Skip to content

২৬শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ | বুধবার | ১২ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মানসিক সুস্থতায় যোগব্যায়াম 

যোগব্যায়াম শুধুমাত্র শারীরিক ফিটনেসের জন্যই নয়, এটি মানসিক সুস্থতার জন্যও এক অসাধারণ উপায়। আধুনিক জীবনের ব্যস্ততা, চাপ, এবং মানসিক উদ্বেগ আমাদের মনের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি কেবল ব্যক্তিগত জীবনে নয়, কর্মক্ষেত্র এবং সামাজিক সম্পর্কেও প্রভাব ফেলে। এই পরিস্থিতিতে যোগব্যায়াম হতে পারে মানসিক শান্তি ও সুস্থতার অন্যতম কার্যকর মাধ্যম। 

যোগব্যায়াম কীভাবে মানসিক সুস্থতায় ভূমিকা রাখে 

যোগব্যায়ামের মূল দর্শন মন, শরীর, এবং আত্মার সমন্বয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনের পথে এগিয়ে চলা। এতে শ্বাসপ্রশ্বাসের নিয়ন্ত্রণ, শারীরিক আসন, ধ্যান এবং মনোযোগের মাধ্যমে মানসিক চাপ কমিয়ে মনের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনা হয়। 

মানসিক চাপ কমায় 

যোগব্যায়াম মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ দূর করতে বিশেষভাবে কার্যকর। যোগের বিভিন্ন আসন এবং শ্বাসপ্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি করটিসল (স্ট্রেস হরমোন) কমিয়ে দেয়। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত যোগব্যায়াম করলে মন শান্ত থাকে এবং চাপ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। 

মনোযোগ বৃদ্ধি করে 

যোগব্যায়ামের মাধ্যমে মনোযোগ এবং ধ্যানক্ষমতা উন্নত হয়। ধ্যান ও শ্বাসের অনুশীলন মনকে বর্তমান মুহূর্তে স্থির রাখে এবং অপ্রয়োজনীয় চিন্তাভাবনা কমিয়ে দেয়। এটি মানসিক স্থিরতা বজায় রাখতে সহায়তা করে। 

হতাশা ও বিষণ্ণতা দূর করে 

যোগব্যায়াম বিষণ্ণতা এবং হতাশা দূর করার একটি প্রাকৃতিক উপায়। বিশেষত ধ্যান এবং শবাসন (মৃতদেহ আসন) মস্তিষ্কে সেরোটোনিনের মাত্রা বাড়িয়ে মন ভালো রাখতে সাহায্য করে। 

ঘুমের গুণগত মান উন্নত করে 

যোগব্যায়াম নিদ্রাহীনতা দূর করতে সহায়ক। নিয়মিত যোগব্যায়াম করলে মানসিক চাপ কমে, যা ঘুমের গুণমান বৃদ্ধি করে। যোগের ধ্যানমূলক অনুশীলন মস্তিষ্ককে শান্ত করে এবং দ্রুত ঘুমাতে সাহায্য করে। 

মানসিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখে 

যোগব্যায়ামের নিয়মিত চর্চা মানসিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখে। এটি আবেগ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং সহনশীলতা বাড়ায়। যেকোনো প্রতিকূল পরিস্থিতিতে শান্ত থাকার দক্ষতা যোগব্যায়ামের মাধ্যমে অর্জন করা সম্ভব। 

মানসিক সুস্থতায় কার্যকর যোগব্যায়ামের আসন ও পদ্ধতি 

ভ্রামরি প্রণায়াম (গুনগুন শ্বাস)

– উপকারিতা: মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমায়। 

– পদ্ধতি: একটি শান্ত স্থানে বসে চোখ বন্ধ করে গভীর শ্বাস নিয়ে গুনগুন শব্দ করতে হবে। এটি মানসিক শান্তি আনে। 

শবাসন (মৃতদেহ আসন)

– উপকারিতা: গভীর শিথিলতা এবং মানসিক প্রশান্তি প্রদান করে। 

– পদ্ধতি: পিঠের ওপর শুয়ে পুরো শরীর শিথিল অবস্থায় রাখুন এবং মস্তিষ্ককে মুক্ত রাখুন। 

বালাসন (শিশুর আসন) 

– উপকারিতা: মানসিক চাপ কমিয়ে মনকে পুনরুজ্জীবিত করে। 

– পদ্ধতি: হাঁটু মুড়ে সামনের দিকে ঝুঁকে হাত সামনে প্রসারিত করে শুয়ে থাকুন। 

ধ্যান (মেডিটেশন)

– উপকারিতা: মনোযোগ ও ধৈর্যশক্তি বাড়ায়। 

– পদ্ধতি: একটি শান্ত জায়গায় চোখ বন্ধ করে আরামদায়ক অবস্থায় বসে ধীরে ধীরে শ্বাসপ্রশ্বাসের প্রতি মনোযোগ দিন। 

নিয়মিত যোগব্যায়ামের প্রভাব 

মানসিক সুস্থতার জন্য যোগব্যায়াম একটি দৈনন্দিন অভ্যাসে পরিণত হলে জীবনযাত্রার গুণগত মান বৃদ্ধি পায়। এটি মানসিক চাপ কমায়, আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করে এবং একটি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলে। 

মানসিক সুস্থতায় যোগব্যায়াম একটি বিজ্ঞানসম্মত এবং প্রাকৃতিক উপায়। এটি মন এবং শরীরের গভীর সংযোগ তৈরি করে, যা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। যারা মানসিক চাপ, উদ্বেগ বা হতাশার শিকার, তাদের জন্য নিয়মিত যোগব্যায়াম হতে পারে মানসিক শান্তি ও সুস্থতার সেরা মাধ্যম। এখনই যোগব্যায়াম শুরু করুন, সুস্থ এবং সুখী জীবন যাপন করুন।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ