Skip to content

২৬শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ | বুধবার | ১২ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শূন্য গোয়ালের সামনে কাঁদতে কাঁদতে দিশেহারা লাকী রানী

নিঃস্ব হয়ে গোয়ালের সামনে কাঁদতে কাঁদতে অসহায় কণ্ঠে লাকী রানী বললেন, ‘চোরে মরা মানুষরে মারিয়া গেল’। লাকি রানী মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়নের উত্তর ভবানীপুর গ্রামের বাসিন্দা।
স্বামীর অকালমৃত্যুর পর সংসার সামলানোর পাশাপাশি পাঁচটি গরু লালন-পালন করে আসছিলেন। গরু বিক্রি করে সংসার খরচ আর দুই মেয়ের লেখাপড়ার খরচ চালানোর চিন্তা করেছিলেন। টাকার প্রয়োজনে একটি গরু বিক্রিও করেন। কিন্তু এর মধ্যে দুর্বৃত্তরা গোযালঘরের তালা কেটে বাকি চারটি গরু চুরি করে নিয়ে যায়। এ পরিস্থিতিতে লাকি পুরোপুরি নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন।
উপজেলা সদরের ভবানীগঞ্জ বাজার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় তাঁর স্বামী প্রশান্ত দের পানের টংদোকান ছিল। প্রায় তিন বছর আগে হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যান। তছনছ হয়ে যায় সাজানো-গোছানো সংসারটি। এরপর লাকি নিজে সংসারের হাল ধরেন। তাঁদের বড় মেয়ে রিয়া রানী দে এবার এসএসসি পরীক্ষা দেবে। ছোট মেয়ে রুহি রানী দে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ছে।
বসতঘরের সামনে টিনের চালা আর বাঁশের বেড়া লাগানো গোয়ালঘর দেখিয়ে লাকি বললেন, অর্থসংকটে পড়ে ১০-১৫ দিন আগে ৩৫ হাজার টাকায় একটি বলদ বিক্রি করেন। দুটি গাভি ও দুটি বাছুর ছিল। ২৮ ফেব্রুয়ারি রাতে খাবার খেয়ে পরিবারের সবাই ঘুমিয়ে পড়েন। পরদিন ১ মার্চ সকালে জেগে গোয়ালঘরের দরজার তালা কাটা দেখতে পান। ভেতরে গরুগুলো নেই। এ কথা বলতে বলতে লাকি কান্নায় ভেঙে পড়েন।
শাড়ি দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে লাকি রানী বলেন, ‘গরুগুলা বিপদের ভরসা আছিল। সংসার চালানি লাগে। বড় মেয়ের সামনে পরীক্ষা। বই-খাতা, প্রাইভেট পড়া লাগে। অনেক খরচ। গরু বিক্রি করি সংসার, বাচ্চারার লেখাপড়ার খরচ চালাইমু মনে করছিলাম। সব শেষ। চোরে মরা মানুষরে মারিয়া গেল।’
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, ফেব্রুয়ারি মাসে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ৩০টি গরু চুরির ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে কয়েকটি ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়।
এ ব্যাপারে জুড়ী থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পর পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে গেছে বলে।
বিষয়টি স্বীকার করে জুড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোরশেদুল আলম ভূঁইয়া বলেন, প্রতিটি চুরির ঘটনা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এ কাজে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ওসি বলেন, রাতে পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে। তবে এর পাশপাশি রাতে নিরাপত্তার জন্য এলাকাভিত্তিক পাহারার ব্যবস্থা করা দরকার বলে তিনি মন্তব্য করেন।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ