব পালন করতে পারেন। তারাও সমাজের সুশীল সমাজ ও পেশাজীবীদের সঙ্গে নিয়ে ধর্ষণবিরোধী আলোচনা সভার আয়োজন করতে পারেন। ঈমাম, পুরোহিতরা উপাসনালয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে নারীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল আচরণের আহ্বান জানাতে পারেন। এসব সভা-সমাবেশ ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে জনপ্রতিনিধি, ঈমাম-পুরোহিত, শিক্ষক, সাংবাদিকসহ সমাজের সুশীলরা নারীর প্রতি সংবেদনশীল আচরণের পক্ষে জনমত গড়ে তুলবেন। একই সঙ্গে ধর্ষণের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয় দিক থেকে কুফল সম্পর্কে ধারণা দেবেন।
![](https://a.kha.icu/wp-content/uploads/2022/04/gkfgf-1024x576.jpg)
সামাজিক আন্দোলন যত শক্তিশালী হবে, আইনের প্রয়োগও তত সহজ ও কার্যকর হবে। আর তাহলেই সমাজের সচেতন অংশের সম্মিলিত সহযোগিতায় রাষ্ট্র ধর্ষণের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সনীতি বাস্তবায়ন করতে পারবে সহজে।
JZ