ডিমের কুসুম নাকি সাদা অংশ, কোনটি বেশি উপকারী?
পুষ্টির অন্যতম উৎস হলো ডিম। আমরা সবাই কম বেশি ডিম খেয়ে থাকি। কেউ ডিমের সাদা অংশ খেয়ে থাকেন কেউ আবার ডিমের কুসুম খেয়ে থাকেন। তবে, আপনি কী জানেন ডিমের সাদা অংশে থাকে প্রোটিন আর কুসুমে থাকে কোলেস্টেরল, ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড ও ভিটামিন বি।
ডিমের সাদা অংশের পুষ্টিগুণ
ডিমের সাদা অংশ প্রধানত প্রোটিন দিয়ে গঠিত। একটি ডিমের সাদা অংশে প্রায় ১৭ ক্যালোরি থাকে এবং এতে প্রায় ৩.৬ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়। এটি কম ফ্যাটযুক্ত, কোলেস্টেরলমুক্ত এবং অত্যন্ত হালকা। এর প্রোটিন মানব শরীরের পেশি গঠনে সহায়তা করে এবং মেটাবলিজম বাড়ায়।
ডিমের সাদা অংশে রয়েছে রিবোফ্লাভিন এবং সেলেনিয়াম, যা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। এছাড়া, এটি ওজন কমাতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের জন্য আদর্শ, কারণ এটি খুব কম ক্যালোরিতে উচ্চমানের প্রোটিন সরবরাহ করে।
সুবিধা
কম ক্যালোরি এবং বেশি প্রোটিনের কারণে ডিমের সাদা অংশ ওজন কমাতে সাহায্য করে।
যারা কোলেস্টেরল নিয়ে চিন্তিত, তাদের জন্য সাদা অংশ একটি নিরাপদ বিকল্প। কারণ ডিমের সাদা অংশ কোলেস্টেরলমুক্ত। ডিমের কুসুমে থাকা কিছু প্রোটিন অ্যালার্জি সৃষ্টি করতে পারে, যা সাদা অংশে তুলনামূলকভাবে কম।
ডিমের কুসুমের পুষ্টিগুণ
ডিমের কুসুম হলো পুষ্টির ভাণ্ডার। এটি ভিটামিন এ, ডি, ই, এবং কে-এর পাশাপাশি ভিটামিন বি৬ এবং বি১২-এর উৎস। এছাড়াও এতে রয়েছে ফসফরাস, আয়রন, জিঙ্ক এবং কোলিন।
ডিমের কুসুমে কোলেস্টেরল বেশি থাকে, যা অনেকের জন্য উদ্বেগের কারণ। তবে সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, খাদ্যের কোলেস্টেরল সরাসরি রক্তের কোলেস্টেরল বাড়ায় না। বরং এটি “ভালো” এইচডিএল কোলেস্টেরল বাড়ায় এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে।
কোলিন একটি গুরুত্বপূর্ণ নিউট্রিয়েন্ট, যা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ায় এবং স্মৃতিশক্তি উন্নত করে। এটি গর্ভাবস্থায় ভ্রূণের মস্তিষ্ক গঠনে বিশেষ ভূমিকা রাখে। এছাড়া, ডিমের কুসুম চোখের জন্য লুটেইন এবং জিয়াজ্যান্থিন সরবরাহ করে, যা দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে সাহায্য করে।
সুবিধা
উচ্চ পুষ্টিমানের ভিটামিন এবং মিনারেলের সমৃদ্ধ উৎস হলো ডিমের কুসুম। কোলিন স্মৃতিশক্তি এবং মনোযোগ বাড়ায়। লুটেইন এবং জিয়াজ্যান্থিন চোখের বিভিন্ন সমস্যার ঝুঁকি কমায়।
কোনটি বেশি উপকারী?
ডিমের কুসুম এবং সাদা অংশ উভয়ই গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টিগুণ সরবরাহ করে। তবে কোনটি বেশি উপকারী, তা নির্ভর করে আপনার শারীরিক অবস্থা ও লক্ষ্য নির্ধারণের ওপর।
যদি আপনি ওজন কমাতে চান
ওজন কমাতে চাইলে ডিমের সাদা অংশ খাওয়া বেশি কার্যকর হতে পারে। এতে ক্যালোরি কম এবং প্রোটিন বেশি, যা দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখে এবং ক্ষুধা কমায়।
যদি আপনি মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করতে চান
মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধির জন্য ডিমের কুসুম খাওয়া উপকারী। এতে থাকা কোলিন এবং ভিটামিন বি১২ মস্তিষ্কের স্নায়ুকে সক্রিয় রাখে।
যদি হৃদরোগ নিয়ে চিন্তিত হন
হৃদরোগের ঝুঁকি থাকলে অনেকেই ডিমের কুসুম এড়িয়ে চলেন। তবে গবেষণা বলছে, ডিমের কুসুমের কোলেস্টেরল স্বাভাবিক মাত্রায় খেলে কোনো ক্ষতি হয় না। বরং এটি ভালো কোলেস্টেরল বাড়াতে সাহায্য করে। তবে ডাক্তার বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিয়ে খাওয়া ভালো।
প্রয়োজন অনুযায়ী নির্বাচন
ডিমের কুসুম ও সাদা অংশের মধ্যে কোনটি খাবেন তা নির্ধারণ করার সময় নিচের বিষয়গুলো বিবেচনা করতে পারেন:
ডায়াবেটিস, হৃদরোগ বা উচ্চ কোলেস্টেরলের সমস্যা থাকলে কুসুমের পরিমাণ সীমিত রাখতে পারেন। যদি আপনি নিরামিষভোজী না হন এবং পুষ্টি ঘাটতি পূরণ করতে চান, তবে পুরো ডিম খাওয়া উত্তম। অ্যাথলেট বা শরীরচর্চাকারীরা প্রোটিনের জন্য সাদা অংশ বেশি খেতে পারেন, তবে কুসুমও গুরুত্বপূর্ণ।
ডিমের কুসুম এবং সাদা অংশ উভয়ই পুষ্টিতে সমৃদ্ধ। একটিকে অপরটির চেয়ে ভালো বলা কঠিন। তাই, আপনার শরীরের প্রয়োজন এবং লক্ষ্যের ওপর ভিত্তি করে এগুলো খাওয়ার পরিমাণ নির্ধারণ করা উচিত। সুষম খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখতে পুরো ডিম খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা ভালো, তবে অতিরিক্ত না খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। পুষ্টিবিদের নির্দেশনা অনুযায়ী ডিম খেলে এটি আপনার স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী হতে পারে।