বাড়ির অশান্ত পরিবেশ, শিশুর বেড়ে ওঠায় বাধা
আজকালকার শিশুরা বড্ড বেশি ঘরমুখো, মানুষের সাথে মিশতে চায় না। তাদের বন্ধু বলতে শুধু টেলিভিশন, কম্পিউটার আর স্মার্টফোন। প্রযুক্তির এত উন্নতি যেন শিশুদের বেড়ে ওঠার পথে বড় একটি বাধা হয়ে দাঁড়ালো। আজকালকার শিশুদের নিয়ে এমনটাই ধারণা সমাজের সবার। শুধুই কি প্রযুক্তি, শিশুর বেড়ে ওঠার রাস্তায় আর কোনো বাধা নেই? আর শিশুকে প্রযুক্তিনির্ভর হতে বাধ্য করছে কে? দোষটা অনেকাংশে গিয়ে পরিবারের ঘাড়েই পড়বে।
সন্তানের বেড়ে ওঠার প্রথম কারিগর তো তার পরিবারের সদস্যরা। শিশুর হাঁটতে শেখা পরিবারের কোনো সদস্যদের আঙুল ধরে। বেড়ে ওঠার প্রতিটা ধাপেই শিশু শিক্ষা নেয় তার পরিবার থেকে। তবে দিনকে দিন আধুনিকীকরণের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আমাদের সমাজে বেড়ে চলেছে যৌথ-পরিবার ভেঙে একক পরিবারের সংখ্যা। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে পারিবারিক কলহও। এতে তা বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে সন্তানের বেড়ে ওঠার পথ।
যৌথ পরিবার ও একক পরিবার নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে রয়েছে বিভিন্ন তর্কবিতর্ক। তবে সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, যে ধরনের পরিবারই হোক, শিশুর বেড়ে ওঠায় দরকার পারিবারিক সম্প্রীতি। কারণ সন্তানের মানসিক বিকাশের অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় বাড়ির অশান্ত পরিবেশ। এবার চলুন দুটি গল্প জেনে নেওয়া যাক:
‘ছোটবেলা থেকেই যৌথ পরিবারে বড় হয়েছেন মীম। বাবা-মায়ের ব্যস্ততায় বেশিরভাগ সময় কাটতো পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে। কিন্তু দিনভর পরিবারের মানুষদের একে অন্যের সঙ্গে হিংসা, ঝগড়া দেখে দেখে বড় হয় মীম। যা দিনের পর দিন তার মানসিক ও আচরণগত দিকে প্রভাব ফেলতে শুরু করে। এতে দিনের পর দিন সে খিটখিটে ও বদমেজাজি হয়ে ওঠে। সমাজের সর্বস্তরে তাকে ভিন্নচোখে দেখা হয়। যা তার স্বাভাবিক জীবনযাপনে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।’
‘অন্যদিকে তারই বন্ধু নেহা বড় হয় একটি একক পরিবারে। যেখানে তার অভিভাবক শুধু তার বাবা-মা। তার জন্মের কয়েকমাসে পর থেকে তার বাবা-মায়ের সম্পর্কের মধ্যে চিড় ধরতে শুরু করে। নেহা যখন বুঝতে শুরু করে, তখন থেকেই দেখতে পায় তার বাবা-মায়ের ঝগড়া। আর যে কারণে তারা একসঙ্গে মেয়েকে সময় দিতে পারে না। তাই একা একা বড় হতে হতে নেহার মধ্যে একগুঁয়েমি, বদমেজাজি ভাব চলে আসে। দিনভর মুখ গুঁজে থাকে। আপনমনে নিজের মধ্যে বিচরণ করে।’
শুধু মীম কিংবা নেহা নয়। আমাদের সমাজে এমন অনেক মীম কিংবা নেহা রয়েছে, যাদের বসবাস যৌথ পরিবারে হোক অথবা একক পরিবারে। যারা প্রতিনিয়ত বলি হচ্ছে পারিবারিক কলহের। অনিশ্চিত হয়ে যাচ্ছে তাদের ভবিষ্যৎ। নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে তাদের মানসিক ও আচরণগত দিকে। দিনের পর দিন পরিবারের অশান্তি দেখে বেড়ে ওঠা এই শিশুরা হতাশায় ভোগে। বিভিন্ন ধরনের অসামাজিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়। সমাজ কিংবা পরিবারের চোখে তারা সহিংস হয়ে ওঠে। পরিবারের সদস্যরা একে অপরের সঙ্গে যেভাবে আচরণ করবে শিশুও সেভাবে আচরণ করতে শিখবে। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে চিৎকার চেঁচামিচি দেখে বেড়ে উঠলে শিশুও সেই আচরণ আয়ত্ত করে।
অনেকসময় দেখা যায় বাবা-মায়ের মধ্যে কলহের কারণ হয় সন্তান। সন্তানকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ঝগড়াঝাঁটি হয় বাবামাকে ঘিরে। একসঙ্গে বসবাস করতে হলে মনোমালিন্য দেখা দিতেই পারে। কিন্তু তা নিয়ে যদি তীব্র কোনো সংঘাতের জন্ম নেয়। তবে তা নিঃসন্দেহে শিশুর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। আর এমন অবস্থায় সব খারাপ পরিস্থিতির জন্য শিশুটি নিজেকে দায়ী করতে থাকে। তার মধ্যে নানা ধরনের দুশ্চিন্তার তৈরি হয়। এমতাবস্থায় অনেক শিশু আত্মঘাতীও হতে পারে।
তাই শিশুর একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে দায়িত্ব নিতে হবে তার পরিবারকেই। পরিবারের যেকোনো সমস্যায়ই হোকনা কেন, তার আঁচ শিশুর গায়ে না লাগতে দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। শিশুর সামনে চিৎকার চেঁচামেচি করা উচিত নয়। একটি শিশুর সুন্দর একটি ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে সব পারিবারিক কলহ থেকে দূরে রাখা উচিত৷
অনন্যা/জেএজে