নভোচারীদের গল্পে বুকার জয়: সামান্থা হার্ভের অবিশ্বাস্য যাত্রা
বইয়ের পৃষ্ঠাগুলো যেন একেকটি নক্ষত্রজগত, আর সামান্থা হার্ভে হলেন সেই নক্ষত্রবিজ্ঞানী যিনি সাহিত্যের মহাকাশে নতুন গ্রহ আবিষ্কার করেছেন। তার সাম্প্রতিক উপন্যাস, দ্য অরবিটাল নভোচারীদের জীবন, স্বপ্ন এবং অজানা গন্তব্যের গল্প নিয়ে লেখা। বইটি তাকে এনে দিয়েছে সাহিত্যের অন্যতম সম্মানজনক পুরষ্কার, বুকার প্রাইজ।
সামান্থার এই গল্পে আছে বাস্তব আর কল্পনার মিশেল। কাহিনীর কেন্দ্রে রয়েছে একটি নভোযানের ছয় জন নভোচারী , তাদের এক দিনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরা হয়েছে উপন্যাসটিতে। অরবিটালে যে ছয় নভোচারীর কথা বলা আছে, তাদের দুজন পুরুষ এবং চারজন নারী। যারা পৃথিবী থেকে বহু আলোকবর্ষ দূরে নতুন পৃথিবীর সন্ধানে রওনা দেয়। কিন্তু এই যাত্রার মধ্যেই তাদের জীবনে ঘটে যায় এমন সব ঘটনা, যা শুধু মহাকাশ নয়, বরং মানবজীবনের গভীরতাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে।
হার্ভে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “নভোচারীদের নিয়ে গল্প লেখা মানে তাদের দৈনন্দিন জীবনের পাশাপাশি তাদের মানসিক লড়াইগুলোকেও তুলে ধরা। মহাকাশের শূন্যতা যেমন তাদের দেহের উপর চাপ সৃষ্টি করে, তেমনি একাকীত্ব তাদের মনেও গভীর ছাপ ফেলে।”
তার এই উপন্যাসে উঠে এসেছে বন্ধুত্বের টানাপোড়েন, ভয় আর প্রত্যাশার সংঘাত, আর সবচেয়ে বড় কথা, মানুষের অন্তর্নিহিত আশাবাদ। পাঠকেরা গল্পের প্রতিটি পৃষ্ঠায় আবিষ্কার করবেন এক ভিন্ন ধরনের মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি।
বিচারকমণ্ডলীর মতে, “অরবিটাল” কেবল একটি কল্পবিজ্ঞান উপন্যাস নয়; এটি মানুষের জীবন এবং আত্মার অনুসন্ধান। সামান্থা তার লেখনীর মাধ্যমে যা সৃষ্টি করেছেন, তা সাহিত্যের আকাশে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র।
অরবিটাল বইটি মোট ১৩৬ পৃষ্ঠার। এটি বুকারজয়ী দ্বিতীয় সংক্ষিপ্ততম বই। এটি মহাকাশ নিয়ে লেখা প্রথম কোনো বই, যেটি বুকার পুরস্কার জিতেছে। হার্ভে কোভিড-১৯ মহামারির লকডাউনে অরবিটাল বইটি লিখেছিলেন।
হার্ভে জানান, যেসব মানুষ পৃথিবীর পক্ষে সরব থাকেন, অন্য মানুষের মর্যাদা, অন্য প্রাণের পক্ষে কথা বলেন এবং যেসব মানুষ শান্তি প্রতিষ্ঠায় সোচ্চার থাকেন ও কাজ করেন তাদের সবার জন্য তিনি পুরস্কারের ৫০ হাজার পাউন্ড অর্থ উৎসর্গ করছেন।
পুরস্কার জেতার পর বিবিসি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হার্ভে বলেন, তিনি পুরোপুরি বিস্মিত এবং অত্যন্ত অভিভূত হয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, এই পুরস্কার তার জীবন পরিবর্তন করে দেবে।
৫০ হাজার পাউন্ড পুরস্কারের অর্থ কীভাবে খরচ করবেন, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাকে একটা নতুন বাইক কিনতে হবে এবং সেটা হবে একটি ভালো বাইক।
উপন্যাসটি প্রকাশিত হওয়ার পরই পাঠকদের মধ্যে সাড়া ফেলে। কেউ বলেছেন, এটি একটি কবিতা; কেউ বলছেন, এটি একটি দর্শনের পাঠ। তবে সবার মতে, এই বইটি একবার পড়া শুরু করলে শেষ না করে ওঠা অসম্ভব।
সামান্থা হার্ভে তার অসাধারণ কল্পনা এবং গভীর অন্তর্দৃষ্টির মাধ্যমে আবারও প্রমাণ করেছেন, ভালো সাহিত্য কেবল বিনোদন দেয় না, এটি আমাদের ভাবতে বাধ্য করে। “অরবিটাল” তার পাঠকদের মহাকাশের শূন্যতার মধ্যেও জীবনের অর্থ খুঁজে পেতে সাহায্য করবে।
আপনি কি ইতোমধ্যে এই অসাধারণ গল্পের যাত্রা শুরু করেছেন? যদি না করে থাকেন, তবে এবার আপনার পালা। কারণ সামান্থা হার্ভে আপনাকে নিয়ে যাবেন এমন এক মহাকাশে, যেখানে কল্পনারও কোনো সীমানা নেই