শীতে শিশুকে প্রাণবন্ত ও উচ্ছল রাখতে
শীতকাল বছরের একটি সুন্দর সময়। তবু ঠান্ডা আবহাওয়া শিশুদের জন্য অনেক চ্যালেঞ্জ বয়ে আনে। ঠান্ডাজনিত অসুখ থেকে শুরু করে শরীরের আর্দ্রতা হ্রাস, শিশুরা এ সময় নানান সমস্যায় পড়তে পারে। কিন্তু সঠিক যত্ন ও কিছু অভ্যাস গড়ে তুললে শীতেও শিশু প্রাণবন্ত ও উচ্ছল থাকতে পারে। আসুন জেনে নিই কীভাবে।
সঠিক পোশাক নির্বাচন
শীতে শিশুর শরীর উষ্ণ রাখা সবচেয়ে জরুরি। ঠান্ডা থেকে বাঁচার জন্য শিশুকে সঠিক পোশাক পরানো উচিত। তবে পোশাক নির্বাচন করার সময় কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে:
লেয়ারিং-এর কৌশল হলো একাধিক স্তরের পাতলা পোশাক শিশুকে উষ্ণ রাখতে সাহায্য করে। এতে শরীরের তাপ ধরে রাখা সহজ হয়। শরীরের সবচেয়ে বেশি তাপ হারায় মাথা ও পায়ের মাধ্যমে। তাই উল বা তুলার টুপি ও মোজা ব্যবহার করুন। শিশুর পোশাক অবশ্যই ত্বকের জন্য আরামদায়ক হতে হবে। তুলা বা উল জাতীয় পোশাক ভালো। সিন্থেটিক কাপড় এড়িয়ে চলুন।
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস
শীতে সঠিক খাদ্যাভ্যাস শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। শীতে শিশুদের জন্য স্যুপ, খিচুড়ি, বা গরম দুধের মতো খাবার উপকারী। এগুলো শরীরকে উষ্ণ রাখে। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল কমলালেবু, আমলকী, ও লেবুর মতো ফল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। বাদাম, খেজুর, মধু ইত্যাদি শিশুকে শক্তি যোগায় এবং উষ্ণ রাখে।
সঠিক স্কিনকেয়ার
শীতকালে শিশুর ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। তাই সঠিক স্কিনকেয়ার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন শিশুর ত্বকে শিশুবান্ধব ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। সরিষার তেল বা নারকেল তেল দিয়ে শিশুর ত্বকে নিয়মিত ম্যাসাজ করুন। এটি রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় এবং ত্বক উজ্জ্বল রাখে। শীতকালে খুব বেশি গরম পানি ব্যবহার না করে হালকা গরম পানিতে শিশুকে গোসল করান। এতে ত্বকের শুষ্কতা কমবে।
শারীরিক সক্রিয়তা
ঠান্ডার জন্য অনেক অভিভাবক শিশুকে বাড়ির বাইরে যেতে দেন না। কিন্তু শারীরিক সক্রিয়তা শিশুর মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।যদি বাইরে যাওয়া সম্ভব না হয়, তবে ঘরের মধ্যে খেলাধুলার জন্য জায়গা তৈরি করুন। বল খেলা, হালকা দড়ি লাফানো ইত্যাদি হতে পারে মজার বিকল্প। সকালে শিশুকে রোদে নিয়ে যান। এতে ভিটামিন ডি তৈরি হয় যা হাড়ের গঠনে সাহায্য করে। ছুটির দিনে শিশুকে কাছাকাছি কোনো পার্কে নিয়ে যান। ঠান্ডা আবহাওয়াতেও কিছু সময় প্রকৃতির মাঝে কাটানো শিশুর জন্য আনন্দদায়ক।
পর্যাপ্ত পানি পান
শীতে শিশু কম পানি পান করতে চায়। কিন্তু শরীরকে আর্দ্র রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।সাধারণ পানির পরিবর্তে গরম লেবু পানি বা ভেষজ চা দিতে পারেন। কমলালেবু, শসার টুকরো দিয়ে পানিকে আকর্ষণীয় করে তুলুন। নির্দিষ্ট সময় পরপর শিশুকে পানি পান করানোর অভ্যাস গড়ে তুলুন।
নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা
শীতে শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক সময় কমে যায়। তাই কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। শীত শুরুর আগে শিশুকে ফ্লু ভ্যাকসিন দিয়ে রাখুন। শিশু যদি নিয়মিত সর্দি-কাশিতে ভোগে, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। ঘুম শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। তাই শিশুকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে দিন।
মানসিক যত্ন
শীতকাল শুধু শারীরিক নয়, মানসিক স্বাস্থ্যের দিক থেকেও চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। দিনের আলো কমে যাওয়া, বাইরে খেলতে না যাওয়ার কারণে শিশুর মেজাজ খিটখিটে হতে পারে।
রাতে শোবার আগে মজার গল্প পড়ুন। এটি শিশুর মানসিক বিকাশে সাহায্য করে। আর্ট বা হস্তশিল্পের মতো কার্যক্রম শিশুকে ব্যস্ত রাখে। পরিবারের সবাই একসঙ্গে খেলা বা আলোচনা করলে শিশুর মন ভালো থাকে।
শীতকাল শিশুদের জন্য যেমন চ্যালেঞ্জিং, তেমনি আনন্দদায়ক হতে পারে। সঠিক যত্ন ও দৃষ্টিভঙ্গি শিশুকে শুধু সুস্থই রাখবে না, বরং শীতকালকে উপভোগ্য করে তুলবে। অভিভাবকদের উচিত শিশুর প্রতি বাড়তি মনোযোগ দেওয়া এবং তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী যত্ন নেওয়া। এতে শীতেও শিশুরা প্রাণবন্ত ও উচ্ছল থাকবে।