জলবায়ুর গল্প ছবিতে ও পাতায়

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান মন্তব্য করেন, “ জলবায়ু পরিবর্তন এখন আর কোনো দূর ভবিষ্যতের আশঙ্কা নয়—এটি হয়ে উঠেছে বর্তমান সময়ের এক কঠিন বাস্তবতা। ”
বৃহস্পতিবার রাজধানীর শুক্রাবাদে দৃকপথ ভবনে আয়োজিত “Discussion, Book Launching & Photo Exhibition on Lives on the Edge of Climate Change: Struggle, Hope and the Future” শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স-এর চেয়ারপার্সন এবং দৈনিক ইত্তেফাকের সম্পাদক তাসমিমা হোসেন। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন অক্সফাম বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর আশীষ দামলে, দৃক পিকচার লাইব্রেরির প্রতিষ্ঠাতা এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আলোকচিত্রী ড. শহিদুল আলম, উপপ্রধান বন সংরক্ষক মো. রকিবুল হাসান মুকুল এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. জহিরুল ইসলাম।
অভিযোজনকেই মানতে হবে মূল কৌশল
উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এখন আমাদের নিত্যদিনের অভিজ্ঞতার অংশ। অতএব, জাতীয়ভাবে আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। অভিযোজনকেই এখন প্রধান কৌশল হিসেবে গ্রহণ করতে হবে, কারণ প্রতিকূলতা মোকাবিলার চেয়ে টিকে থাকার উপায় খুঁজে নেওয়া এখন সময়ের দাবি।”
তিনি আরও বলেন, “জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানো ছাড়া জলবায়ু সংকটের সমাধান সম্ভব নয়। কিন্তু উন্নত বিশ্ব তাদের স্বার্থে এখনও এ বিষয়ে কার্যকর কোনো ছাড় দিতে প্রস্তুত নয়, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।”
বাস্তবায়ন হচ্ছে ৪২টি প্রকল্প, থাকবে কোল্ড স্টোরেজ সুবিধা
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় সরকার ইতোমধ্যেই জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ডের আওতায় ৪২টি প্রকল্প হাতে নিয়েছে বলে জানান উপদেষ্টা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ১০০টি কোল্ড স্টোরেজ স্থাপনের উদ্যোগ, যাতে কৃষকেরা বিনামূল্যে তাদের উৎপাদিত ফসল সংরক্ষণের সুবিধা পাবেন।
এছাড়াও তিনি জানান, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলো যেন জলবায়ু ফান্ডে সহজে আবেদন করতে পারে, সেজন্য সরকার নীতিগত সহায়তা দেবে। পাশাপাশি উপকূলীয় এলাকার জনগণের সুরক্ষায় জরুরি ভিত্তিতে বেড়িবাঁধ মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে।
অনুষ্ঠানের শেষাংশে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান “Lives on the Edge of Climate Change: Struggle, Hope and the Future” বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন এবং পরিবেশ ও জীবনের নানা দিক তুলে ধরা ফটো এক্সিবিশনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
এই আয়োজনের মাধ্যমে বক্তারা যে বার্তাটি স্পষ্ট করে দিয়েছেন তা হলো—জলবায়ু পরিবর্তন শুধু সরকারের একার সমস্যা নয়, এটি আমাদের সকলের অস্তিত্বের প্রশ্ন। ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র—সবাইকে একযোগে দায়িত্ব নিতে হবে। কারণ ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ে তোলা এখন আমাদেরই দায়িত্ব।