কুটিরশিল্পে নারী ও অর্থনৈতিক বিকাশ
সমাজ বাস্তবতার কারণে এ অঞ্চলের নারীদের নানা প্রতিকূলতার মধ্যদিয়ে দিন পার করতে হয়েছে। পুরুষতান্ত্রিক ও রক্ষণশীল সমাজে নানা কুসংস্কার, নিয়মকানুন ও প্রতিবন্ধকতায় তাদের জীবন ছিল কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত।
সেই অন্ধকার সময় থেকে আলোর পথে হাঁটা শুরু করেছে বাঙালি নারী। বাঙালি নারী তার মেধা-মনন ও প্রতিভার সমন্বয় ঘটিয়ে নানা প্রতিকূলতার মধ্য থেকেও সৃজনশীলতার সর্বোচ্চ পরিচয় দিয়েছে। অন্দর মহলে থেকেও নানা ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছেন তারা। এতে যেমন সচ্ছলতা ও আর্থিক নিরাপত্তা এসেছে তেমনি সমাজে মান-মর্যাদাও বেড়েছে নারীর।
ঠোঙা তৈরি, চুন তৈরি, বাঁশ ও বেত শিল্প, তাঁত বোনা, জাল বোনা, ছোবড়া, মাদুর বোনাসহ নানা ক্ষুদ্র শিল্পে আবহমানকাল থেকেই অবদান রাখছেন নারীরা। এছাড়াও নকশিকাঁথা তৈরি, কাচ, মোম, শোলা ইত্যাদি দিয়ে বিভিন্ন শৌখিন সামগ্রী তৈরির শিল্পে, ব্লক বাটিক, টাই ডাই ইত্যাদি শিল্পে বাঙালি নারীদের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। নারীর প্রতি শত বছর ধরে চলে আসা বঞ্চনার অবসান ঘটিয়ে, অবহেলিত নারীদের নতুন জীবনের সন্ধান দিয়েছে কুটিরশিল্প। একইসঙ্গে বাঙালির নিজস্বতা ধারণ তাকে করে বিশ্ব মঞ্চে তুলে ধরেছে কুটিরশিল্প।
অর্থনীতির সমীক্ষায় জানা যায়, দেশে কর্মজীবী মানুষের প্রায় ২০ শতাংশ মানুষ কুটিরশিল্পের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এর মধ্যে সিংহভাগই নারী। কুটিরশিল্পের ওপর নির্ভর করে লাখ লাখ নারী তাদের জীবননির্বাহ করছে। এসব লাখ লাখ নারীর ওপর নির্ভর করছে আরও অসংখ্য জীবন।
নব্বইয়ের দশক থেকে ‘বুটিক’ শিল্পের মাধ্যমে নবজাগরণ এসেছে কুটির শিল্পের। এখনো বহুগুণে সম্পৃক্ততা বেড়েছে নারীর। কুটির শিল্পে নিয়োজিত অনেক নারী তাদের ব্যবসায়িক সাফল্যের কারণে কারখানা বর্ধিত করে ক্ষুদ্র শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছেন। আর সাম্প্রতিক কালে ই-কমার্স বা অনলাইনভিত্তিক নারী উদ্যোক্তা নতুনভাবে পথ দেখাচ্ছে। অনলাইনে এখন বস্ত্র, গয়না, সাংসারিক পণ্য, শিশুখাদ্য, প্রসাধনসামগ্রী থেকে শুরু করে শিক্ষণীয় বিষয়গুলোও যুক্ত হয়েছে।
দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে এসব কুটিরশিল্প। এখন বেশ কিছু হস্ত ও কুটির শিল্পজাত পণ্য দেশের সীমা ছাড়িয়ে রপ্তানি হচ্ছে বিদেশেও। যার ফলে শুধু কুটির শিল্পনির্ভর পরিবারগুলোই আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে না; বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে দেশ। সমৃদ্ধ হচ্ছে দেশের অর্থনীতি। কর্মসংস্থান হচ্ছে গ্রামীণ দরিদ্র নারীর, সঙ্গে কমছে বেকারত্বের হার।
জাতীয় স্বার্থেই সংস্কৃতির ধারক হিসেবে ঐতিহ্যের উত্তরাধিকার প্রতিটি দেশে কুটিরশিল্পকে সংরক্ষণ করা হয়। তাই কুটিরশিল্প উন্নয়নের জন্য ব্যক্তিগত কিংবা দলগত এবং সরকারি উদ্যোগ বাড়ানো প্রয়োজন। সঙ্গে এ শিল্পের প্রধান কারিগর—নারীদের সম্পৃক্ততা আরও বাড়াতে সমন্বিত ব্যবস্থা নিতে হবে। এতে জাতীয় উন্নয়ন ঘটবে, প্রবৃদ্ধি হবে অর্থনৈতিক সূচকের।
- -শাকিরুল আলম শাকিল