
রবীন্দ্রসংগীতও এমনভাবে করি যেন জেন-জিরাও শোনে : সুনিধি নায়েক

গানপাগল মানুষদের কাছে পরিচিত নাম সুনিধি নায়েক। সম্প্রতি তাঁর নতুন গান ‘পালাবে কোথায়’ প্রকাশ পেয়েছে। গানটি শ্রোতাদের মধ্যে দারুণ সাড়া ফেলেছে। মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা তৈরি করতেই এই গানটি তৈরি করেছেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রে ডজনখানেক কনসার্ট শেষ করে সম্প্রতি দেশে ফিরেছেন এই তরুণ শিল্পী। তাঁর নতুন গান, মানসিক স্বাস্থ্য, জীবন ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন তিনি।
সুনিধি জানান, ছয় বছর আগে তিনি মানসিক অবসাদে (ডিপ্রেশনে) ভুগছিলেন। সেই সময় তাঁর অ্যাংজাইটি ও ডিপ্রেশনের চিকিৎসা নিতে হয়েছিল। এই কঠিন সময়ের অভিজ্ঞতাই তাঁকে গানটি করতে অনুপ্রাণিত করে। তিনি বলেন, “মানসিক স্বাস্থ্য নিয়েও সচেতনতা থাকা উচিত, ঠিক যেমন উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিস নিয়ে আছে। এটা কোনো লজ্জার বিষয় নয়।”
গানটি বানাতে সময় লেগেছে প্রায় ছয় মাস। প্রথমে অডিও, পরে ভিডিও নির্মাণ। এরপর যুক্তরাষ্ট্র ট্যুরের ব্যস্ততায় গানটি প্রকাশের সময় লেগে যায়।
সুনিধি মনে করেন, মানসিক স্বাস্থ্য একটি স্বাভাবিক শারীরিক অসুস্থতার মতোই। তাই ভয় না পেয়ে চিকিৎসা নেওয়া উচিত। তিনি বলেন, “আমিও ডাক্তার দেখিয়েছি, কাউন্সেলিং করেছি, ব্যায়াম আর যোগব্যায়াম করেছি। কঠিন সময় পেরিয়ে এসেছি। আশা করি, অন্যরাও পারবে।”
মায়ের মৃত্যুর পর তাঁর ডিপ্রেশন আরও বেড়ে যায়। তখন চারপাশে বন্ধুবান্ধব না থাকায় পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। সুনিধি সেই সময় ডাক্তার, ব্যায়াম, যোগব্যায়াম আর মেডিটেশনের মাধ্যমে ধীরে ধীরে সুস্থ জীবনে ফিরেছেন। এখন তিনি মানসিক ও শারীরিকভাবে অনেক ভালো আছেন।
সুনিধির এই গানটিতে পশ্চিমা সুরের সঙ্গে দেশীয় মিউজিকের সুন্দর মেলবন্ধন দেখা যায়। তিনি বলেন, “আজকের দিনে ইলেকট্রনিক মিউজিক খুব জনপ্রিয়। বিশেষ করে জেন-জিরা এসব মিউজিক বেশি শুনে। আমিও চাই আমার গান তারা শুনুক। তাই পপ আর ইলেকট্রনিক মিউজিক মিলিয়ে নতুন ধরণের একটা গান তৈরি করেছি।”
সুনিধি মনে করেন, জেন-জি প্রজন্মের দৃষ্টিভঙ্গি, সৃষ্টিশীলতা ও মিউজিক সেন্স দারুণ। তিনি বলেন, “গান করার সময় আমি ভাবি, কীভাবে তাদের কানেক্ট করানো যায়। এমনকি রবীন্দ্রসংগীতও যদি করি, সেটা এমনভাবে করব যাতে জেন-জিরাও শুনতে আগ্রহী হয়। গানটা যেন একঘেয়ে না হয়, বরং নতুনত্ব থাকে।”
রবীন্দ্রসংগীত নিয়ে অর্ণবের সঙ্গে একটি অ্যালবাম করেছেন সুনিধি। প্রায় চার বছর ধরে এটি তৈরি করছেন। তবে বাংলাদেশে গান প্রকাশের জন্য পেশাদার এজেন্সি না থাকায় প্রকাশের প্রক্রিয়া ধীরগতির। তিনি জানান, “বাইরের দেশে শিল্পীদের গান প্রকাশের কাজটা এজেন্সি করে দেয়। আমাদের এখানে সব নিজে করতে হয়। তবে অ্যালবামটা শিগগিরই প্রকাশ করতে চাই।”
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে ১০ থেকে ১২টি কনসার্ট করেছেন সুনিধি। ওয়াশিংটন ডিসি, নিউইয়র্কসহ বিভিন্ন শহরে পারফর্ম করেছেন। তিনি বলেন, “কখনও ওয়াশিংটন, কখনও নিউইয়র্ক অনেক দৌড়ঝাঁপ করতে হয়েছে। তবে অভিজ্ঞতাটা অসাধারণ ছিল।”
সুনিধি নায়েকের জীবন ও সংগীতের গল্প বলছে কঠিন সময়েও স্বপ্ন দেখা যায়, নিজেকে বদলে নেওয়া যায়। তাঁর গান যেমন নতুন প্রজন্মের সঙ্গে সংযোগ তৈরি করছে, তেমনি মানসিক স্বাস্থ্য নিয়েও সচেতনতা ছড়াচ্ছে। তিনি যেমন বলেন, ওরাই আমাদের ফিউচার।