পিরিয়ড নিয়ে সংকোচ: লোকে কী বলবে?
নারীদের প্রতি মাসের ঋতুচক্র বা পিরিয়ড হচ্ছে একটি সুস্থ দেহের পরিচয়। এছাড়া পিরিয়ড একজন নারীর দেহকে প্রস্তুত করে তোলে সন্তান ধারণের জন্য। এই বিষয়টি যতখানি কষ্টের ততখানি গর্বেরও৷
কিন্তু পিরিয়ড এইদেশে বিরাট বড় একটা ট্যাবুর নাম। কিশোরী বয়সে নারীরা পিরিয়ড নিয়ে কথা বলতে পারে না। কারণ তার মনে থাকে সংকোচ। লোকে কী বলবে, পিরিয়ড নিয়ে কথা বললে? নিজে দোকানে গিয়ে স্যানিটারি প্যাড কিনতে সংকোচ বোধ হয়। কারণ লোকে তো আড়চোখে তাকাবে৷ আর কিশোর বয়সে পিরিয়ডের সঙ্গে ধাতস্থ হওয়াও একটা সময়ের ব্যপার। কোথাও যেন দাগ লেগে না যায়, শরীরে হঠাৎ পরিবর্তন আসাটা যেন বেশি দৃশ্যমান না হয়ে ওঠে, সেটা নিয়ে সারাক্ষণ ভয়ে থাকা। এর একটাই কারণ, পিরিয়ড হয়েছে, সেটা যদি সবাই জেনে যায়, তাহলে লোকজন কী বলবে?
![](https://a.kha.icu/wp-content/uploads/2022/05/Untitled-1-9-1024x560.jpg)
পিরিয়ড হওয়ার ঘটনাটা যেহেতু স্বাভাবিক, সেহেতু তা নিয়ে কাজ করাও স্বাভাবিক। কিন্তু এ সময় প্রপার রেস্ট নেওয়াকেও অনেকে আদিখ্যেতা বলেও দোষ দেয়৷ লোকজন বলে, সৃষ্টির শুরু থেকে নারীরা পিরিয়ড নিয়েই দিব্যি কাজ করে চলেছে, কই তাদের তো সমস্যা হয়নি। এখন হঠাৎ কেন পিরিয়ডের সময় ছুটির দরকার হয়? এ কারণে নারীরা পিরিয়ডের সময় ছুটি পাবে কি না, তা নিয়ে দ্বিধায় পড়ে যায়। কারণ লোকে কী বলবে?
![](https://a.kha.icu/wp-content/uploads/2022/05/Untitled-1-10-1024x560.jpg)
এছাড়া, পিরিয়ডের সময় গ্রামাঞ্চলে স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার করা নিয়ে দেখা যায় নিদারুণ উদাসীনতা। কারণ স্যানিটারি প্যাড তো ব্যয়বহুল। কাপড় সেখানে সহজলভ্য। কিন্তু কাপড়ের ব্যবহার করলেই কি ঝামেলা শেষ হয়ে গেলো? না বরং আরও বাড়লো। পিরিয়ডের সময় নারীরা যে কাপড় ব্যবহার করে, সেই কাপড়ের বিশেষ যত্নের প্রয়োজন হয়। কাপড় ধোয়ার সময় ফুটন্ত গরম পানিতে জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করতে হয়। তারপর রোদে শুকাতে দিতে হয়৷ কিন্তু লোকলজ্জায় এই কাপড় নারীরা ঘরের ভেতরে স্যাঁতস্যাঁতে জায়গায় শুকাতে দেয়। কারণ পিরিয়ডের ব্যবহার করা কাপড় লোকজনের চোখের সামনে পড়ে গেলে বিষয়টা খুবই লজ্জাজনক হয়ে পড়ে। তাতে বদনামও হতে পারে৷
![](https://a.kha.icu/wp-content/uploads/2022/05/Untitled-1-11-1024x560.jpg)
নারীরা মূলত বদনাম আর লোকলজ্জার ভয়ে নিজেদের স্বাস্থ্য সচেতনতাকে বিসর্জন দিয়ে দেয়। কারণ এটাই দীর্ঘ বছরের শিক্ষা। লোকজন কী বলবে, না বলবে; এটা নিজের জীবনের চেয়েও বড়।
পিরিয়ডের সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্যের যে সম্পর্ক রয়েছে, সেটা অনেক বেশি তীব্র। পিরিয়ডের সময় মেজাজ খিটখিটে থাকা এবং খাবারে অরুচি থেকে শুরু কের শারীরিক পরিবর্তন খুবই সাধারণ ঘটনা। কিন্তু দিনের পর দিন নারীরা চেপে আসছে সবই।
কিন্তু নারীদের পিরিয়ড নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করতে হবে। এতে পিরিয়ড বিষয়ক সচেতনতা তো বাড়বেই তাছাড়া পিরিয়ড নিয়ে একটা ট্যাবু ভাঙতেও সাহায্য করবে। তখন মানুষের কাছে পিরিয়ডের একটা স্বাভাবিকতা আসবে৷পিরিয়ড নিয়ে যাবতীয় কুসংস্কার বন্ধ হবে এবং পিরিয়ডকে কারও সঙ্গে অচ্ছুৎ বলে আর মনে হবে না।