পাঁচ দেশে রমজানের ঐতিহ্যবাহী ও জনপ্রিয় ইফতারি
রমজান মাস মুসলমানদের জন্য একটি পবিত্র ও আত্মশুদ্ধির মাস। সারা বিশ্বের মুসলিমরা এ মাসে সংযমের সঙ্গে রোজা পালন করেন এবং সূর্যাস্তের পর ইফতার করেন। ইফতার মানেই দীর্ঘ একদিন রোজা রাখার পর প্রশান্তির প্রথম আহার। বিভিন্ন দেশে ইফতার আয়োজনে নিজস্ব সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও খাবারের বিশেষত্ব লক্ষ্য করা যায়।

বাংলাদেশে ইফতার মানেই বাহারি মুখরোচক খাবারের এক সমৃদ্ধ আয়োজন। ছোট-বড় সবার প্রিয় ইফতার তালিকায় থাকে পিঁয়াজু, বেগুনি, চপ, সামুচা, হালিম, মুড়ি, খেজুর, ছোলা, আলুর চপ, জিলাপি, দই-চিড়া ও বিভিন্ন রকমের শরবত। এসব খাবারই বাংলাদেশের ইফতারের অনন্যতা প্রকাশ করে। এছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী খাবার ইফতারে গ্রহণ করা হয়
মিশরের কাতায়েফ (Qatayef)
মিশরের ঐতিহ্যবাহী ইফতার খাবারের মধ্যে অন্যতম কাতায়েফ। এটি এক ধরনের ছোট প্যানকেক বা ডাম্পলিং যা খেজুর, কাঠবাদাম বা পেস্তাবাদাম দিয়ে পূরণ করা হয়। এরপর ডিপ ফ্রাই করে মিষ্টি সিরায় ডুবিয়ে পরিবেশন করা হয়।
কাতায়েফ মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশেই ইফতারে জনপ্রিয়। কেউ কেউ এটি পনির বা ক্রিম ভরে বানিয়ে বেকড করে খান। মধু বা সিরার সঙ্গে পরিবেশিত এই খাবার রমজানে বিশেষভাবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। কারণ এটি হালকা হলেও পুষ্টিকর ও মিষ্টি স্বাদের।
তুরস্কের দোলমা (Dolma)
তুরস্কের ইফতারে অন্যতম আকর্ষণীয় খাবার হলো দোলমা। এটি এক ধরনের স্টাফড খাবার। এটিতে আঙুরপাতা বা সবজির ভেতরে সুগন্ধি ভাত, মাংস, মশলা ও বাদাম ভরা হয় এবং এটি বেকড বা স্টিম করা হয়।
তুরস্কের ইফতারিতে দোলমার পাশাপাশি বিভিন্ন রকমের রুটি, সুপ এবং কাবাবও থাকে। তবে দোলমা তার সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর উপাদানের জন্য ইফতারের বিশেষ অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মরক্কোর হারিরা (Harira)
মরক্কোতে ইফতার মানেই হারিরা নামক একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর স্যুপ। এই টমেটো-ভিত্তিক স্যুপে মাংস, ছোলা, মসুর ডাল ও নানা রকমের মশলা থাকে যা স্বাদে ও পুষ্টিতে অনন্য।
হারিরা শুধু মরক্কোতেই নয়, পুরো উত্তর আফ্রিকা জুড়ে ইফতারিতে বহুল প্রচলিত। এটি রোজার পর শরীরকে দ্রুত শক্তি পুনরুদ্ধারে সহায়তা করে এবং অনেকেই এটি খেজুর ও রুটির সঙ্গে ইফতারে গ্রহণ করেন।

ইন্দোনেশিয়ার মি গ্লোসর (Mie Glosor)
ইন্দোনেশিয়ার ইফতারির অন্যতম জনপ্রিয় খাবার হলো মি গ্লোসর। এটি হলুদ রঙের এক ধরনের নুডলস। এতে সাধারণত সবজি, মসলা ও সয়া সসের সংমিশ্রণে রান্না করা হয়।
এই নুডলস বিশেষভাবে বগর বোগর (Bogor) অঞ্চলে জনপ্রিয় এবং রমজানে ইফতারের জন্য এটি ব্যাপকভাবে প্রস্তুত করা হয়। মি গ্লোসর সাধারণত স্পাইসি সস এবং ফ্রাইড টফুর সঙ্গে পরিবেশন করা হয় যা ইফতারে এক অন্যরকম স্বাদ এনে দেয়।
পাকিস্তানের হালিম (Haleem)
পাকিস্তানে ইফতার মানেই হালিম। এটি এক ধরনের ঘন ও মসলাদার রান্না। এটি মাংস, গম, ডাল ও নানা ধরনের মশলা দিয়ে তৈরি করা হয়।
হালিম পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশে বেশ জনপ্রিয়। তবে পাকিস্তানে এটি ইফতারের জন্য অন্যতম প্রধান খাবার হিসেবে বিবেচিত হয়। এটি প্রচুর পুষ্টিকর এবং দীর্ঘ সময় পেট ভরা রাখে। ফলে রোজার পর শরীরকে শক্তি পুনরুদ্ধারে সহায়তা করে।
রমজান মাস কেবল সংযমের মাসই নয়। এটি আত্মশুদ্ধি, একতা ও সম্প্রীতির মাসও। ইফতার এই মাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ যা পরিবার, বন্ধু এবং সম্প্রদায়ের মানুষকে একত্রিত করে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ইফতার সংস্কৃতি দেখলে বোঝা যায় যে, প্রতিটি অঞ্চলের নিজস্ব খাদ্য ঐতিহ্য থাকলেও ইফতারের মূল লক্ষ্য এক। আর তা হল শরীরকে পুষ্টি দেওয়া ও আত্মার প্রশান্তি লাভ করা।
এইভাবেই বিভিন্ন দেশের ঐতিহ্যবাহী ও জনপ্রিয় ইফতারি খাবারগুলো রমজানের আনন্দ ও তাৎপর্যকে আরও বাড়িয়ে তোলে। আপনি কোন দেশের ইফতার সবচেয়ে পছন্দ করেন?