Skip to content

যুগের চাহিদায় নানান পেশায় নারীরা

যুগের চাহিদায় নানান পেশায় নারীরা

সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে বদলে গেছে সমাজের চেহারা, বদলে গেছে মানুষের জীবনযাত্রার ধরন। একসময় যেখানে নারীদের ভূমিকা সীমাবদ্ধ ছিল গৃহকেন্দ্রিক কাজে, আজ তারা দেশের অর্থনীতি, প্রযুক্তি, বিজ্ঞান, সংস্কৃতি, রাজনীতি— সবখানেই সমান অবদান রাখছেন। যুগের চাহিদায় নারীরা এখন নিজেদের মেধা, যোগ্যতা ও পরিশ্রম দিয়ে সমাজের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই দৃপ্ত পদচারণা করছেন।

শিক্ষার প্রসার এবং প্রযুক্তির হাতছানিতে নারীরা নতুন নতুন পেশায় এগিয়ে আসছেন। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার কিংবা শিক্ষিকা হবার চিরাচরিত স্বপ্ন ছাড়িয়ে আজকের নারী হয়ে উঠছেন ডেটা সায়েন্টিস্ট, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, এয়ারলাইন পাইলট, ন্যাশনাল সিকিউরিটি এক্সপার্ট কিংবা সফল উদ্যোক্তা। ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম, ফ্রিল্যান্সিং, গ্রাফিক ডিজাইন, কনটেন্ট ক্রিয়েশন— এসব নতুন পেশা এখন আর শুধু পুরুষের জন্য সংরক্ষিত নয়।

বিশেষ করে ব্যাংকিং ও কর্পোরেট জগতে নারীদের ভূমিকা দিন দিন বাড়ছে। দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে এখন অনেক নারী উচ্চপদে দায়িত্ব পালন করছেন। পাশাপাশি মিডিয়া ও সাংবাদিকতা ক্ষেত্রেও নারীদের উপস্থিতি সুস্পষ্ট। টেলিভিশন, পত্রিকা, অনলাইন নিউজপোর্টাল— সর্বত্র তারা দক্ষতার সাথে কাজ করছেন প্রতিবেদক, সম্পাদক ও নিউজ প্রেজেন্টার হিসেবে।

শিল্প ও সংস্কৃতি অঙ্গনেও নারীরা নতুন নতুন মাত্রা যোগ করছেন। অভিনয়, সংগীত, নৃত্য, চিত্রশিল্প কিংবা সাহিত্য— সর্বক্ষেত্রেই নারীরা নিজেদের প্রতিভা ও সৃষ্টিশীলতার ছাপ রেখে চলেছেন। আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব, সাহিত্য পুরস্কার কিংবা সংগীতের বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের নারীরা আজ সম্মান কুড়িয়ে আনছেন।

ক্রীড়াক্ষেত্রের কথাও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ফুটবল, ক্রিকেট, অ্যাথলেটিকস, সাঁতার কিংবা শুটিং— সব ধরনের খেলায় নারী ক্রীড়াবিদরা নিজেদের সক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছেন। বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল এবং ফুটবল দলের সাফল্য ইতোমধ্যেই বিশ্ব দরবারে দেশের মর্যাদা বৃদ্ধি করেছে।

রাজনৈতিক অঙ্গনেও নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রশংসনীয়। স্থানীয় সরকার থেকে জাতীয় সংসদ পর্যন্ত এখন নারীরা নেতৃত্বের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। দেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতাসহ বিভিন্ন দপ্তরের মন্ত্রী পদেও রয়েছেন বহু নারী, যা নারীর ক্ষমতায়নের একটি বড় উদাহরণ।

তবে এখনো নারীদের পথ পুরোপুরি মসৃণ হয়ে ওঠেনি। কর্মক্ষেত্রে বৈষম্য, নিরাপত্তাহীনতা, যৌন হয়রানি, সামাজিক কুসংস্কার ও মানসিক চাপ— এগুলো আজও নারীর অগ্রযাত্রায় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষ করে প্রান্তিক অঞ্চলগুলোর নারীরা এখনো অনেক বাধা-বিপত্তির মুখোমুখি হন।

এ জন্য প্রয়োজন সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে সচেতনতামূলক কর্মসূচি, আইনি সুরক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষ সমানাধিকার নিশ্চিত করা। পাশাপাশি পরিবারের সমর্থন ও সমাজের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নারীর সাফল্যের অন্যতম চাবিকাঠি হতে পারে।

আজকের নারী শুধু ঘর সামলানো নয়, জাতি গঠনেরও অগ্রদূত। তাদের এগিয়ে চলার সাহস, পরিশ্রম ও স্বপ্ন দেখার শক্তি আগামী দিনে আরও একটি সমৃদ্ধ ও সমতাভিত্তিক সমাজের ভিত্তি তৈরি করবে। যুগের চাহিদায় নারীরা এগিয়ে যাবে বহুদূর— এ প্রত্যাশাই আজ সকলের।