Skip to content

পঁচিশের ডায়েরিতে ঈদের ছুটির

পঁচিশের ডায়েরিতে ঈদের ছুটির

ভ্রমণ শুধু স্থানান্তর নয়, বরং এটি এক ধরনের মানসিক বিশ্রাম, আত্মিক প্রশান্তি ও নতুন কিছু দেখার, জানার অভিজ্ঞতা। জীবনের একঘেয়েমি ও দুঃচিন্তাকে পিছনে ফেলে কিছুটা সময় প্রকৃতির সঙ্গে কাটানো আমাদের মন ও শরীরকে নতুন করে জাগিয়ে তোলে। শহরের কোলাহল, যানজট, অফিসের চাপ আর যান্ত্রিক জীবনের বাইরে গিয়ে যখন কেউ পাহাড়, সমুদ্র বা নদীর ধারে সময় কাটায়, তখন সে নিজেকে একটু অন্যভাবে খুঁজে পায়। বিশেষ করে পরিবার বা প্রিয়জনদের সঙ্গে ভ্রমণে গেলে তা হয়ে ওঠে আরও আনন্দময় ও গভীর স্মৃতিময় এক অভিজ্ঞতা। এজন্যই ঈদের ছুটির মতো সময়গুলোতে একটু ঘুরে আসা মানেই জীবনে নতুন এক প্রশান্তির ছোঁয়া।

ঈদ মানে শুধুই ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং এটি আনন্দ, ভালোবাসা, আর পরিবার-পরিজনের সঙ্গে সময় কাটানোর উপলক্ষ। বছরের একটানা কর্মব্যস্ততা, অফিস আর শহরের কোলাহলের মাঝে ঈদের ছুটি আমাদের জীবনে এক প্রশান্তির পরশ বয়ে আনে। বিশেষ করে কোরবানির ঈদের সময়কার কয়েক দিনের ছুটি অনেকের জন্যই নিজেকে রিচার্জ করার এক অসাধারণ সুযোগ। ঈদের দিন সকালে ত্যাগের আনন্দ ও পরিবারের সঙ্গে একসাথে থাকা শেষে অনেকেই ভাবেন কোথাও একটু ঘুরে এলে কেমন হয়—সেই ভাবনাকে সত্যি করার জন্যই রয়েছে দেশের নানা প্রাকৃতিক ও মনোমুগ্ধকর গন্তব্য। যারা ঈদটাকে শুধু ঘরের চার দেয়ালের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে প্রকৃতির কোলে গিয়ে আরও রঙিন করে তুলতে চান, তাদের জন্য আমরা বেছে এনেছি এমন পাঁচটি ভ্রমণস্থান—যা ২০২৫ সালের ঈদকে করে তুলতে পারে আরও স্মরণীয় ও আনন্দময়।

কক্সবাজার 

কক্সবাজারে ঈদ কাটানোর মতো আনন্দ খুব কম জায়গাতেই পাওয়া যায়। ঈদের ছুটিতে পরিবার কিংবা বন্ধুদের সঙ্গে সমুদ্রের গর্জন, সূর্যাস্তের দৃশ্য আর ঝাউবনের হিমেল বাতাস নিঃসন্দেহে এক অনন্য অভিজ্ঞতা। লাবণী, সুগন্ধা, ইনানি ও হিমছড়ি সৈকত ঈদের ছুটির জন্য অন্যতম আকর্ষণ। সকালের সূর্যোদয় কিংবা বিকেলের নরম আলোতে সোনালি বালির ওপরে হাঁটার অনুভূতি এক কথায় অপূর্ব।

যেভাবে যাবেন: ঢাকা থেকে কক্সবাজার যেতে পারেন বাস, ট্রেন কিংবা প্লেনে। এসি ও নন-এসি বাস নিয়মিত চলছে (শ্যামলী, সৌদিয়া, এস আলম, হানিফ)। যারা সময় বাঁচাতে চান, তারা বিমান ব্যবহার করতে পারেন। ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে প্রতিদিন ফ্লাইট রয়েছে।

সাজেক 

ঈদের ছুটিতে সাজেক যেন এক স্বর্গীয় ঠিকানা। মেঘ, পাহাড় আর নির্জনতায় ভরা সাজেক ভ্যালিতে ঈদের ভোর বয়ে আনে নতুন অনুভূতি। রুইলুই ও কংলাক পাড়ার অপার সৌন্দর্য, সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখা, পাহাড়ি খাবার এবং স্থানীয়দের আতিথেয়তা একে স্মরণীয় করে তোলে। পরিবার কিংবা প্রিয়জনের সঙ্গে সাজেকে কাটানো ঈদ হতে পারে জীবনের সেরা স্মৃতিগুলোর একটি।

যেভাবে যাবেন: ঢাকা থেকে বাসে প্রথমে যেতে হবে খাগড়াছড়ি। সেখান থেকে স্থানীয় চাঁদের গাড়িতে করে সাজেক। বাস সার্ভিসের মধ্যে শান্তি পরিবহন, এস আলম, শ্যামলী ইত্যাদি পাওয়া যায়। সাজেকে যাওয়ার জন্য স্থানীয় অনুমতি ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত নির্দেশনা অনুসরণ করাও গুরুত্বপূর্ণ।

রাঙামাটি

ঈদ কাটানোর জন্য যারা একটু শান্ত পরিবেশ ও জলবিলাস ভালোবাসেন, তাদের জন্য আদর্শ গন্তব্য হতে পারে রাঙামাটি। কাপ্তাই হ্রদ, শুভলং ঝরনা, পলওয়েল পার্ক, ঝুলন্ত সেতু এবং তাজিনডং পাহাড় ঈদের ছুটিতে দর্শকদের কাছে অন্যতম আকর্ষণ। ঈদের দিন বা পরদিন একটিবার হলেও বোটে চড়ে কাপ্তাই লেক ঘুরে আসা চাই-ই চাই। পাহাড়ি খাবার, স্থানীয় বাজার ও হস্তশিল্পও ঈদের আনন্দে যোগ করে নতুন মাত্রা।

যেভাবে যাবেন: ঢাকা থেকে সরাসরি রাঙামাটিগামী বাস রয়েছে। আপনি চাইলে চট্টগ্রাম হয়ে রাঙামাটি যেতে পারেন। সেখান থেকে রিজার্ভ করা নৌকায় বা বোটে কাপ্তাই হ্রদে ঘোরা যায়।

বান্দরবন

ঈদে প্রকৃতির গভীরে হারিয়ে যেতে চাইলে বান্দরবান নিঃসন্দেহে অন্যতম শ্রেষ্ঠ গন্তব্য। নীলগিরি, নীলাচল, বগা লেক, থানচি, রুমা বাজার—প্রতিটি জায়গা নিজের আলাদা সৌন্দর্য বহন করে। এখানকার পাহাড়ি পথ, স্নিগ্ধ বাতাস ও গ্রামীণ সৌন্দর্য ঈদের অবসরে প্রশান্তি আনে মনে। যারা অ্যাডভেঞ্চার পছন্দ করেন, তাদের জন্য বান্দরবান এক আদর্শ গন্তব্য।

যেভাবে যাবেন: ঢাকা থেকে সরাসরি বান্দরবানগামী এসি ও নন-এসি বাস চলে (যেমন সৌদিয়া, শ্যামলী, এস আলম)। বান্দরবান শহর থেকে স্থানীয় জিপ কিংবা চাঁদের গাড়িতে নির্দিষ্ট স্পটগুলোতে যেতে হয়।

কুয়াকাটা 

বাংলাদেশের আরেকটি জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য হলো কুয়াকাটা, যেটি ‘সাগরকন্যা’ নামেও পরিচিত। কুয়াকাটার বিশেষত্ব হলো—এখানেই আপনি একই জায়গা থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত উপভোগ করতে পারবেন। সমুদ্রের কোল ঘেঁষে থাকা এই স্থান ঈদের ছুটিতে বিশ্রাম, রোমান্স ও শান্তির ঠিকানা হতে পারে। এখানে রয়েছে গঙ্গামতির চর, লেবুর চর, রাখাইনদের বৌদ্ধ মন্দির ও ঐতিহ্যবাহী বাজার—সবকিছুই ভ্রমণকে আরও রঙিন করে তোলে।

যেভাবে যাবেন: ঢাকা থেকে পটুয়াখালী বা বরিশাল হয়ে কুয়াকাটা যেতে পারেন। অনেক বাস কোম্পানি সরাসরি কুয়াকাটা পর্যন্ত যায় (যেমন- সুরভি, ঈগল, সাকুরা)। এছাড়া বরিশাল পর্যন্ত বিমানেও যাওয়া যায়, সেখান থেকে সড়কপথে কুয়াকাটা।

২০২৫ সালের ঈদ উদযাপন হোক এবার প্রকৃতির কোলে, নতুন কিছু আবিষ্কারের আনন্দে। পরিবার কিংবা বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে ঈদের ছুটির কয়েকটি দিন দেশের এসব দৃষ্টিনন্দন গন্তব্যে কাটিয়ে ফিরলে মন হবে চাঙা, আর মনে থাকবে এক ঝলমলে ঈদের স্মৃতি। ব্যস্ত জীবনের ক্লান্তি দূর করে এই ঈদে নিজেকে দিন একটু ভ্রমণের উপহার।