নির্যাতনের শিকার নারীদের বেশিরভাগই বিচার চাইতে ভয় পান
২০২৪ সালকে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে উল্লেখ করা হলেও নারীদের জীবনে এর প্রভাব খুব একটা ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারেনি। জুলাইয়ের গণ–অভ্যুত্থান রাজনৈতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনেছে, কিন্তু নারীর প্রতি সহিংসতা, সম্পত্তিতে বৈষম্য, অভিভাবকত্ব ও বিবাহবিচ্ছেদে সমান অধিকার নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি।
আজ সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে ‘সর্বজনকথা’ আয়োজিত দিনব্যাপী এক সেমিনারে বক্তারা এই বিষয়গুলো তুলে ধরেন। ‘স্বৈরতন্ত্র থেকে গণতন্ত্রের পথে: বৈষম্যহীন বাংলাদেশের সন্ধানে’ শীর্ষক এই সেমিনারে লিঙ্গীয় বৈষম্যের নানা দিক নিয়ে আলোচনা হয়।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মির্জা তাসলিমা সুলতানা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা নারীর রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার ওপর জোর দেন। মির্জা তাসলিমা সুলতানা বলেন, আন্দোলনে তরুণীদের উল্লেখযোগ্য অংশগ্রহণ থাকলেও নেতৃত্বের পর্যায়ে তাঁরা জায়গা ধরে রাখতে পারেননি। তিনি বলেন, রাজনৈতিক কাঠামো পিতৃতান্ত্রিক সুবিধা নিশ্চিত করতে গড়ে উঠেছে। নেতৃত্বে টিকে থাকতে হলে নারীদের নিজেদের জায়গা তৈরি করতে হবে।
অধ্যাপক সামিনা লুৎফা বলেন, ২০২৪ সালের গণ–অভ্যুত্থান নারীর জীবনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে পারেনি। নারীদের প্রতি সহিংসতা বন্ধ হয়নি, বরং অধিকাংশ নারী বিচার চাইতে ভয় পান পারিবারিক বাধা ও সামাজিক সম্মানহানির ভয়ে। শ্রমবাজারে নারীর অংশগ্রহণ বাড়লেও পিতৃতান্ত্রিক সংস্কৃতি এখনো তাঁদের বাঁধাগ্রস্ত করছে। তিনি রাজনৈতিক দলগুলোতে ৩৩ শতাংশ নারী নেতৃত্ব নিশ্চিত করার পাশাপাশি নারীদের আরও সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, যারা নারী নেতৃত্বকে সামনে আনবে না, তাদের ভোট দেওয়া থেকে নারীদের বিরত থাকা উচিত।
একই সেমিনারে ‘জাতিগত সংকটের সমাধান কোন পথে?’ পর্বে বক্তব্য দেন দৃক–এর গবেষক রেং ইয়ং ম্রো এবং মাদল শিল্পী আস্তনী রেমা। তাঁরা বলেন, মুক্তিযুদ্ধে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার ভূমিকা থাকলেও স্বাধীনতার পর তাঁদের অস্তিত্ব সংবিধানে অস্বীকার করা হয়েছে। রেং ইয়ং ম্রো বলেন, জাতিগত বৈচিত্র্যকে অস্বীকার করার প্রবণতা থেকেই সংকট সৃষ্টি হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, এনসিটিবি কর্তৃক পাঠ্যপুস্তকের অন্তর্ভুক্তির গ্রাফিতি বাদ দেওয়ার প্রতিবাদে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালানো হয়।
শিল্পী আস্তনী রেমা বলেন, সংবিধানে আদিবাসীদের স্বীকৃতি আজও হয়নি। বৈচিত্র্যকে স্বীকার করে নেওয়াই এই সংকট সমাধানের মূল উপায়। তিনি বলেন, বৈচিত্র্যের সৌন্দর্য উপলব্ধি করতে সবার মধ্যে উদার দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলতে হবে।
সেমিনারের সভাপতিত্ব করেন ‘সর্বজনকথা’র সম্পাদক আনু মুহাম্মদ, আর সঞ্চালনা করেন গবেষক মাহতাব উদ্দীন আহমেদ এবং সংগীতশিল্পী বীথি ঘোষ।