Skip to content

এলো প্রাণের বইমেলা


বছর ঘুরে আবার এলো অমর একুশে গ্রন্থমেলা। এ যেনো বাঙালির প্রাণের মেলা; পাঠক, লেখক ও প্রকাশকদের এক মহামিলন মেলা। আমাদের আবেগি মনের অনুভূতি আদান-প্রদানের মেলা অমর একুশে বইমেলা। এই মেলাকে কেন্দ্র করেই প্রকাশ হয় শতকরা প্রায় নব্বই ভাগ সৃজনশীল বই। শুধু বাংলা ভাষাকেন্দ্রিক একটি মেলার আয়োজন এবং ভাষার মাসকে কেন্দ্র করে লম্বা সময় ধরে ভাষাকেন্দ্রিক এই মেলা চলাটা অনেক বড় ব্যাপার।

বাঙালির ভাষা আন্দোলনের প্রভাব বহুমাত্রিক। এর শুরুটা হয়েছিল বেদনাহত হৃদয় থেকে, শেষ হয়েছিল বাঙালির আত্মপরিচয়ের নিজস্ব ভূমির স্বাধীনতা লাভের মধ্য দিয়ে। ভাষা শহীদদের স্মৃতিকে জাগ্রত রাখার লক্ষ্যেভমাসব্যাপী বইমেলা আমাদের সাংস্কৃতিক আত্মপরিচয়ের এক প্রকাশ।

বাংলা একাডেমি চত্বরে বইমেলা শুরু হয়েছিল দেশের প্রকাশনা শিল্পের পথিকৃৎ চিত্তরঞ্জন সাহার হাত ধরে ১৯৭২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি। তখন যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ। বর্তমান বাংলা একাডেমি তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বর্ধমান হাউস প্রাঙ্গণের বটতলায় বই নিয়ে এসেছিলেন চিত্তরঞ্জন সাহা। অবশ্য সেসময় এখনকার মতো সাজানো-গোছানো স্টল ও পরিবেশ তখন ছিল না। চটের উপর রেখে বিক্রি করা হতো বই। সে বছর বাংলা একাডেমিও একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে হ্রাসকৃত মূল্যে বই বিক্রি করেছিল। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত চিত্তরঞ্জন সাহা নিজে চালিয়ে যান এ বইমেলা। চিত্তরঞ্জন সাহার আগ্রহ এবং মানুষের ভালোবাসার কারণে বাংলা একাডেমি এই উদ্যোগকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। ১৯৮৪ সালে এসে গ্রন্থমেলার জন্য বিধিবদ্ধ নীতিমালা প্রণীত হয় এবং গ্রন্থমেলার নাম হয় ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’। সেই থেকে এ গ্রন্থমেলা প্রতি বছর প্রায় একই আঙ্গিকে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।

এ বছরও নানা রঙে নানা ঢঙে সেজে উঠে স্টল-প্যাভিলিয়নে ছেয়ে গেছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মেলা প্রাঙ্গণ। মেলার উদ্বোধন করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস। মেলার এবারের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান: নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ’।

এবারের মেলায় প্যাভিলিয়নের ধরন বদলানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলা একাডেমি। নতুন ধরন অনুযায়ী মেলায় প্যাভিলিয়ন দর্শনার্থীদের প্রবেশ ও বহির্গমন ব্যবস্থা রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বাংলা একাডেমির তথ্য মতে, এবার মেলায় অংশ নিচ্ছে প্রায় ৬০০টি প্রতিষ্ঠান। মেলায় স্টল ভাড়া নেওয়া হচ্ছে এক ইউনিট ১৫ হাজার ১৮০ টাকা, দুই ইউনিট ৩১ হাজার ৬২৫, তিন ইউনিট ৫৯ হাজার ৮০০, চার ইউনিট ৮৩ হাজার ৪৯০ ও প্যাভিলিয়ন ভাড়া (২০/২০) প্রায় দেড় লাখ টাকা, (২৪/২৪) এক লাখ ৮৬ হাজার টাকা এবং মিডিয়া ও স্বাস্থ্য সেল ৩ হাজার ৪৫০ টাকা করা হয়েছে।

বইমেলা সাপ্তাহিক ছুটির দিন ও একুশে ফেব্রুয়ারি ছাড়া প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে। ছুটির দিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। শুক্রবার দুপুর ১টা থেকে বিকাল ৩টা ও শনিবার দুপুর ১টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত বিরতি থাকবে। শুক্র ও শনিবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত শিশুপ্রহর থাকবে। একুশে ফেব্রুয়ারি প্রথম প্রহর অর্থাৎ সকাল ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত বইমেলা সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। দুপুর ১টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত বিরতি থাকবে।

মেলার নীতিমালায় বলা হয়েছে—রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ ও ২০২৪-এর গণঅভ্যুত্থানবিরোধী, যেকোনো জাতিসত্তাবিরোধী, অশ্লীল, রুচিগর্হিত, শিষ্টাচারবিরোধী, সাম্প্রদায়িক, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে এমন বা জননিরাপত্তার জন্য বা অন্য কোনো কারণে বইমেলার পক্ষে ক্ষতিকর কোনো বই বা পত্রিকা মেলায় বিক্রয়, প্রচার ও প্রদর্শন করা যাবে না।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ