Skip to content

বিটিভি যেভাবে বাঁচিয়ে রেখেছে ইশারা ভাষাকে 

ইশারা হলো বাক ও শ্রবণপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রধান যোগাযোগ মাধ্যম। বাংলাদেশে প্রায় ৩০ লাখ এবং বিশ্বে প্রায় ৭০ মিলিয়ন মানুষ ইশারার মাধ্যমে যোগাযোগ করেন। এটি একটি বড় জনগোষ্ঠীর যোগাযোগের মাধ্যম হলেও সমাজে এখনও অবহেলিত ও উপেক্ষিত। ভাষাগত সীমাবদ্ধতার কারণে এই মানুষগুলো শিক্ষা, চিকিৎসা ও চাকরির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

বাক্ ও শ্রবণপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সমস্যাগুলো অনেকেই বুঝতে পারেন না। কারণ তারা ইশারায় কথা বলেন যেটা বেশিরভাগ মানুষ বোঝেন না। ফলে তাদের মতামত গুরুত্ব পায় না। তাদের দাবিগুলোও অগ্রাহ্য হয়। অপরদিকে দৃষ্টি বা শারীরিক প্রতিবন্ধীদের সমস্যা সরাসরি বোঝা যায়। তাই তাদের অধিকারের জন্য লড়াই করাও তুলনামূলকভাবে সহজ।

বাংলাদেশ জাতিসংঘের প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার সনদে স্বাক্ষরকারী দেশ। তাই রাষ্ট্রের উচিৎ ইশারায় যোগাযোগের প্রচলন বাড়ানো ও বাক ও শ্রবণপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি করা। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ইশারা ভাষার প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করা হলে এই জনগোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ সহজ হবে এবং কর্মসংস্থান বাড়বে। হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন দপ্তরে দোভাষীর ব্যবস্থা থাকলে তাদের সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

বাংলাদেশে প্রতিবছর ৭ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রীয়ভাবে বাংলা ইশারা ভাষা দিবস পালিত হয়। কিন্তু শুধুমাত্র একদিন পালন করলেই সমস্যার সমাধান হবে না। সারাবছরই ইশারা ভাষার প্রচার ও উন্নয়নে কাজ করতে হবে। বাংলা একাডেমি বা জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডনের মতো সংস্থাগুলো ইশারা ভাষার একটি প্রমিত অভিধান তৈরি করতে পারে। এতে সবার জন্য ইশারায় কথা বলা শেখা সহজ হবে।

এই ক্ষেত্রে বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) একটি ইতিবাচক উদাহরণ। তারা নিয়মিত ইশারা ভাষায় সংবাদ সম্প্রচার করছে। এটি বাক্ ও শ্রবণপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের তথ্য পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করছে। অন্যান্য গণমাধ্যম ও প্রতিষ্ঠানও যদি এই উদ্যোগ নেয় তাহলে সমাজে ইশারা ভাষার গুরুত্ব বাড়বে।

ইশারা ভাষা শুধু সহায়তার মাধ্যমই নয়, এটি অর্থনৈতিক সম্ভাবনাও তৈরি করতে পারে। সাংকেতিক ভাষায় প্রশিক্ষিত দোভাষীদের জন্য কর্মসংস্থান তৈরি হতে পারে। নাটক, চলচ্চিত্র বা বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বাক্ ও শ্রবণপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অংশগ্রহণ বাড়লে তারা পেশাদার শিল্পী হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত হতে পারবেন।

বাংলাদেশে বৈষম্যমুক্ত সমাজ গড়তে হলে ইশারা ভাষার প্রচলন ও গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানো জরুরি। সরকার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, গণমাধ্যম এবং সাধারণ মানুষ মিলে একসঙ্গে কাজ করলে বাক্ ও শ্রবণপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য আরও সমান সুযোগ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। ইশারা ভাষাকে গুরুত্ব দিলে সমাজের এই অবহেলিত জনগোষ্ঠীর জীবনেও ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ