যে কারণে দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় থাকবে গাজর

গাজর একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণে ভরপুর সবজি। এটি ছোট-বড় সবাই কমবেশি খেয়ে থাকে। শীতকালের সবজি হলেও এখন সারা বছরই গাজর পাওয়া যায়। এটি একটি পুষ্টিকর সবজি। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ এবং অন্যান্য উপাদান রয়েছে। তবে অনেকেই হয়তো জানেন না, গাজর নিয়মিত খেলে আমাদের শরীরে কী কী সমস্যার সমাধান হতে পারে। গাজরে থাকা ভিটামিন, খনিজ ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই গাজর নিয়মিত খেলে যেসব উপকারীতা পাওয়া যাবে তা জানা প্রয়োজন।

গাজর মূলত বিটা-ক্যারোটিন সমৃদ্ধ একটি সবজি। এটি শরীরে গিয়ে ভিটামিন এ-তে রূপান্তরিত হয়। প্রতি ১০০ গ্রাম গাজরে থাকে—
- ক্যালরি: ৪১ kcal
- কার্বোহাইড্রেট: ৯.৬ গ্রাম
- প্রোটিন: ০.৯ গ্রাম
- ফাইবার: ২.৮ গ্রাম
- ভিটামিন A: ৮৩৪৬ IU (দৈনিক প্রয়োজনের ১৬৭%)
- ভিটামিন C: ৫.৯ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন K: ১৩.২ মাইক্রোগ্রাম
- পটাশিয়াম: ৩২০ মিলিগ্রাম
- ক্যালসিয়াম: ৩৩ মিলিগ্রাম
নিয়মিত গাজর খেলে এই সকল উপাদান স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ভুমিকা রাখে। গাজরে প্রচুর পরিমাণে বিটা-ক্যারোটিন থাকে যা শরীরে গিয়ে ভিটামিন এ-তে পরিণত হয়। ভিটামিন এ দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে এবং রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করে। এই বিটা-ক্যারোটিনের অভাবে চোখ শুষ্ক হয়ে যেতে পারে, দৃষ্টিশক্তি দুর্বল হতে পারে এবং রাতে দেখতে সমস্যা হতে পারে। গাজরে থাকা ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এটি শরীরকে বিভিন্ন ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ থেকে রক্ষা করে। ভিটামিন সি এর অভাবে শরীর সহজেই ঠান্ডা-সর্দি, ফ্লু এবং অন্যান্য সংক্রমণের শিকার হতে পারে। গাজরে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের কোষকে সুরক্ষা দেয় এবং বার্ধক্য প্রতিরোধ করে। ত্বকের উজ্জ্বলতা রক্ষা করতে নিয়মিত গাজর খাওয়া যায়।
গাজরে উচ্চমাত্রায় ফাইবার থাকে, যা হজম প্রক্রিয়া ভালো রাখে। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্য উন্নত করে। নিয়মিত গাজর খেলে হজমের সমস্যা দেখা দিবে না, পেটে গ্যাসের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হবে। গাজরে থাকা পটাশিয়াম ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে এবং হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখে। নিয়মিত গাজর খেলে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমতে পারে। ফলে যিনি নিয়মিত গাজর খান, তার হার্ট এটাক হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। গাজরে থাকা বিটা-ক্যারোটিন এবং অন্যান্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত গাজর খেলে ফুসফুস, স্তন ও কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে।
গাজর কাঁচা, রান্না করা বা জুস করে খাওয়া যায়। তবে কাঁচা গাজরে বেশি পুষ্টিগুণ থাকে। গাজর সালাদ, তরকারি, স্যুপ বা স্মুদি বানিয়ে খাওয়া যেতে পারে। কাঁচা গাজর খাওয়ার সময়ে অবশ্যই খোসা ছিলে খেতে হবে। গাজর বেশিক্ষণ রান্না করা যাবে না। গাজর দিয়ে তৈরি খাবার ঠান্ডা করে খেতে হবে। তবে গাজর অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া উচিত নয়। এতে শরীরে ভিটামিন এ-র মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। গাজর খেয়ে সূর্যের আলোতে গেলে ত্বক হলুদ হয়ে যেতে পারে। এটি সাময়িক সমস্যা।
গাজর শুধু স্বাদেই ভালো নয়, এটি আমাদের শরীরের জন্যও অত্যন্ত উপকারী। এটি নিয়মিত খেলে দৃষ্টিশক্তি ভালো থাকা, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যাওয়া, হজমের সমস্যা মুক্তি, হৃদরোগের ঝুঁকি কমা ও অন্যান্য গুরুতর শারীরিক সমস্যার সমাধান পাওয়া যায়। তাই প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় গাজর রাখা উচিৎ। এতে শরীর সুস্থ ও শক্তিশালী থাকে।