মেয়েকে পড়িয়ে কী হবে
বর্তমান সময়ে যখন নারীর অগ্রাধিকার বৃদ্ধিতে এগিয়ে এসেছে বিশ্ব, তখনো গ্রামে মেয়েদের ১৮ না হতেই চলছে বিয়ের প্রস্তুতি। নারী শিক্ষার হার যখন দিন দিন বাড়িয়ে তুলতে চেষ্টা করা হচ্ছে, তখনো কোথাও কোথাও শুনতে হচ্ছে মেয়েকে বেশি পড়িয়ে কী করবো?
এই তো কিছুদিন আগের কথা ঈদের ছুটিতে বাড়ি গেলে পাশের বাসার একজন বলে তার মেয়ের বিয়ে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীতে উঠলেই দিয়ে দেবে। মেয়েটি এখন সপ্তম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি মানে হলো টেনেটুনে ১৮ বছরে পা দেবে মেয়েটি।
মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স ১৮ বছর। ১৮ বছরের নিচে মেয়েদের বিয়ে দেওয়া যায় না। বাল্যবিয়ে রোধে বাংলাদেশ সরকার নিয়েছে বিভিন্ন পদক্ষেপ। তারপরও কি এই বাল্যবিবাহ আটকানো সম্ভব হচ্ছে?
মেয়ের বয়স হোক বা না হোক দেখতে বড় মনে হলেই মেয়ের বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসা শুরু করে আত্মীয়-স্বজনরা। আর পরিবারও মেয়েকে বোঝায় ভালো ছেলের প্রস্তাব এসেছে, তাই সে যেন বিয়েতে মত দিয়ে দেয়। পরিবারের চাপের কাছে মেয়েকে নিজের স্বপ্নের বিসর্জন দিয়ে দিতে হয়। হাতেগোনা কয়েকজন ছাড়া বাকি মেয়ে চাইলেও নিজের জন্য লড়াই করতে পারে না।
যেমন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সামিহা। তার বাবা-মায়ের কাছে বুয়েট থেকে পাস করা এক ছেলের প্রস্তাব এসেছে। বিশ্ববিদ্যালয় ছুটিতে যখন সামিহা বাড়ি যায়, তখন তাকে সেই ছেলের সঙ্গে দেখা করতে বললে সে দেখা করতে চায় না। কিন্তু একটা সময় পরে সামিহা দেখা করতে বাধ্য হয়। তার বিয়েও ঠিকঠাক হয়ে যায়। এরপর সামিহা নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে কী করবে, সে নিজেই জানে না।
এক বছর আগে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয় বর্ষে পড়াশোনা করার সময় বন্যা নামের মেয়েটির বিয়ে হয়। মেয়েটি গণিত বিভাগে পড়াশোনা করছিল। মেধাবী শিক্ষার্থী হওয়ার পরও তার পড়াশোনা সেখানেই থমকে যায়। আজ সে ঘর-সংসার নিয়েই ব্যস্ত।
কিছু বাবা-মায়ের কাছে মেয়েরা বেশি পড়াশোনা করে কী করবে, এমন দুশ্চিন্তা থাকে। আর চিন্তাধারা থেকেই তারা মেয়ের বয়স হওয়ার আগেই মেয়ের বিয়ে দিয়ে দেন। অনেকের অভিযোগ, মেয়েকে বেশি পড়ালে তারা কথা শোনে না। আর এই অভিযোগের ওপর ভিত্তি করেই তারা বলেন, মেয়েকে পড়িয়ে কী হবে।
অনন্যা/এসএএস