বয়সকে জয় করে টেপাপুতুলের ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন শোভা রানী
শোভা রানী পালের জন্ম টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে। পাল সম্প্রদায়ের সন্তান তিনি। ছোটবেলা থেকেই পরিবারের মাটির কাজের সঙ্গে পরিচিত। বাবা বানাতেন মাটির হাঁড়ি-পাতিল, আর মা বানাতেন টেপাপুতুল। মায়ের কাছ থেকেই শিখেছেন এই শিল্প। পরে নিজে নিজেই শিখে নেন হাতি-ঘোড়া বানানো। বৈশাখী মেলা, রাসমেলা, আর চড়ক মেলায় বাবার সঙ্গে মাটির পণ্য নিয়ে যেতেন।
১৬ বছর বয়সে দেলদুয়ারের গোমজানী গ্রামে বিয়ে হয়ে আসেন। বিয়ের কয়েক বছর পর স্বামী গৌর পাল মারা গেলে সংসারের সব ভার এসে পড়ে শোভা রানীর ওপর। চার সন্তান নিয়ে কঠিন সময় পার করতে হয়েছে। তিনি পুতুল বানিয়ে বড় ছেলের হাতে তুলে দিতেন বিক্রির জন্য। সেই আয়েই চলত সংসার।
আজও ৭০ বছর বয়সেও তিনি এই কাজ ছাড়েননি। ছোট ছেলে গোবিন্দ পালের সঙ্গে থাকেন। ছেলে টয়লেটের জন্য পাট তৈরি করে, আর তিনি ফাঁকে বানান পুতুল, পাখি, হাতি, ঘোড়া। এক দিনে ১০টা পুতুল বানাতে পারেন।
শোভা রানী বলেন, “মাটি আমাদের সব। এই কাজ আমার আনন্দ দেয়।” গোমজানীর পালপাড়ায় এখনো ৩০ পরিবার মাটির কাজের সঙ্গে যুক্ত। তবে সময়ের সঙ্গে অনেকেই পেশা পরিবর্তন করেছেন।
শোভা রানী এখন চারুকলার মেলায় পুতুল নিয়ে আসেন। এখানেই তিনি সবচেয়ে বেশি মূল্যায়ন পান। এবার মেলায় তিনি পনেরো শ টেপাপুতুল নিয়ে এসেছিলেন, যা ১০ টাকা করে বিক্রি হয়েছে। বড় পুতুল বিক্রি করেছেন ১৫০-২০০ টাকায়।
বয়সের ভারে শরীর দুর্বল, বাঁ চোখে দেখা যায় কম। তবু মেলায় আসার জন্য ছেলের কাছে জোরাজুরি করে অনুমতি নিয়েছেন। মেলার শেষ দিনে শোভা রানী বললেন, “এবার আসতে পেরেছি। আগামী বছর আসতে পারব তো?”
সংগ্রাম আর শিল্পের প্রতি নিবেদনের এক অনন্য উদাহরণ শোভা রানী পাল। তাঁর গল্প টিকে থাকবে আমাদের মাটির শিল্পের ইতিহাসে।