Skip to content

লাবুবুর পেছনে দুনিয়ার পাগলামো

লাবুবুর পেছনে দুনিয়ার পাগলামো

একটা পুতুল নাম তার লাবুবু। দেখতে অদ্ভুত, খানিকটা ভীতিকরও। তবু এই পুতুল নিয়েই এখন পাগলপারা সারা দুনিয়া। যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড এমনকি আরব আমিরাত সবখানেই লাবুবু নিয়ে চলছে যেন উৎসব। কেউ গলায় ঝুলাচ্ছে, কেউ ব্যাগে, কেউ আবার ঘরে সাজিয়ে রাখছে যত্ন করে। ফ্যাশন দুনিয়াও পিছিয়ে নেই রিয়ানা, ব্ল্যাকপিঙ্কের লিসা, ডুয়া লিপা বা ডেভিড বেকহ্যামের মতো তারকারাও ক্যামেরার সামনে লাবুবুকে সঙ্গী করছেন।

বাংলাদেশে বসে প্রশ্ন জাগতেই পারে এই লাবুবুতে এমন কী আছে?

ছোট পুতুল, বিশাল চমক!
লাবুবু তৈরি করেছে চীনের খেলনা নির্মাতা প্রতিষ্ঠান পপ মার্ট। এই পুতুলগুলো পাওয়া যায় ‘ব্লাইন্ড বক্স’এ অর্থাৎ বাক্সের ভেতরে কোন পুতুলটি আছে তা জানা যায় না যতক্ষণ না আপনি খুলছেন। ঠিক এই রহস্যই পুরো খেলনাটিকে করে তুলেছে চরম আকর্ষণীয়। একেকটা পুতুল মানেই একেকটা চমক।

লাবুবু আদতে একক কোনো পুতুল নয়, এটি একদল চরিত্র ‘দ্য মনস্টারস’ নামে পরিচিত। এদের মধ্যে আছে জিমোমো, মোকোকো, টাইকোকো, আর সবচেয়ে জনপ্রিয় লাবুবু নিজে। বড় বড় চোখ, গায়ে লোম আর মুখে নয়টি ধারালো দাঁত ভয়ের সঙ্গে কিউটনেসের এক অদ্ভুত মিশেল যেন! শিল্পী কাসিং লুং নর্ডিক পুরাণ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এই চরিত্রগুলো তৈরি করেন।

প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ‘খেলনা’?
বাচ্চারা তো পুতুল নিয়ে খেলে এটা তো জানা কথা। কিন্তু লাবুবুর জনপ্রিয়তা মূলত প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যেই! কেউ বলছেন ‘স্মার্ট ব্যাগ চার্ম’, কেউ বলছেন ‘হ্যাপিনেস জেনারেটর’। বিশেষজ্ঞদের মতে এসব পুতুল প্রাপ্তবয়স্কদের মনে একধরনের ‘সেলফ-হিলিং’ বা আরামদায়ক অনুভূতি জাগায়। কঠিন বাস্তবতা থেকে খানিক ছুটি পাওয়ার উপায় হিসেবে কাজ করে এই ছোট্ট দানবগুলো।

সোশ্যাল মিডিয়ার ছোঁয়ায় পাগলামো
লাবুবুর জনপ্রিয়তা ছড়িয়েছে মূলত ‘আনবক্সিং’ ভিডিও ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের হাত ধরে। প্রতিটি নতুন সংগ্রহ মানেই নতুন ডিজাইন, নতুন রঙ, নতুন এক্সপ্রেশন। সেই সঙ্গে অনলাইন কমিউনিটি যেখানে সংগ্রাহকেরা একে অপরের সঙ্গে বিনিময় করে ছবি শেয়ার করে। ফলে একটি ট্রেন্ড হয়ে উঠেছে লাবুবু সংগ্রহ করা।

কোটি কোটি ডলারের বাজার
এই পুতুলের কারণে পপ মার্টের ব্যবসাও ফুলেফেঁপে উঠেছে। ২০২৪ সালে কোম্পানির আয় দ্বিগুণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ১.৮১ বিলিয়ন ডলার। শুধু সফট টয়ের বিক্রিই বেড়েছে ১২০০ শতাংশ! অথচ প্রতিটি লাবুবুর দাম ২০ থেকে ৩০ ডলারের মধ্যে। তবে যেহেতু ‘ব্লাইন্ড বক্স’, আপনি কোন পুতুলটা পাচ্ছেন সেটা নিশ্চিত নয়। ফলে অনেকেই একটার পর একটা বক্স কিনে ফেলেন, শুধুমাত্র পছন্দের চরিত্রটি পাওয়ার আশায়।

কোন কোন সিরিজ জনপ্রিয়?
লাবুবু প্রথম বাজারে আসে ‘দ্য মনস্টারস ক্ল্যাসিক সিরিজ’ হিসেবে। এরপর আসে আরও চমকপ্রদ কালেকশন:

ইনটু এনার্জি (২০২৫): ঝকঝকে নিয়ন রঙের পুতুল।

ফল ইন ওয়াইল্ড: প্রকৃতির অনুপ্রেরণায়, থাই গায়িকা লিসার কারণে এই সিরিজ দারুণ হিট।

টাইম টু চিল: আরামপ্রিয় লাবুবুদের নিয়ে।

লেটস চেকমেট: দাবার থিমে।

ম্যাকারন ও প্যাস্টেল সিরিজ: মিষ্টি রঙ ও ডিজাইনে ফ্যাশন ইনফ্লুয়েন্সারদের প্রিয়।

রিজিওনাল এক্সক্লুসিভ এডিশন: দেশভিত্তিক বিশেষ সংগ্রহ।

আজকের দিনে লাবুবু আর কেবল একটা পুতুল নয় এটা হয়ে উঠেছে ব্যক্তিত্ব প্রকাশের মাধ্যম, সুখ খোঁজার একটা ছোট্ট পথ, আর কখনো কখনো স্রেফ ফ্যাশনের অংশ। খেলনা হিসেবে যাত্রা শুরু করলেও লাবুবু এখন বৈশ্বিক এক সাংস্কৃতিক ট্রেন্ড।

তাই যদি কখনো রাস্তায় কাউকে ব্যাগে লোমশ, দাঁতওয়ালা একটা অদ্ভুত পুতুল ঝুলিয়ে ঘুরে বেড়াতে দেখেন বুঝে নেবেন, লাবুবু জ্বরে আক্রান্ত তিনি।