নীরবে দেওয়া মানসিক ক্ষতের নাম সাইবার বুলিং

একটি সকালের শুরু হতে পারে পাখির ডাকে কিংবা চায়ের কাপ হাতে নিয়ে। অথচ বর্তমান সময়ে কারও কারও জন্য সকালটা শুরু হয় আতঙ্কের সাথে। ফোন হাতে নিয়ে যখন দেখে, নিজের ব্যক্তিগত ছবি বা ভিডিও ভাইরাল হয়ে গেছে। কারও অনুমতি ছাড়াই কেউ তা আপলোড করেছে। সঙ্গে রসিকতা, কু-মন্তব্য, ট্যাগ আর মিমের বন্যা।
প্রথমে মনে হতে পারে, “লজ্জা পেয়েছি” এইটুকুই। কিন্তু সত্যিটা আরও গাঢ়। এটি শুধুই কিছুক্ষণ স্থায়ী অস্বস্তি নয়, অনেক সময় তা রয়ে যায় গভীরভাবে, বহুদিন। ঠিক যেমন কোনো অবাঞ্ছিত শব্দ মনের গহীনে বাজতে থাকে, থামে না।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা আটলান্টিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং উইসকনসিন-ইউ ক্লেয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা ২,৬০০-এর বেশি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার্থীর ওপর জরিপ চালিয়ে দেখেছেন, সাইবার বুলিং অনেক সময় শৈশবের ট্রমার মতোই দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে। একজন কিশোর বা কিশোরীর আত্মবিশ্বাস, আত্মমূল্যায়ন এবং সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষমতাকে একেবারে ভেঙে ফেলতে পারে এটি।
গবেষণায় উঠে এসেছে, প্রতি ১০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৯ জনই কোনো না কোনোভাবে সাইবার বুলিংয়ের শিকার হয়েছে। কারও অনুমতি ছাড়া ছবি বা তথ্য প্রকাশ, অপবাদ, গুজব, হেয় করে কমেন্ট এমনকি কাউকে গ্রুপ চ্যাট থেকে ইচ্ছাকৃতভাবে বাদ দেওয়ার ঘটনাও এর অন্তর্ভুক্ত।
এমনকি সাইবার বুলিং সবসময় সরবও নয়। অনেক সময় এটি নীরব এবং চতুর। কেউ অনলাইনে যোগ দিলেই আলোচনা থেমে যাওয়া, তাকে উপেক্ষা করে পরিকল্পনা হওয়া, কিংবা এমন আচরণ করা যেন সে অস্তিত্বহীন এই অদৃশ্য একঘরে করে দেওয়ার যন্ত্রণা বহন করে সে।
গবেষণার প্রধান লেখক ড. সামির হিন্দুজা বলেন, “সাইবার বুলিং মানে কেবল হুমকি নয়। অবহেলা, দূরে ঠেলে দেওয়া এমনকি নীরব অবজ্ঞাও এর ভয়ংকর রূপ।”
তাই প্রতিরোধ শুধু গালিগালাজ বা ভয় দেখানো ঠেকানো নয়। দরকার আরো গভীর উপলব্ধি। শিক্ষক, অভিভাবক ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে বুঝতে হবে—কেউ চুপচাপ থাকলেই সে ঠিক আছে, এমনটা নয়। হতে পারে সে ধীরে ধীরে একাকীত্ব আর মানসিক যন্ত্রণায় ডুবে যাচ্ছে।
সকলকে চাই সহানুভূতিশীল দৃষ্টি, চাই মন দিয়ে শোনা তবেই ধরা যাবে, কে নীরবে ভেঙে পড়ছে।
সাইবার বুলিং কোনো হালকা ব্যাপার নয়। এটি এমন এক ক্ষত সৃষ্টি করতে পারে যা থেকে যেতে পারে সারা জীবনের জন্য। তাই সময় থাকতে আমাদের সচেতন হতে হবে নিজের জন্য, চারপাশের বন্ধুদের জন্য, এবং আগামী প্রজন্মের জন্যও।