তরুণ হৃদয়ে জাগ্রত ৭১
বাঙালি জাতির হাজার বছরের ইতিহাসের গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় হচ্ছে একাত্তরের মক্তিযুদ্ধ। যত দিন বাঙালি জাতি থাকবে, তত দিন এই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পঠিত হবে অবিস্মরণীয় এক গৌরবগাথা হিসেবে।
এটি ভুলে গেলে চলবে না মুক্তিযুদ্ধ আমাদের একটি আত্মমর্যাদা সম্পন্ন জাতি হিসেবে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বিশ্বদরবারে মাথা উঁচু করে চলার উজ্জীবনী শক্তি হিসেবে কাজ করে। তাই মুক্তিযুদ্ধের সচেতনায় আমাদের সন্তান অর্থাৎ তরুণ প্রজন্মকে জাগ্রত করতে হবে।
নতুন প্রজন্মের কাছে স্বাধীনতা দেশপ্রেম ও মুক্তিযুদ্ধের সঠিক যৌক্তিকতাকে তুলে ধরে এর চেতনাকে তাদের হৃদয়ে ধারণ করানোর মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাসের চর্চা করা জরুরী।
আর মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস নতুন প্রজন্মকে জানানোর ক্ষেত্রে তাদের পরিবার সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। পরিবার হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার প্রধান জায়গা।
কারণ পরিবারের কাছে একটি শিশু বা কিশোর প্রাথমিক জ্ঞান লাভ করে। পরিবার যদি তাকে যুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানায়, তাহলে কোন ধরনের বিভ্রান্ত না হয়ে বিকৃত ইতিহাস জানা থেকে রক্ষা পাবে।
মুক্তিযুদ্ধের আত্মত্যাগ ও বীরত্বের ইতিহাসে আমাদের সন্তান কিংবা নতুন প্রজন্ম যে শুধুমাত্র দেশের জন্য ভালোবাসা আর মমতা অনুভব করবে তা নয়, এই দেশ, এই মানুষের কথা ভেবে গৌরব বোধ করবে।
মুক্তিযুদ্ধ’ শব্দির সঙ্গে জড়িয়ে আছে রাতের অন্ধকারে পাক বাহিনীদের নিরীহ মানুষের ওপর চালানো নির্যাতন, চারপাশে ভয় আর আর্তনাদ, নিরীহ শিশু আর মা বোনের ওপর অত্যাচার।
সেই অত্যাচার থেকে সবাইকে মুক্তি দিতেই দেশের সাহসী সন্তানেরা জীবন বাজি রেখে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল যুদ্ধ করতে।নয় মাস যুদ্ধ করে তিরিশ লক্ষ শহীদের প্রাণের বিনিময়ে অগনিত নারীর সম্ভ্রম ও ত্যাগের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি স্বাধীন এ বাংলাদেশ।
আর সেই গৌরবময় ইতিহাস সঠিক ভাবে জেনে ও চর্চার মাধ্যমে দেশকে ভালোবাসা নতুন প্রজন্মের দায়িত্ব।
বাঙালির ইতিহাস মানেই শোষণ আর অধিকার থেকে বঞ্চনার ইতিহাস। না পাওয়ার বেদনায় বাঙালি জাতিকে চিরকালই বুকে পাথর চাপা দিতে হয়েছে।
বাঙালি জাতি জন্ম থেকেই কখনো মোগল-পাঠান, কখনো ব্রিটিশ, কখনো পাকিস্তানিদের জাঁতাকলে পিষ্ট হয়েছে। আজকের নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করার জন্য দরকার মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তাদের সামনে উপস্থাপন করা।
মুক্তিযোদ্ধারা জীবনকে তুচ্ছ করে, নিজেদের উৎসর্গ করে মাতৃভূমিকে মুক্ত করে স্বাধীন বাংলাদেশের বিজয় পতাকা উড়িয়েছে তা নতুন প্রজন্মকে জানাতে হবে।
অন্যায়ভাব শোষণ ও শাষনের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতিকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করার জন্য যত ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া দরকার সবই নিয়েছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এরই ধারাবাহিকতায় তারা শ্রমজীবী, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিকসহ এ দেশের সূর্যসন্তানদের হত্যা করেছিল।
তাই বাঙালি জাতি কিভাবে তাদের পরাজিত করেছিল, তার যথাযথ ইতিহাস নতুন প্রজন্ম, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের সামনে তুলে ধরার দায়িত্ব ও কর্তব্য সবার।
সেদিক থেকে পরিবারের উচিত তাদের সন্তানকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত করা। এক্ষেত্রে তাদের সঙ্গে আলোচনার পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস মুলক গল্প, উপন্যাস ও কবিতা পড়তে উৎসাহীত করতে হবে।
এছাড়া নাট্যকারদের উচিত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক নাটক লেখা, কথাসাহিত্যিকদের উচিত মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অনেকবেশি গল্প-উপন্যাস লেখা, কবিদের উচিত দুঃসাহসী মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা নিয়ে কবিতা লেখা, গবেষকদের উচিত গবেষণা করে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস উন্মোচন করা। প্রকাশকদের উচিত মুক্তিযুদ্ধের ওপর প্রচুর বই প্রকাশ করা। এতে তরুণপ্রজন্ম দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হবে এবং দেশকে ভালোবাসতে শিখবে।
চলচ্চিত্রকারদের উচিত মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসনির্ভর সিনেমা নির্মাণ করা, এতে নতুন প্রজন্মকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করবে।
এবং আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম বুক ফুলিয়ে বলতে পারবে সার্থক জন্ম আমার জন্মেছি এই দেশে।