Skip to content

২৬শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ | বুধবার | ১২ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এই সমাজ নারীবান্ধব হবে কী!

সময় অনেক এগিয়ে গেছে এবং খুব দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। তবে কোথাও কোথাও গিয়ে যেন থমকে আছে কিছু বিষয়। নারীদের নিয়ে কোথাও যেন এক ধরনের এলার্জি এখনো পর্যন্ত এ সমাজে বিদ্যমান। প্রতিদিন নানান ধরনের বৈষম্যমূলক ঘটনা নারীদের সাথে ঘটছে। এবং এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে।

দেশে সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক নানান ক্ষেত্রে অনেক পরিবর্তন এসেছে গত বছর। বিভিন্ন পদক্ষেপ, আইন, শাস্তি—কোনো কিছুই নারীর প্রতি সহিংসতা আর নির্যাতন বন্ধ করতে পারছে না।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের এক তথ্যমতে, গত বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ১ হাজার ১০৬ জন কন্যা এবং ১ হাজার ৪১৯ জন নারী নির্যাতনের শিকার হয়েছে। সংখ্যাটি মোট করলে দাঁড়ায় ২ হাজার ৫২৫। তাদের মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৩৬৭ কন্যাসহ মোট ৫১৬ জন।
বিভিন্ন কারণে ৭৭ কন্যাসহ ৫২৮ জনকে হত্যা করা হয়। দেশজুড়ে অদ্ভুতভাবে হত্যা করার নানান ঘটনা ঘটেছে। কোথাও ছোট শিশুকে খুন করে পাশে পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়েছে, কোথাও গৃহিণীকে খুন করে বাসার ডিপ ফ্রিজে রেখে দেওয়া হয়েছে। এসব নির্মম ঘটনা শুনলে শরীরের লোম যেন দাঁড়িয়ে যায়, মনে যেন তৈরি হয় এক অজানা আতঙ্ক।

কী কী কারণে এমন হচ্ছে?
ঘুরেফিরে নারীরাই এই সমস্যা শিকার হচ্ছে।বিশেষ করে নারী ও কন্যাশিশুদেরই কেন এমন বিকৃতভাবে খুন করা হচ্ছে, তার সঠিক কারণ ও উত্তর আমাদের সকলের অজানা। উৎকণ্ঠা শুধু ভুক্তভোগীদের নিয়েই নয়; প্রসঙ্গটা মানুষের সামগ্রিক মানসিক স্বাস্থ্যের।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের তথ্য বলছে, গত বছর ৮৬ কন্যাসহ ১৪২ নারী দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে। তাদের মধ্যে ১৮ কন্যাসহ ২৩ জনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়।

৫ জন কন্যাসহ ৬ জন ধর্ষণের কারণে আত্মহত্যা পর্যন্ত করেছে। যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছে ১৮১ জন। উত্ত্যক্তকরণের শিকার হয়েছে ৪৫ জন। তাদের মধ্যে ৩৭ জন কন্যা। এর মধ্যে আত্মহত্যা করেছে ২ জন। শুধু রাস্তাঘাট কিংবা বাড়িতে নয়, বর্তমানে অনলাইনে কিংবা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে হয়রানির শিকার হচ্ছে অনেকে। গত বছর ১৯ কন্যাসহ ২৯ জন সাইবার অপরাধের শিকার হয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে কোনো ছবি দিলে মন্তব্যের ঘর ভরে যায় বাজে কথায়। ইনবক্সে নেতিবাচক মন্তব্য, আজেবাজে কথা এবং ইঙ্গিতপূর্ণ আচরণে অনেক নারীই ভোগেন মানসিক চাপে। সেখান থেকে উত্তরণে অনেকে বেছে নেন আত্মহত্যার পথ। আবার অনেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন সামাজিক জীবন থেকে।
গত ৫০ বছরে শিক্ষার হার বাড়লেও কিছু প্রথা আজও থেকে গেছে প্রচ্ছন্ন কিংবা প্রকটভাবে। যৌতুকের কারণে আজও নারীকে নির্যাতন করা হয়, মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে চলেছে। গত বছর যৌতুকের কারণে নির্যাতনের শিকার হয়েছে ৬৮ জন। বাল্যবিবাহের ঘটনা ঘটেছে ২০টি।
এই ধরনের ঘটনা ঘটা এবং এই নারীর প্রতি সহিংসতার নানান কারণ রয়েছে- সঠিক সময়ে সঠিক বিচার না করা, সমাজে বিচারের ঘাটতি থাকা, আইনগত নানান ধরনের বেখেয়ালি আচরণ, ভয়ে মুখ খুলতে না পারা, কঠোর শাসনের অভাব।

তবে এই সহিংসতা জন্য সবার আগে পরিবার থেকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। তারপরে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে বিষয়গুলো আরো ইতিবাচক হতে হবে।
হঠাৎ করেই কোন কিছু করার বা ঘটা সম্ভব নয়। তবে সময় লাগলেও সমস্যা সমাধান করতে হবে। সহিংসতা বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ