নারীকে মানসিক শক্তিতে বলিয়ান হতে হবে
মানুষ মাত্রই প্রতিনিয়ত যুদ্ধরত থাকে। আর জীবনের সব ঘাত-প্রতিঘাতকে রুখতে হলে মনোবলের বিকল্প নেই। মনোবল থাকলে ইংলিশ চ্যানেলও সহজে পাড়ি দেওয়া সম্ভব। কিন্তু তা না থাকলে বাড়ির পাশের পানা পুকুরটিও উত্তাল-মহাসমুদ্র হয়ে ওঠে! জীবনযুদ্ধে জয়লাভ করার অন্যতম ও একমাত্র হাতিয়ার মনোবল বা মানসিক শক্তি ( mental strength)। আর এই মানসিক শক্তি গঠনের পেছনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করার প্রাথমিক গুরু দায়িত্ব পরিবারেরই নেওয়ার কথা। কিন্তু বাংলাদেশের বেশিরভাগ পরিবারেই সেই চর্চা নেই।
কণ্টকময় জীবনকে মোকাবিলা করার জন্য পরিবারের যে নিজস্ব কিছু দায় থাকা দরকার, সে বিষয়েও অধিকাংশ পরিবার সচেতন নয়। শুধু জীবিকা উপার্জন ও সন্তান লালন-পালন অধিকাংশ বাঙালির দৈনন্দিন কাজ হলেও সন্তানকে পৃথিবীর জন্য যোগ্য ও দক্ষ করে তুলতে কোন পথে চলতে হবে, তা জানেন না বা সে বিষয়ে ভাবেনই না বেশিরভাগ বাবা-মা! এছাড়া, সন্তানের প্রতি অতিরিক্ত ভালোবাসা ও অজ্ঞানতাবশত তার সবচেয়ে বড় ক্ষতিটাও করে পরিবার। যে ছেলে বা মেয়ে কখনো সংকটে পড়েনি বা বাধা-বিপত্তির সম্মুখীন হয়নি, জীবন তার কাছে স্বচ্ছ পানির মতোই! তাই হঠাৎ যদি কোনো সংকটে পড়ে যায়, তার জীবন বিপন্ন হয়ে পড়ে। কিন্তু জীবন তো অনিশ্চিত ও প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল। তাই পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে মানসিক শক্তির তুলনা অপরিসীম।
আমাদের সমাজের একটি সাধারণ চিত্র ছেলের জন্য বাবা-মা যতটা তটস্থ ও সচেতন থাকেন, মেয়ের ক্ষেত্রে ততটা নন। তাই ছেলের ভবিষ্যৎ নিরপত্তার জন্য তাকে বাইরের পরিবেশের সঙ্গে পরিচিত করে তুললেও মেয়েকে রাখেন অন্দরমহলে। কারণ, তাদের বদ্ধমূল ধারণা, মেয়েরা জন্মেছে ঘরকন্না সামলানোর জন্য। বাইরের জগতের সঙ্গে তাদের লেনাদেনা থাকা উচিত নয়! কিন্তু কোনো মানুষই একই গণ্ডিতে আজীবন থাকে না, বা থাকতে পারে না। স্বাভাবিক ভাবেই মেয়েদের জীবন পরিবর্তন হয়ে যায়। শৈশব-কৈশোরে যে জীবন পার করতে পারে প্রাপ্ত বয়স্ক হলে পুরো চিত্রটাই পাল্টে যায়! তাকে বেছে নিতে হয় এমন জীবন, যেটা সম্পূর্ণ নতুন। পরিবেশ, পরিবার, স্থান; সবই নতুন। মানসিকতার মিল থাকলে জীবনকে সুন্দর করে গুছিয়ে নিতে পারে সহজেই কিন্তু অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো ঘটনা ঘটলে নারীরা হয়ে পড়ে দিশেহারা!
আগে থেকেই মানসিক শক্তি অর্জন করতে পারলে শুধু আলাদা পরিবার কেন, গোটা পৃথিবীকেই শাসন করার ক্ষমতা নারীরা রাখতে পারে। কিন্তু পরিবারের সদস্যদের কোনো সহযোগিতা সেদিক থেকে নারীরা পায় না। পরিবারের বাইরে সামাজিকভাবেও মেয়েদের গড়ে তোলার প্রতি কোনো দৃষ্টি দেওয়া হয় না। তার ওপর আবার মানসিক শক্তি নিয়ে তো কেউ ভাবেই না। যেখানে নারীর শিক্ষা, স্বাস্থ্যই প্রাধান্য পায় না, সেখানে মনোবল বা মানসিক শক্তিকে তোয়াক্কা না করারই কথা! কিন্তু নারীর মানসিক শক্তি যদি সঠিকভাবে গড়ে তোলা যায়, তবে তার সামগ্রিক উন্নয়নের ধারায় জাতিরও উন্নতি ঘটবে। নারীকে সামাজিক ও মানসিকভাবে গড়ে তুলতে পরিবারের পাশাপাশি সমাজকেও এগিয়ে আসতে হবে।
নারীর মানসিক শক্তি জাগাতে হলে ধর্মীয় বিধিবিধানের সঠিকতা নিরূপণ করতে হবে। যুগের সঙ্গে অভ্যাসের পরিবর্তন ঘটিয়ে নারীর সামাজিক ও মানসিক উন্নতি ঘটালে তার মননের বিকাশ ঘটা স্বাভাবিক। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ধর্মীয় বিধিনিষেধের অপব্যাখ্যার ফলে নারীকে একপেশে করে ফেলা হয়। নারীর জীবনকে বিভিন্নভাবে রুদ্ধ করে পুরুষতন্ত্রকে জিতিয়ে দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে নারীর সার্বিক উন্নতি যেমন বাধাগ্রস্ত হয়, তেমনি মনোবল হারিয়েও বিপথে পরিচালিত হয়। তাই নারীর জীবনকে সুন্দর ও মঙ্গলময় করতে তার মনোবলকে গড়ে তোলা জরুরি।
জীবনের এলো পথে চলতে গিয়ে মানুষকে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন রকম সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। কিন্তু সব সমস্যার সহজ সমাধান তখনই সম্ভব, যদি মানসিক শক্তি থাকে। নারী-জীবনের জটিল সমস্যাগুলো কাটিয়ে ওঠা তখনই সম্ভব, যখন নারী শক্ত মনোবলের অধিকারী হবে। আর সেই মানসিক শক্তি গড়ে তুলতে প্রথম পদক্ষেপ নিতে হবে পরিবার থেকেই।
অনন্যা/জেএজে