Skip to content

এআইয়ের গল্প 

এআইয়ের গল্প 

বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক ও শক্তিশালী প্রযুক্তি হলো আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স। যা সংক্ষেপে সবার কাছে পরিচিত এআই নামে। যন্ত্রের-ও কোনসময় বুদ্ধিশক্তি থাকবে এটা মানুষ কল্পনাও করতে পারে নি। আর এখন তা বাস্তবে রুপান্তর হয়ে গিয়েছে। এআই নিয়ে এক এক মানুষের এক এক মতামত কেউ কেউ মনে করেন এআই ভবিষ্যতের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। আবার অনেকে মনে করেন এআই মানুষের কাজ অনেক সহজ করে দিবে। এআই এর এমন হুমকি হয়ে দাঁড়ানো নিয়ে অনেক কাল্পনিক মুভিও রয়েছে। অনেকেই হয়তবা এআই এর সাথে পরিচয় হয়েছেন টারমিনেটর মুভি দিয়ে৷ যেখানে কাল্পনিকভাবে দেখানো হয়েছিল এআই মানবসভ্যতাকে ধ্বংস করে ফেলছে। তবে বাস্তব জীবনে এআইর রূপ টা অন্যরকম। এআই দিয়ে বোবা মানুষ তাদের কন্ঠ পাচ্ছে। চিকিৎসাক্ষেত্রেও এআইয়ের ব্যবহার নতুন কিছু নয়।  প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য আবেগ সমৃদ্ধ অভিব্যক্তি এই এআই। তবে সবচেয়ে বেশি পরিচিত এআই এর ছবির সনাক্তকরণ এবং ছবিকে কনভার্ট করা। একটি সিঙ্গেল ছবি দিয়েও পুরো ভিডিও কনভার্ট করে দিতে সক্ষম এআই। বিনোদন থেকে শুরু করে মানসিক সমর্থনে এআই ব্যাপকভাবে জড়িয়ে আছে। ব্যাবহার তো অনেকেরই কাছে পরিচিত কিন্তু জানেন কি কোথা থেকে এেসেছে এই এআই? কবে প্রথমে এসেছে, কে এনেছে,  কি ছিলো এটি প্রথম এবং কিভাবে শিখলো এই ছবি নিয়ে এত কাজ। আসুন জেনে নি এআই এর পাঁচ কাহিনি। 

কোথা থেকে শুরু এআই এর যাত্রা 

চিন্তা করতে সক্ষম কৃত্রিম মানুষ মূলত প্রথমে গল্প বলার যন্ত্র হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল ১৩০০ খ্রিস্টাব্দে, প্রকৃতপক্ষে কার্যকর যুক্তি প্রদর্শনের জন্য একটি যন্ত্র তৈরির চেষ্টা করার ধারণাটি সম্ভবত রামন লোল এর সাথে শুরু হয়। পরে এলান টুরিংয়ের হাত ধরেই এআই এর যাত্রা শুরু হয়। এলান টুরিংয়ের ১৯৫০ সালের একটি গবেষণাপত্রের আলোকে করে কোন যন্ত্রে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পরীক্ষা করার জন্য  তিনি ‘টুরিং পরীক্ষা’ নামের একটি প্রক্রিয়া উদ্ভাবন করেন। টুরিং পরীক্ষা হলো এক ধরনের ইমিটেশন গেম। এই পরীক্ষাটি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভিত্তি তৈরি করে। এআই গবেষণা ক্ষেত্র ১৯৫৬ সালে ডার্টমাউথ কলেজের একটি কর্মশালায় প্রথম প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এরপর ১৯৬০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিরক্ষা বিভাগ দ্বারা গবেষণার জন্য ব্যাপকভাবে তহবিল প্রদান করা হয় এবং বিশ্বব্যাপী ল্যাবরেটরিস প্রতিষ্ঠিত হয় এআই গবেষণা। 

এআই এর ভুল থেকে শেখা শুরু

ভুল করে করে শিক্ষা নেয়া যেমন আমাদের মস্তিষ্ক কাজ করে, অনেকটা সেভাবেই কম্পিউটার কীভাবে ভুল থেকে শিখতে পারবে এই মৌলিক আবিষ্কারের কাজটি করেন বিজ্ঞানী জিওফ হিন্টন।

১৯৮০-এর দশকে কম্পিউটার প্রযুক্তি উন্নয়নের ফলে কম্পিউটারকে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার শুরু হলো। সেই সময়ের কাজগুলো করা হতো লজিকের মাধ্যমে। কম্পিউটারকে কিছু সুনির্দিষ্ট কোড লিখে নির্দেশনা দেওয়া হতো, কোন কাজের পর কোনটা করতে হবে। কম্পিউটার যেন আমাদের লিখিত নির্দেশনা বুঝতে পারে, সেজন্য তৈরি করা হয় কম্পিউটার প্রোগ্রামিং ভাষা। কিন্তু নির্দেশনা ছাড়া কম্পিউটার কোনো কিছু করতে অক্ষম। এবং প্রোগ্রামিং করতে কোড একটু ভুল হলেই আর কাজ করতে পারতো না আর কম্পিউটার। তাই এই সমস্যা সমাধানের জন্য এই ভুল থেকে শেখার পদ্ধতিটি কম্পিউটারে প্রয়োগ করেন বিজ্ঞানী জিওফ হিন্টন। মানুষ তাঁকে ‘গড ফাদার অব ডিপ লার্নিং’ বা ডিপ লার্নিংয়ের জনক নামেও চেনে।

 এসআই এর বিপ্লব 

গুগলের প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেইজ এবং সের্গেই ব্রিন প্রথম থেকেই এআই প্রযুক্তিকে অনেক গুরুত্ব দিয়েছেন। গত এক দশকে আমরা দেখেছি, পৃথিবীর সব বাঘা বাঘা দক্ষ গবেষকদের তাঁরা খুঁজে খুঁজে নিজেদের প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দিয়েছেন। এই খোঁজার কাজে তাঁরা নিয়োগ দিয়েছিলেন এজেন্টদের। তাদের কাজই ছিল বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক ইভেন্ট ও কনফারেন্সগুলো খুঁজে এআইতে দক্ষ মানুষদের বের করা। আর তাদের কাজের ফল এখন আমরা সবাই – ই দেখতে পাচ্ছি। তাদের এই এআই এতটাই দক্ষ এখন যে সে নিজেই আবার নিজেকে উন্নত করে আরও শক্তিশালী এআইতর তৈরি করতে পারবে। তবে এই বিষয়টি নিয়ে আবার অনেকে সতর্কও করেছেন স্টিফেন হকিং, ইলন মাস্ক, বিল গেটসসহ অনেকে সতর্ক করে বলেন, এআই যদি একসময় নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই নিতে পারে, তাহলে তা মানবজাতির ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারে বা অসতর্কভাবে ক্ষতি করতে পারে।

এআই এর ছবি সনাক্তকরণ 

এআই যে ছবি কনভার্ট করে এতকিছুর বানাতে পারে তা সম্ভব হয় ইমেজ জেনেরেটর এর দ্বারা। এর দ্বারাই এআই ছবিকে সনাক্ত করে থাকে। বিজ্ঞানীরা কম্পিউটার দিয়ে ছবি শনাক্ত করার চেষ্টা করেছেন। এই কাজকে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার কারণ হলো, ছবি শনাক্ত করতে সত্যিকারের বুদ্ধিমত্তার প্রয়োজন পড়ে। বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করতেন, বুদ্ধিমত্তার প্রাথমিক ধাপই হলো কোনো ছবি শনাক্ত করা। যেমনটা আমাদের মস্তিষ্ক করে আমরা কোনো কিছু দেখে তা শনাক্ত করতে পারি। বুদ্ধিমত্তার প্রথম ধাপই হলো কোনো কিছু দেখে চেনা, বোঝা বা শনাক্ত করা। 

কোনো কিছু শনাক্ত করার এ কাজটি আমাদের কাছে সহজ মনে হলেও কম্পিউটারের জন্য তা অনেক কঠিন। কাজটা যে এত কঠিন, তা প্রথম উপলব্দি করেন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা জগতের অন্যতম গবেষক মারভিন মিন্সকি এবং সেমুর পাপার্ট।

এআই এর ব্যবহার

মানবসভ্যতার ভবিষ্যৎ টেকনোলজি এআই রিলেটেড ই হচ্ছে তাই এআই কে ইগনোর করলে চলবে না। কিভাবে এর ব্যবহার করা যায় সেদিকেই মানুষকে এগোতে হবে। ব্যক্তিগত ব্যবহারে বা বিভিন্ন পেশার ক্ষেত্রে এআইয়ের ক্ষমতা সাধারণ কাজ থেকে শুরু করে জটিল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নতুন নতুন দিক খুলে দেয়। যেমন, এআইয়ের ভাষা অনুবাদ যোগাযোগ আরও সহজ করে তুলেছে। রিয়েলটাইম অনুবাদ অ্যাপ ও সফটওয়্যার ভ্রমণ, ব্যবসায়িক আদান-প্রদান ও সাংস্কৃতিক বিনিময় খুবই সহজে এখন করা যায়। এআই রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা পরিকল্পনা ও ওষুধ আবিষ্কারের উন্নয়নেও সাহায্য করে থাকে। এআই টুলগুলো বিশাল পরিমাণের চিকিৎসা তথ্য বিশ্লেষণ, চিকিৎসাচিত্র বিশ্লেষণ করতে পারে। ফলে সম্ভাব্য চিকিৎসার পরামর্শ দেওয়া ও রোগ নির্ণয়ের নির্ভুলতা উন্নত করতে সাহায্য করে এটি। এআই প্রযুক্তির চ্যাটবট ও ভার্চ্যুয়াল সহকারী সব সময় অনলাইনে সেবা প্রদান করে থাকে, আপনার যেকোনো প্রশ্নের উত্তর নিক দিয়ে দিতে পারে এই এআই। সৃজনশীল কাজের ক্ষেত্রেও এআইয়ের ব্যবহার বেশ লক্ষণীয়। নির্দিষ্ট একটি ধারণা বা সূত্র থেকে বড় লেখা, ছবি ও নকশা তৈরি করে দিতে পারে এআই। আরও অনেক কিছু। এআই এর মানুষের কাজ সহজ করাটা আবার অনেকের কাজ হারানোও হয়ে দাড়ায় কিন্তু এর ব্যবহার জানতে পারলে এর দ্বারা কাজেে অভাবও হবে না।