স্বাবলম্বী নারীরা কেন নির্যাতনের শিকার হন
স্বাধীন বাংলাদেশে আজও মানুষ চিন্তায় পরাধীন। তাকে নিজের অবস্থান টিকিয়ে রাখার জন্য প্রতিনিয়ত লড়তে হয় বিরুদ্ধ শক্তির সঙ্গে। পাহড়সমান পরিমাণ দুঃখ-কষ্ট ভোগ করলেও ব্যক্তির নিজ মত-পথের গুরুত্ব পায় না। পরিবার, সমাজ বেশিরভাগ মানুষই চাপিয়ে দেয়। কিন্তু দিনশেষে যন্ত্রণা যাকে পোহাতে হয়, সে থেকে যায় লোকচক্ষুর অন্তরালে।
বর্তমান সমাজে নারী-পুরুষ উভয়ই বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার। তবে পুরুষের ক্ষেত্রে পরিবার-সমাজ শিথিল বিপরীতে নারীর ক্ষেত্রে খড়্গহস্ত! বাস্তবিকার্থে নারীরা সর্বক্ষেত্রেই নির্যাতনের শিকার। এমনকি স্বাবলম্বী নারীও তা থেকে ছাড় পান না।
স্বাবলম্বী নারী যিনি নিজেকে পরিচালনা করার ক্ষমতা রাখেন তিনিও বিভিন্নভাবে বাধাগ্রস্ত। দিনশেষে এই ধরনের নারীরাদেরও মানসিক যন্ত্রণা, স্খলন-পতন নিয়ে ভাবতে হয়। কারণ সমস্যা একেবারে প্রাথমিক স্তর থেকে। দুঃখ-কষ্টের সঙ্গী কেউ হতে পারে না তবে সহমর্মী হতে পারে অবশ্যই। কিন্তু বেশিরভাগক্ষেত্রেই মন্দা সময়কালে এই সহমর্মী ব্যক্তিদেরও সাক্ষাৎ পাওয়া যায় না। তবে একজন মানুষের জীবনে নাক গলিয়ে তাকে কিভাবে টেনে রাস্তায় ফেলা যায়, সেটা পরিবার-সমাজের আয়ত্তে।
স্বাবলম্বী নারীরা আজীবনই নিজেকে পরিচালনার দায়িত্ব নিজে রাখে এমন বক্তব্য কতটা সঠিক তা প্রশ্ন থেকে যায়। নারীরা স্বাবলম্বী হলেই যে নির্যাতনের শিকার হন না; এ ধরণা প্রচণ্ড পরিমাণে ভুল। কারণ স্বাবলম্বী নারী হয়তো আরও বেশি নির্যাতনের শিকার। কারণ বাবার বাড়ি শ্বশুরবাড়ি সবক্ষেত্রে চাহিদার বুলেটটা নারীর দিকে তাক করা থাকে। সেক্ষেত্রে নারী পড়েন উভয় সংকটে। আর সমাজে একটি কথা বহুল পরিচিত ‘পতিই সতীর গতি’। এই ধারণার বাইরে সমাজ আজও বের হতে পারেনি। ভবিষ্যতেও পারবে কি না, সন্দেহ!
নারীরা স্বাবলম্বী হলে নিজের ভালো-মন্দ বোঝার ক্ষমতা থাকে। কিন্তু সেই মূল্যায়ন নারীর নেই। বরং স্বাবলম্বী নারী যখন তার ভালো-মন্দ নিয়ে কথা বলে সেখানে আরও নানা রকম ত্রুটি খুঁজে বের করা হয়।
নারীরা স্বাবলম্বী হোক, সেটা পরিবারে সমাজে এখনো বেশিরভাগ পুরুষ চায় না। কারণ নারী স্বাবলম্বী হলে তাকে চাপিয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। ফলে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় নারীর জীবন বিপন্ন হয়ে ওঠে। অনেক পরিবার আছে, যারা নারীর স্বাবলম্বী হওয়াকে পছন্দ করে না। বরং নারীকে ঘরে বসিয়ে কিভাবে শোষণ করা যাবে, তার পাঁয়তারা করে। পরিবারের সদস্যরা নারীর নিজের মত-পথের গুরুত্ব দেন না। তাদের সম্মানের কথা ভেবেও নারীকে নিপীড়ন করে।
এই নিপীড়নের একটাই উদ্দেশ্য তাদের স্বার্থ হাসিল সেখানে অন্যের কী হবে, সেটা নিয়ে ভাবার ইচ্ছের যথেষ্ট ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়।
আজকাল নারীরা এগিয়ে গেলেও পরিবারে-সমাজে নারীকে মূল্যহীন বস্তুসর্বস্ব ভাবা হয়। নিজস্ব রুচি-অভিরুচিকে দাম দেওয়ার ক্ষমতা নিজের থাকলে তাকে বাধা দেওয়া হয়। দিনের পর দিন মানসিক-শারীরিক উৎপীড়নে তটস্থ করে তোলা হয় তাকে। স্বাবলম্বী নারী নিজের দায়ভার নিজে নিলেও সেখানেও আপত্তি এবং বিপত্তির শেষ নেই। অনেক পরিবারে বাবা-মা-ভাই-বোন একে অন্যের মতের প্রতি শ্রদ্ধা করেন না। বিধায় নারীর প্রতি সহিংসতা আরও বৃদ্ধি পায়। পুরুষের মুঠোয় নারীর জীবন এমন ভাবধারা যতদিন না পাল্টাবে, ততদিন সমাজের উন্নতিও অকল্পনীয়।
মানুষ হিসেবে মানুষকে মূল্যায়ন করতে না পারলে স্বাবলম্বী নারী হলেও নির্যাতন থামে না তাই। সেক্ষেত্রে পরিবারও সমাজের দোহাই দিয়ে নারীকে অবরুদ্ধ করতে চাইলে সামনে অন্ধকার ছাড়া কিছুরই দেখা মেলে না।
স্বাবলম্বী নারীও প্রতিনিয়ত নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। পরিবারে, সমাজে বিভিন্নভাবে। শ্বশুর বাড়ির লোকজন থেকে শুরু কোথাও নারীকে যে যোগ্য মূল্যায়ন করা হয় না, সেটাও স্পষ্ট। অনেক পরিবারেই নারীর মতের গুরুত্ব না দিয়ে তাকে নিজেদের মতো পরিচালনা করতে চেষ্টা করে। সেই পরিস্থিতিও তারাই তৈরি করে। নারীর পরিবেশ পরিস্থিতি তাই অনুকূলে নয়। তবে স্বাবলম্বী হলে অত্যাচার–নিপীড়নের একটা বিরুদ্ধে গিয়ে দাঁড়ানোর ক্ষমতা নারী অর্জন করে। নারীর প্রতি শ্রদ্ধা, যোগ্য মূল্যায়ন করে নারীকে তার প্রাপ্যটা দিতে হবে।
অনন্যা/এআই