নারীদের রক্তশূন্যতা কেন বেশি হয়?

রক্তশূন্যতা বা অ্যানিমিয়া নারীদের মধ্যে একটি নীরব সমস্যা, যা প্রতিনিয়ত স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য বলছে, ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে ৩০ শতাংশ এবং গর্ভবতী নারীদের মধ্যে প্রায় ৩৭ শতাংশ রক্তশূন্যতায় আক্রান্ত।
কেন নারীদের বেশি হয়?
নারীদের শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া—যেমন মাসিক ঋতুস্রাব, গর্ভাবস্থা এবং স্তন্যদান—রক্তশূন্যতার জন্য প্রধানত দায়ী। ঋতুস্রাব চলাকালে শরীর থেকে ৩০ থেকে ৮০ মিলিলিটার পর্যন্ত রক্তক্ষরণ হয়। কারও ক্ষেত্রে এ পরিমাণ আরও বেশি হতে পারে, যা আয়রনের ঘাটতি তৈরি করে।
গর্ভাবস্থায় আয়রনের চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। এই সময় যদি যথাযথ পুষ্টি নিশ্চিত না হয়, তাহলে মা ও শিশুর উভয়ের জন্যই স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হয়।
অন্য কারণগুলো কী?
অপুষ্টি ও আয়রনসমৃদ্ধ খাবারের ঘাটতি
কৃমি সংক্রমণ
দীর্ঘ সময় ব্যথানাশক ওষুধ সেবন
পাইলস বা অন্ত্রের রক্তক্ষরণ
জরায়ুর টিউমার
জিনগত রক্তরোগ (যেমন: থ্যালাসেমিয়া, হিমোগ্লোবিন ই ট্রেইট)
অনেক নারী জানেনই না যে, তাঁদের হিমোগ্লোবিন মাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় কম, যা সারা জীবন থেকেই যেতে পারে।
রক্তশূন্যতার উপসর্গ
অতিরিক্ত দুর্বলতা ও ক্লান্তি
ফ্যাকাশে ত্বক ও ঠোঁট
অল্প পরিশ্রমেই হাঁপিয়ে ওঠা
মাথা ঘোরা বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়া
বুক ধড়ফড় করা, শ্বাসকষ্ট
প্রতিরোধ সম্ভব, যদি সচেতন থাকেন
চিকিৎসকেরা বলছেন, আয়রনের ঘাটতি রোধে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনা জরুরি। আয়রনসমৃদ্ধ খাবার যেমন:
পালংশাক, কচুশাক, কলিজা, খেজুর, কাঁচা কলা—নিয়মিত খাওয়া দরকার। গর্ভাবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আয়রন ও ফলিক অ্যাসিড সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা উচিত।
যদি খাবারের মাধ্যমে চাহিদা পূরণ না হয়, তবে প্রয়োজনে আয়রন ইনজেকশন বা রক্ত সঞ্চালন প্রয়োজন হতে পারে।
কী করবেন?
লক্ষণ দেখা দিলে অবহেলা নয়, পরীক্ষা করান
হিমোগ্লোবিন ইলেকট্রোফোরেসিস পরীক্ষা করে জিনগত রক্তরোগ আছে কি না জেনে নিন
স্বাস্থ্যপরীক্ষা ও সচেতনতা—এই দুই-ই রক্তশূন্যতা প্রতিরোধে প্রধান হাতিয়ার