পিরিয়ড মিথ ও সত্য
মাসিক বা পিরিয়ড নারী জীবনের স্বাভাবিক একটি শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। অথচ শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে একে ঘিরে গড়ে উঠেছে নানা কুসংস্কার ও ভুল ধারণা। বিজ্ঞান ও আধুনিক চিকিৎসা যেখানে পিরিয়ডকে স্বাভাবিক বিষয় বলে ব্যাখ্যা করে, সেখানে সমাজের নানা স্তরে এখনও প্রচলিত রয়েছে অমূলক ভয়, নিষেধাজ্ঞা ও লজ্জা। এই ফিচারে আমরা পিরিয়ড সম্পর্কিত কিছু প্রচলিত মিথ ও তাদের বৈজ্ঞানিক সত্য উন্মোচন করব।

পিরিয়ডের সময় নারী অপবিত্র
অনেক সমাজে এখনও বিশ্বাস করা হয় যে, পিরিয়ডের সময় নারী অপবিত্র হয়ে যায় এবং মন্দির, রান্নাঘর বা কিছু নির্দিষ্ট জায়গায় প্রবেশ করতে পারে না। এটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও বৈজ্ঞানিকভাবে ভুল ধারণা। পিরিয়ড হলো জরায়ুর অভ্যন্তরীণ আবরণ (এন্ডোমেট্রিয়াম) স্বাভাবিকভাবে শরীর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার একটি প্রক্রিয়া। এতে শরীরে কোনো নোংরামি বা অপবিত্রতা তৈরি হয় না। এটি নারী প্রজনন স্বাস্থ্যের একটি স্বাভাবিক ও প্রয়োজনীয় অংশ।
পিরিয়ডের সময় শারীরিক কাজ করা উচিত নয়
অনেকে মনে করেন, পিরিয়ড চলাকালে শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম করা ক্ষতিকর। বাস্তবে, হালকা থেকে মাঝারি মাত্রার ব্যায়াম, যেমন হাঁটাহাঁটি, স্ট্রেচিং বা ইয়োগা, পিরিয়ডজনিত ব্যথা কমাতে সাহায্য করে এবং মুড ভালো রাখে। তবে খুব ভারী পরিশ্রমে ক্লান্তি আসতে পারে, তাই শরীরের সংকেত বুঝে চলা উচিত।
পিরিয়ডে ঠান্ডা খাবার খাওয়া ঠিক নয়
বহু মানুষ মনে করেন, পিরিয়ড চলাকালে দই, আইসক্রিম বা ঠান্ডা পানীয় খেলে রক্ত প্রবাহ কমে যেতে পারে কিংবা ব্যথা বেড়ে যেতে পারে। কিন্তু বৈজ্ঞানিকভাবে এর কোনো ভিত্তি নেই। বরং পুষ্টিকর খাবার, পর্যাপ্ত পানি ও আয়রন সমৃদ্ধ খাবার (যেমন পালং শাক, ডাল, বাদাম) খেলে শরীর সুস্থ থাকে এবং দুর্বলতা কমে।
পিরিয়ডে চুল ধোয়া বা গোসল করা উচিত নয়
অনেক সংস্কৃতিতে প্রচলিত আছে যে, পিরিয়ডের সময় গোসল করা বা চুল ধোয়া শরীরের জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু বাস্তবে উল্টোটা সত্য—গোসল করলে শরীর পরিষ্কার থাকে, রক্ত চলাচল স্বাভাবিক হয় এবং পিরিয়ডজনিত অস্বস্তি কমে। তাই নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

পিরিয়ডে স্যানিটারি ন্যাপকিন ছাড়া অন্য কিছু ব্যবহার করা যায় না
স্যানিটারি ন্যাপকিন জনপ্রিয় হলেও এটি একমাত্র সমাধান নয়। মেনস্ট্রুয়াল কাপ, ট্যাম্পন বা পিরিয়ড প্যান্টির মতো বিকল্পও রয়েছে, যা অনেকের জন্য আরামদায়ক ও পরিবেশবান্ধব। তবে যা-ই ব্যবহার করুন না কেন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
পিরিয়ড কোনো রোগ নয়, বরং এটি নারী স্বাস্থ্যের স্বাভাবিক একটি অংশ। সমাজে প্রচলিত ভুল ধারণাগুলোকে দূর করে সঠিক জ্ঞান ছড়িয়ে দেওয়াই আমাদের দায়িত্ব। লজ্জা ও সংকোচ নয়, বরং সচেতনতা ও বিজ্ঞানসম্মত তথ্যই পারে নারীদের জীবনে স্বস্তি ও সুস্থতা নিশ্চিত করতে। তাই আসুন, পিরিয়ড নিয়ে কুসংস্কার ভেঙে সত্যকে আপন করে নেই!