শীতে পা ফাটলে কী করবেন
শীত মানুষের জন্য এটা আনন্দকর মৌসুম হলেও শীতের সময় শরীরে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। শরীরের সাথে আমাদের ত্বকেও নানা সমস্যা দেখা দেয়। এর মধ্যে অন্যতম হলো পা ফাটা। এটি শুধু অস্বস্তিকর নয়মবরং সঠিক যত্ন না নিলে পায়ের ফাটল থেকে ইনফেকশন হতে পারে। তাই শীতকালে পায়ের সঠিক যত্ন নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। আসুন জেনে নেয়া যাক পা ফাটার কারণ, প্রতিকার এবং পায়ের যত্নের জন্য কার্যকর উপায়গুলো।
পা ফাটার কারণ
শীতে বাতাসের আর্দ্রতা কমে যায়, যার ফলে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। এছাড়া, কয়েকটি বিশেষ কারণ পা ফাটার ঝুঁকি বাড়ায়।ত্বকের শুষ্কতা নিয়মিত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার না করলে পায়ের চামড়া শুষ্ক হয়ে ফেটে যেতে পারে।অতিরিক্ত গরম পানিতে পা ভেজানো শীতকালে আরামদায়ক হলেও এটি ত্বককে আরো শুষ্ক করে তোলে।শক্ত মাটির বা রুক্ষ পৃষ্ঠে খোলা পায়ে হাঁটা কিংবা আরামদায়ক জুতা না পরার কারণে পা ফাটার সমস্যা বাড়তে পারে। স্বাস্থ্যগত সমস্যা কোন সমস্যা যেমন ডায়াবেটিস, থাইরয়েডের সমস্যা বা একজিমার মতো রোগ থাকলে ত্বকের শুষ্কতা বাড়ে।পায়ের সঠিক পরিষ্কার ও পরিচর্যার অভাবেও পা ফাটতে পারে।
পা ফাটার ঘরোয়া সমাধান
পা ফাটলে ঘরোয়া উপায়ে সহজেই এটি নিরাময় করা সম্ভব। নিচে কয়েকটি কার্যকর সমাধান দেওয়া হলো:
গরম পানিতে পা ভেজানো এবং স্ক্রাবিং করলে পায়ের মৃত চামড়া দূর করতে এটি অত্যন্ত কার্যকর। হালকা গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে পা ১০-১৫ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন।এরপর পিউমিস স্টোন বা স্ক্রাবার দিয়ে পায়ের মৃত চামড়া ঘষে তুলুন।
পরিষ্কার করার পর পায়ে ময়েশ্চারাইজার বা পেট্রোলিয়াম জেলি লাগান। নারকেল তেল বা অলিভ অয়েল ত্বককে গভীর থেকে ময়েশ্চারাইজ করে। রাতে ঘুমানোর আগে পায়ে তেল ম্যাসাজ করুন এবং মোজা পরে ঘুমান।এটি পায়ের শুষ্কতা দূর করে ফাটাভাব কমাতে সাহায্য করে।মধু প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান সমৃদ্ধ।এক বালতি হালকা গরম পানিতে ২-৩ টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে নিন।
এতে পা ভিজিয়ে রাখুন ১৫-২০ মিনিট।এটি ত্বকের শুষ্কতা কমিয়ে পা নরম করবে।
অ্যালোভেরা ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে এবং পায়ের ফাটা অংশ দ্রুত সারিয়ে তোলে।ফ্রেশ অ্যালোভেরা জেল পায়ে লাগান।রাতে এটি ব্যবহার করে মোজা পরে ঘুমালে ভালো ফল পাওয়া যায়।
পাকা কলা ত্বকের জন্য একটি প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার। একটি পাকা কলা চটকে পায়ের ফাটা অংশে লাগান।১৫-২০ মিনিট পরে ধুয়ে ফেলুন।এটি নিয়মিত ব্যবহার করলে পায়ের শুষ্কতা অনেকটাই কমে যাবে।
পা ফাটা প্রতিরোধে করণীয়
শীতে পা ফাটা প্রতিরোধে কিছু সহজ পদক্ষেপ মেনে চললে এই সমস্যাকে এড়ানো সম্ভব।
পায়ের সঠিক যত্ন
প্রতিদিন পা ধুয়ে পরিষ্কার রাখুন এবং ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। পায়ের তলায় মৃত চামড়া জমতে দিলে তা ফাটার কারণ হতে পারে।
আরামদায়ক জুতা ব্যবহার
শীতকালে খোলা জুতা বা স্যান্ডেল এড়িয়ে চলুন। নরম এবং আরামদায়ক জুতা ব্যবহার করুন যা পায়ের তলাকে আর্দ্র রাখবে।
পর্যাপ্ত পানি পান করুন
শীতকালে অনেকেই কম পানি পান করেন, যা শরীর এবং ত্বকের শুষ্কতার অন্যতম কারণ। প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন।
পুষ্টিকর খাবার খান
ত্বক সুস্থ রাখার জন্য ভিটামিন এ, ই এবং সি সমৃদ্ধ খাবার খান। গাজর, কমলা, বাদাম, এবং মাছ আপনার খাদ্য তালিকায় রাখুন।
অতিরিক্ত গরম পানি এড়িয়ে চলুন
গরম পানিতে গোসল বা পা ভেজানোর সময় পানি খুব বেশি গরম যেন না হয়। এটি ত্বককে আরো শুষ্ক করে তোলে।
চিকিৎসকের পরামর্শ প্রয়োজন কবে?
যদি পা ফাটার কারণে ব্যথা, রক্তপাত বা ইনফেকশনের লক্ষণ দেখা দেয়, তবে দেরি না করে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন। বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে এটি অবহেলা করা উচিত নয়।
শীতে পা ফাটার সমস্যা অস্বস্তিকর হলেও সঠিক যত্ন ও নিয়মিত পরিচর্যার মাধ্যমে এটি সহজেই এড়ানো সম্ভব। ঘরোয়া প্রতিকার ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা মেনে চললে আপনার পা থাকবে নরম ও মসৃণ। সঠিক জুতা পরুন, পায়ের যত্ন নিন, এবং ত্বক আর্দ্র রাখতে সবসময় ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। নিয়মিত এই অভ্যাসগুলো মেনে চললে শীতকালে পা ফাটার সমস্যা আর কখনোই আপনাকে বিরক্ত করবে না।