রেখায় মুগ্ধ কয়েক প্রজন্ম!
বলিউডের এভারগ্রিন অভিনেত্রী রেখা। ১৯৬৬ সাল থেকে চলচ্চিত্র জীবন শুরু হয় তার। ৫৬ বছর ধরে রেখা যেন ক্রমশই বাড়িয়েছে তার জনপ্রিয়তা। একের পর এক প্রজন্ম রেখাতে মুগ্ধ হয়েছে। বয়স বেড়েছে, কাজেও নিয়মিত নন। তবুও ভাটা পড়েনি তার জনপ্রিয়তায় বরং আগের তুলনায় তার ভক্তের সংখ্যা বহুগুণ বেড়েছে বলা চলে। তবে রেখা শুধু কাজের জন্যই নয়, ব্যক্তিগত জীবন থেকে শুরু করে বহু বিষয় নিয়ে বিভিন্ন সময় আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন। রেখার জীবনের গল্প, একরোখা মনোভাব কোনো অংশেই সিনেমার চেয়ে কম নয়।
রেখার পুরো নাম ভানুরেখা গণেশন। জন্ম ১৯৫৪ সালের ১০ অক্টোবর। তিনি দক্ষিণী অভিনেতা জেমিনি গনেশন এবং তেলেগু অভিনেত্রী পুষ্পাভ্যাল্লির কন্যা। তবে তার বাবা-মা বিবাহিত ছিলেন না। রেখার বাবা মানতে নারাজ ছিলেন যে রেখা তারই সন্তান। এমনকি তিনি রেখার ভরণপোষণের দায়িত্বও নেননি। তাই পরিস্থিতির কারণে বাধ্য হয়ে শৈশবেই স্কুল ছেড়ে দেন রেখা। এরপর মাত্র ১৪ বছর বয়সেই পা রাখেন অভিনয় জগতে৷। নায়িকা হিসেবে নয়, সেবার শিশুশিল্পী হিসেবে চলচ্চিত্র-জীবন শুরু করেন।
১৯৬৬ সালে ‘রাঙ্গোলা রত্নম’ নামের তেলেগু সিনেমার মাধ্যমে তার যাত্রা শুরু হয়। নায়িকা হিসেবে বড় পর্দায় তার অভিষেক ঘটে ১৯৬৯ সালে ‘আনজানা সফর’ সিনেমায়। শুরুতেই তেমন সাড়া ফেলতে পারেননি এই অভিনেত্রী। সত্তরের দশকের মাঝামাঝি সময়ে মোটামুটি জনপ্রিয় হতে শুরু করেন। এ যাবত প্রায় ২০০টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন বলিউডের উমরাও জান খ্যাত এই অভিনেত্রী। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য কিছু চলচ্চিত্র হলো, দো আনজানে, আলাপ, ঈমান ধরম, খুন পাসিনা, গঙ্গা কি সুগন্ধ, রাম বলরাম, সিলসিলা, উমরাহ জান, কোই মিল গয়া ইত্যাদি।
‘দো আনজানে’ সিনেমাতে অমিতাভের সঙ্গে অভিনয় করে সবার নজরে আসেন রেখা। এই জুটিও তখনকার সময় হিট জুটি হিসেবে পরিচিত হয়ে যায়। তারপর একে একে ‘সিলসিলা’, ‘মুকাদ্দর কা সিকান্দার’ ‘খুন-পাসিনা’, ‘সুহাগ’, ‘মিস্টার নটবরলাল’সহ ১১টি সিনেমায় জুটি-বদ্ধ হয়ে অভিনয় করেন অমিতাভ-রেখা। অমিতাভ-রেখার সর্বশেষ সিনেমা ‘সিলসিলা’ মুক্তি পায় ১৯৮১ সালে। এরপর আর কখনো একসঙ্গে অভিনয় করেননি তারা।
রেখা তার কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনবার ফিল্মফেয়ার পুরস্কার, দু’বার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে এবং একবার শ্রেষ্ঠ সহ-অভিনেত্রীর পুরস্কার জিতেছেন এ অভিনেত্রী। ১৯৮১ সালে ‘উমরাও জান’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান রেখা। ২০১০ সালে লাভ করেন ‘পদ্মশ্রী’ সম্মাননা।
পর্দায় রেখার জীবন যেমন বৈচিত্র্যময় বাস্তবেও তাই। রেখার ব্যক্তিজীবন নিয়ে নানান সময় নানান গুঞ্জন রটেছে। বহুবার আলোচিত-সমালোচিত হয়েছেন তিনি। বলা হয় অসংখ্য নায়কের বিপরীতে অভিনয় করে একাধিক সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন রেখা। তাকে নিয়ে রয়েছে হাজারো বিতর্ক। প্রেমের সম্পর্ক বা গুঞ্জন যাই হোক শুরুতেই উঠে আসে বলিউডের বিগ-বি অমিতাভ বচ্চনের নাম। এক সময় অমিতাভ-রেখার বিয়ের গুঞ্জনও ছড়িয়ে পড়ে বলিউড মহলে। ১৯৮০ সালে ঋষি কাপুর এবং নিতু সিংয়ের বিয়েতে শাঁখা-সিঁদুর পরে উপস্থিত হয়েছিলেন রেখা। সেখান থেকে বিয়ের গুঞ্জন শুরু হয়, তবে এ বিষয়ে কখনোই মুখ খোলেননি অমিতাভ বা রেখা কেউই।
শুধু অমিতাভ বচ্চনই নয়,,কখনো অন্য কোনো নায়ক তো কখনো ব্যবসায়ী একের পর এক সম্পর্কে জড়িয়ে উঠে এসেছে একাধিক নাম। দিল্লির শিল্পপতি মুকেশ আগরওয়ালের সঙ্গে ১৯৯০ সালে বিয়ে হয় রেখার। বিয়ের এক বছরের মধ্যেই আত্মহত্যা করে মুকেশ। তখন অপমৃত্যুর জন্য রেখাকে দায়ী মনে করতেন অনেকেই। তবে মুকেশ সুইসাইড নোটে লিখে যান কারও কোনো দোষ নেই। এরপরও অনেক সম্পর্কে জড়ান রেখা, এমন গুঞ্জন বলিউডে এখনো ভেসে বেড়ায়। তবে ধীরে ধীরে কাজ কমিয়ে দেন তিনি। ২০০০ সালের পর থেকে মাত্র দুটি সিনেমায় দেখা গেছে তাকে। তার অভিনীত সবশেষ সিনেমা ‘শমিতাভ’। সিনেমাটি ২০১৫ সালে মুক্তি পায়। বর্তমানে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মাঝেমধ্যে দেখা যায় রেখাকে।
আলোচনা-সমালোচনা কখনই রেখার পিছু ছাড়েনি। তবে কোনো কিছুতেই মুষড়ে পড়েননি তিনি৷ নিজের অবস্থান ও ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে সবসময়েই সচেতন ছিলেন এই অভিনেত্রী। বরাবরই তিনি সাহসী, আত্মবিশ্বাসী ও একরোখা মনোভাবের পরিচয় দিয়েছেন। বলিউডের এত এত সুন্দরী নায়িকাদের ভিড়ে আজও এভারগ্রিন রেখা। দর্শকদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে আছেন একইভাবে।
অনন্যা/ জেএজে