না ফেরার দেশে ‘কাঁটা লাগা গার্ল’ শেফালি

‘কাঁটা লাগা’ গান দিয়ে ৯০ দশকে টিন-টোয়েন্টির হদয়ে ঝড় তুলেছিলেন মডেল ও অভিনেত্রী শেফালি জারিওয়ালা। এতবছর পেরিয়ে গেলেও এতটুকুও ম্লান হয়নি লাস্যময়ী শেফালির সে জাদু। কিন্তু শুক্রবার (২৭ জুন) মধ্যরাতে হঠাৎই থেমে গেলো তার হৃদয়ের স্পন্দন। হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মাত্র ৪২ বছর বয়সে না–ফেরার দেশে চলে গেলেন বলিউডের জনপ্রিয় এ তারকা।
ভারতের একাধিক গণমাধ্যম অসুস্থতা অনুভব করার পর তড়িঘড়ি তাকে মুম্বাইয়ের বেলভিউ মাল্টিস্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা জানান, হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। বর্তমানে তার মরদেহ কুপার হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য রাখা হয়েছে।
টাইমস অব ইন্ডিয়া ও মুভি টকিজের খবরে বলা হয়েছে, শেফালির স্বামী পরাগ ত্যাগী ও তার দুই ঘনিষ্ঠ বন্ধু মিলে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতালের কর্মীদের বরাত দিয়ে ভারতীয় সাংবাদিক ভিকি লালওয়ানি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানান, হাসপাতালে আনার পরই চিকিৎসকেরা শেফালিকে মৃত ঘোষণা করেন। হৃদ্রোগ বিশেষজ্ঞ লুলাও বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
ঘনিষ্ঠ সূত্রের বরাতে আনন্দবাজার জানিয়েছে, শেফালি ছিলেন ভীষণ ফিটনেস ফ্রিক। নিজেকে ফিট এবং সুস্থ থাকার জন্য শরীরচর্চা করতেন। কিন্তু এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে দাবি, তিনি মৃগীরোগের সাথে লড়াই করেছিলেন। সে-কথা খুব কম মানুষই জানতেন।
তিনি তার কেরিয়ারের শুরুর দিকে এটি কাউকেই জানতে দেননি। কাজে প্রভাব পড়তে দেননি। কিন্তু প্রতিনিয়তই এই সমস্যার সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যেতেন তিনি। ১৫ বছর বয়সে তিনি প্রথমবার খিঁচুনি অনুভব করেন। তারপর দীর্ঘদিন মানসিক চাপ এবং উদ্বেগের মধ্যে ছিলেন। তবে চিকিৎসা, নিয়মিত ব্যায়াম ও মানসিক জোরে অভিনেত্রী ভাল থাকার চেষ্টা করতেন।
১৯৮২ সালের ১৫ ডিসেম্বর মুম্বাইয়ে জন্মগ্রহণ করেন শেফালি। তিনি গুজরাটের সরদার বল্লভভাই পটেল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি থেকে ইনফরমেশন টেকনোলজিতে বিএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন।
২০০২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ইন্ডি পপ গান ‘কাঁটা লাগা’র রিমেক ভিডিওর মাধ্যমে রাতারাতি জনপ্রিয়তা পান শেফালি জারিওয়ালা। সত্তরের দশকের হিন্দি সিনেমা ‘সমৃদ্ধি’র গানের রিমেকটি সে সময় তুমুল জনপ্রিয় হয়। গানের সাহসী উপস্থাপনায় শেফালি হয়ে ওঠেন আলোচনা ও বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু। এরপর ‘কাঁটা লাগা গার্ল’ নামে পরিচিতি পান তিনি। এরপর সব মিলিয়ে ৩৫টির বেশি মিউজিক ভিডিওতে কাজ করেছেন শেফালি।
তবে এরপর আচমকাই গ্ল্যামার দুনিয়া থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন তিনি। এক সাক্ষাৎকারে জানান, দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে তিনি মৃগীরোগে ভুগছিলেন। এ কারণে খুব বেছে বেছে কাজ করতে হতো তাকে। পরে চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ হয়ে আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছিলেন তিনি।
ব্যক্তিগত জীবনেও বহু চড়াই-উতরাই পেরিয়েছেন শেফালি। ২০০২ সালে তার প্রথম বিয়ে হলেও সেই সম্পর্ক টেকেনি। ২০০৯ সালে তিনি স্বামীর বিরুদ্ধে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ আনেন এবং বিচ্ছেদ ঘটে। পরে অভিনেতা পরাগ ত্যাগীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে ২০১৪ সালে বিয়ে করেন। দুজন মিলে অংশ নেন জনপ্রিয় রিয়েলিটি শো ‘নাচ বালিয়ে ৫’-এ।
শুধু অভিনয় নয়, মানসিক স্বাস্থ্যসচেতনতা ও নারী-অধিকার নিয়ে সোচ্চার ছিলেন শেফালি জারিওয়ালা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খোলামেলা ও আত্মবিশ্বাসী উপস্থিতির জন্য তিনি ছিলেন আলোচনায়। তার অকালমৃত্যুতে শোকাহত বলিউড অঙ্গন ও ভক্তমহল। সহকর্মী, বন্ধু ও অনুরাগীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাকে স্মরণ করছেন ‘উজ্জ্বল, নির্ভীক ও প্রেরণাদায়ী’ শিল্পী হিসেবে।