
মাদার কারেজ অ্যান্ড হার চিলড্রেন

“মাদার ক্যারেজ অ্যান্ড হার চিলড্রেন” (Mother Courage and Her Children) হলো বিখ্যাত জার্মান নাট্যকার বার্টোল্ট ব্রেখট রচিত একটি যুদ্ধবিরোধী নাটক। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৩৯ সালে এবং প্রথম মঞ্চস্থ হয় ১৯৪১ সালে।
নাটকটির মূল পটভূমি হলো ইউরোপের ত্রিশ বছরের যুদ্ধ (১৬১৮–১৬৪৮), যা ছিল ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংঘাতের এক রক্তক্ষয়ী সময়কাল। এই নাটকটিকে এপিক থিয়েটারের এক অনন্য উদাহরণ হিসেবে ধরা হয়।

নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্র মাদার ক্যারেজ একজন ব্যবসায়ী নারী, যিনি যুদ্ধকালীন সময়ে তার ভ্যানে খাবার, কাপড় ও অন্যান্য দ্রব্য বিক্রি করে জীবন চালান। তিনি আশা করেন যুদ্ধ থেকে লাভবান হবেন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, যুদ্ধই ধীরে ধীরে তার সবকিছু কেড়ে নেয়। তার তিন সন্তান—এইলিফ, সুইস চিজ ও ক্যটরিন—যুদ্ধের কারণে একে একে মৃত্যুবরণ করে। এইলিফ সৈনিক হয়ে একজন গ্রামবাসীকে হত্যা করায় ফাঁসিতে ঝুলে, সৎ সুইস চিজ শত্রুদের হাতে ধরা পড়ে প্রাণ হারায়, আর বোবা ক্যটরিন বীরত্বের সঙ্গে শহরকে রক্ষা করতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়।

নাটকটি যুদ্ধের নিষ্ঠুরতা এবং সাধারণ মানুষের ওপর তার প্রভাবকে কেন্দ্র করে নির্মিত। মাদার ক্যারেজ একজন মা এবং ব্যবসায়ী—এই দুই পরিচয়ের মাঝে দ্বন্দ্বে পড়েন। তিনি সন্তানদের বাঁচাতে চান, আবার ব্যবসা চালিয়ে যেতে চান। এই দ্বৈত অবস্থানই তার ট্র্যাজেডির জন্ম দেয়। নাটকের প্রতিটি মৃত্যু এবং ঘটনা যুদ্ধের নিষ্ফলতা ও মানুষের নিঃস্বতার প্রতীক। ব্রেখট দেখাতে চান যে যুদ্ধ কারো ভালো বয়ে আনে না, বরং ধ্বংস আর অপূরণীয় ক্ষতি ডেকে আনে।

২৩ জুলাই (গতকাল) জহির রায়হান মিলনায়তন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয় বিখ্যাত যুদ্ধবিরোধী নাটক “মাদার ক্যারেজ অ্যান্ড হার চিলড্রেন”–এর মঞ্চায়ন। এই প্রযোজনাটি ছিল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের ৪৮তম ব্যাচের প্রোডাকশন।

জার্মান নাট্যকার বার্টোল্ট ব্রেখট রচিত এই কালজয়ী নাটকটি নির্দেশনা দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রেজা আরিফ। নাটকটিতে অভিনয় করেন বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থীরা, যারা যুদ্ধ, মানবতা এবং জীবনের নির্মম বাস্তবতা ফুটিয়ে তোলেন প্রাণবন্ত পারফরম্যান্সের মাধ্যমে।

নাট্যদলের অভিনয়ে অংশগ্রহণ করেছেন: অর্ণব মালিক, প্রজ্ঞান বসাকী, ইগিমি চাকমা, উমিতা চৌধুরী, সিনথিয়া মন্ধ, ঝর্ণা রায়, আলভী করিম খান, এলিনা শাহেয়া এবং ঘুমায়া সোলায়মানি ঘুমাও চরিত্রে প্রজ্ঞান বসাকী।
সঙ্গীত পরিচালনায় ছিলেন শান্তুনু আক্তার স্মৃতি।
নির্দেশককে সহায়তা করেছেন সাদিয়া শারমিন মারিয়া, যুক্তিকা হক, তাসভীর ও পালোয়ান অন্তর।
লাইটিং পরিকল্পনা করেছেন আব্দুল বরকত সিদ্দিক ও রায়হান ইসলাম।

কোরিওগ্রাফিতে ছিলেন জান্নাত তাসফিয়া বর্ণন ও ঊষা রায়।
রূপসজ্জার দায়িত্বে ছিলেন জয়ন্ত বিপ্লব ও তাসমিয়া হোসেন।
মঞ্চ ও দৃশ্যসজ্জায় কাজ করেছেন আসাদুজ্জামান আলিফ, কৃষ্ণ চন্দ্র বর্মণ, ছায়ন, উদিল, প্রজ্ঞান ত্রিপুরা ও আবিদুল ইসলাম।

পোস্টার ডিজাইন করেছেন মাহমুদুল হক মায়ান।
প্রচার ও প্রকাশনায় ছিলেন প্রজ্ঞান বসাকী, মঞ্চ ব্যবস্থাপনায় ইগিমি চাকমা
এবং প্রযোজনা ব্যবস্থাপনায় ছিলেন মোঃ আবু রায়হান। নাটকটি মঞ্চায়নে নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা সম্মিলিতভাবে সহযোগিতা করেছেন। টিকিটের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছিল ৫০০, ৩০০ ও ২০০ টাকা।

জহির রায়হান মিলনায়তনের পরিপূর্ণ দর্শকসারি প্রমাণ করে—নাট্যচর্চায় জাহাঙ্গীরনগরের স্বাতন্ত্র্য ও গভীর নিষ্ঠা কতটা শক্তিশালী।
ছবি: গোলাম রাউফু