
দামি একটি রহস্য আছে নেপচুনে

সৌরজগতে সূর্যকে কেন্দ্র করে যেসব গ্রহ ঘুরছে তার মধ্যে একটি হলো নেপচুন। সৌরজগতের সবচেয়ে দূরের ও সবচেয়ে রহস্যময় গ্রহ এটি তবে কয়েকটি রহস্য উদ্ভাবন করা সম্ভব হয়েছিলো একবার এবং একটি রহস্য অনেক দামি রহস্য।
নেপচুন এত রহস্যময় হওয়ার কারণ হলো কেননা এটি সূর্য থেকে এতটাই দূরে যে সেখানে সূর্যের আলো পৌঁছাতে প্রায় ৪ ঘন্টা লেগে যায় যেখানে পৃথিবীতে আলো পৌঁছাতে সময় লাগে মাত্র ৮ মিনিট। সূর্য থেকে তো বাদ-ই, পৃথিবী থেকেই নেপচুনের দূরত্ব প্রায় ৪.৫ বিলিয়ন কিলোমিটার। যার ফলে এখানে মানুষের পা পৌঁছানো এখনো পর্যন্ত অসম্ভব। এমনকি সূর্যের চারপাশে নেপচুনের একবার ঘুরে আসতে সময় লাগে প্রায় ১৬৫ বছর। এবং এই কারণেই এটি এতটা রহস্যময় হয়ে আছে সৌরজগতে। তবে সুযোগ হয়েছিল একবার মানুষের তৈরি একটি নভোযান পাশ দিয়ে ঘেসে যাওয়ার নেপচুনের। ভয়েজার ২ নভোযান ১৯৮৯ সালে নেপচুনের কাছে পৌঁছেছিল। সে সময় কিছু গুরুত্বপূর্ণ ছবি ও তথ্য-উপাত্ত পৃথিবীতে এসেছিলো নভোযানটি থেকে। সেসব বিশ্লেষণ করে দূরের এই বরফজগৎ সম্পর্কে যেসব বিষয় উদঘাটন করা সম্ভব হয়েছে, তাতে অবাক হতে হয়েছেন বিজ্ঞানীরা। যেমন নেপচুনে বাতাসের কথাই ধরা যাক। এ গ্রহে বয়ে যাচ্ছে ঝড়। সেটা যা তা ঝড় নয়, খুব শক্তিশালী ঝড়। বিজ্ঞানীরা বলেন, সেটিই সৌরজগতের সবচেয়ে দ্রুত গতির ঝড়। সেখানে বাতাসের গতি এত বেশি যে তা শব্দের গতিকেও হার মানায়। সে গতি ঘণ্টায় প্রায় ২১০০ কিলোমিটার! এমনি আরেকটি রহস্য বিজ্ঞানীরা উদ্ভাবন করেছেন তা হলো নেপচুনে হীরার বৃষ্টি হতে পারে। একটি দামি রহস্য হলো?

প্রথমে ১৯৮১ সালে মার্কিন পদার্থবিদ মারভিন রস এই ভবিষ্যদ্বাণী করেন, নেপচুনে হীরার বৃষ্টি হতে পারে। পরে ২০২০ সালে বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রমাণ করেন, সত্যিই হীরার বৃষ্টি নামে এই গ্রহে। শুধু নেপচুনেই নয় ইউরেনাসেও হয় এই হিরের বৃষ্টি।
পরীক্ষাটি করার জন্য স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক তাঁদের গবেষণাগারেই তৈরি করেন নেপচুনের বায়ুমণ্ডলের মতো পরিবেশ। এজন্য প্রথমে তাঁরা তরল হাইড্রোকার্বন পলিস্টাইরিনকে উত্তপ্ত করেন প্রচণ্ডভাবে। সেই সঙ্গে প্রয়োগ করেন প্রচণ্ড চাপ। এরপর লেজার ব্যবহার করে তার মধ্য দিয়ে পাঠান শকওয়েভ। এক্স-রে ব্যবহারের মাধ্যমে তাঁরা দেখেন, পলিস্টাইরিন যৌগটি ভেঙে যাচ্ছে। অর্থাৎ যৌগটি ভেঙে বেরিয়ে আসছে তার গাঠনিক উপাদান মৌলগুলো। তৈরি করছে কার্বন এবং হাইড্রোজেন পরমাণু। প্রচণ্ড চাপের কারণে কার্বন পরমাণুগুলো একত্রিত হয়ে তাঁদের চোখের সামনে পরিণত হচ্ছে হীরার কণায়!
প্রমাণ পেয়ে গেলেন বিজ্ঞানীরা। নেপচুনে যেহেতু একই পরিবেশ, তাই সেখানে এ ঘটনা ঘটছে হর হামেশাই। আমাদের গ্রহে যেমন তাপ ও চাপের কারণে পানি বাষ্প হয়ে আকাশে গিয়ে মেঘে পরিণত হয়, তারপর ঝরে পড়ে বৃষ্টি হয়ে। নেপচুনেও একই ঘটনা ঘটে। পার্থক্য শুধু নেপচুনের পরিবেশ ও গঠন। গঠনের কারণেই আমাদের মতো তরল পানির সমুদ্র বা মহাসমুদ্র নেই সেখানে। আছে তরল হাইড্রোকার্বন পলিস্টাইরিনের সাগর। এর সঙ্গে পর্যাপ্ত তাপ ও চাপ যুক্ত হয়ে কার্বন থেকে তৈরি হয় হীরা।
কি ভাবছেন? পৃথিবীতেও যদি এমন হতো কতই না সম্পদশালী হয়ে উঠতেন। না তেমনটি হতো না হীরার বৃষ্টি হলে সেটা এখনকার মতো এত মূল্যবান আর হতো না। একবার ভেবে দেখুন, প্রকৃতির সবচেয়ে ভারী পদার্থ হচ্ছে হীরা। যা দিয়ে কাচকে কেটে ফেলা যায় নিমিষেই। ভেবে দেখুন মাথার উপর আকাশ থেকে ঝরে পরলে কি অবস্থাটা হতো। এবার নিশ্চয়ই হীরার বৃষ্টির ব্যাপারটি আর ভালো লাগার কথা নয়। ১৮৪৬ সালে প্রথম আবিষ্কৃত হয় নেপচুন। উন্নত প্রযুক্তির কল্যাণে গ্রহটি সম্পর্কে ইতিমধ্যে অনেককিছু জেনেছে মানুষ যেমনঃ এই গ্রহটি কিন্তু একেবারে নিঃসঙ্গ নয়। সাথে আছে পাঁচটি রিং ও ১৪টি চাঁদ। তবে চরম আবহাওয়ার কারণে এতে প্রাণের বিকাশ হওয়া সম্ভব নয় বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা। তবে কে জানে কি আছে সেখানে এই রহস্যময় গ্রহ সম্পর্কে জানা বাকি এখনও আরও অনেক কিছু।