সিরাজগঞ্জে পুরুষের অর্ধেকেরও কম মজুরি পান নারীরা
কাজ করেন পুরুষের সমান। কিন্তু মজুরি পান পুরুষের চেয়ে অর্ধেকেরও কম টাকা। সিরাজগঞ্জের তাড়াশে শুঁটকি চাতালের নারী শ্রমিকরা দীর্ঘ এক যুগেরও অধিক সময় ধরে মজুরিবৈষম্যের শিকার। বিশেষ করে এ কাজেই তাদের জীবিকা চলে। নিরুপায় হয়ে মজুরিবৈষম্য মেনেই কাজ করছেন।
ভুক্তভোগী নওগাঁ ইউনিয়নের দেবিপুর গ্রামের বাসিন্দা ছকিনা খাতুন একজন নারী শ্রমিক। তিনি বলেন, ‘আমার বাড়ির পাঁচজন মানুষ আমার উপার্জনের উপর নির্ভরশীল। স্বামী মানসিক প্রতিবন্ধী। কোনো কাজ করেন না। বরং তাকেই পাবনা মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে হয়। তিন সন্তান পড়ালেখা করে। একই সমান কাজ করে পুরুষ পায় পাঁচশ টাকা প্রতিদিন। আমাদের দেয় মাত্র দুইশ টাকা। দুর্মূল্যের বাজারে দুইশ টাকায় জীবন চালানো কঠিন।’
মাগুরা বিনোদ ইউনিয়নের ললুয়াকান্দি গ্রামের আবু হানিফের স্ত্রী মাজেদা খাতুন জানান, তার স্বামী বেঁচে আছেন। কিন্তু কোনো ভরণপোষণ দেয় না। পনের বছর ধরে শুঁটকির চাতালে কাজ করছেন, বেতন বাড়েনা।
জানা গেছে, চলনবিলের শুঁটকি অন্যান্য জলাশয়ের শুঁটকি মাছের চেয়ে খেতে সুস্বাদ। চলনবিলের মিঠা পানির পুঁটি, খৈলসা, চান্দা, মলা, ইচা, টেংরা, গুচি, ক্যাকিলা, টাকি, শোল ও বোয়াল মাছের শুঁটকির বেশ কদর রয়েছে দেশ জুড়ে। তাছাড়া বিদেশে বসবাসরত বাঙালিদের মধ্যেও এ বিলের মাছের শুঁটকির ব্যাপক সমাদর রয়েছে।
মজুরিবৈষম্যের শিকার শুঁটকি চাতালের বেশ কয়েকজন নারী শ্রমিক জানান, সূর্য ওঠার আগেই শুঁটকির চাতালে আসতে হয়। মাছ ধোয়া, মাছ কাটা আমরাই করি। রোদে শুকানোর কাজেও বেশি সময় দেই। সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করতে হয়। সেই তুলনায় মজুরি পাইনা।
শুঁটকি ব্যবসায়ী দেলবর হোসেন, সুজন, গফুর, নান্নু, আলম, জিল্লুর ও মান্নান বলেন, নারী শ্রমিকদের মজুরি ছিলো একশ বিশ টাকা। তারপর একশ পঞ্চাশ টাকা থেকে বাড়িয়ে দুইশ টাকা দিচ্ছি। নারী শ্রমিকদের মজুরি পুরুষ শ্রমিকদের সমান হতে পারে না।
সরেজমিনে দেখা গেছে, চলনবিল অধ্যুষিত তাড়াশ উপজেলার মহিষলুটি বাজার এলাকায় শুঁটকির চাতালে পুরোদমে শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণ শুরু হয়েছে। প্রতিটি বাঁশের মাচায় মাছ শুকানো হচ্ছে। কেবল নারী শ্রমিকদেরই দেখা মেলে শুঁটকির চাতালে। পুরুষ শ্রমিকরা দুপুরের নাওয়া-খাওয়া সেরে আরাম করছেন তখনও।
স্বেচ্ছাসেবী বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠনের উপ-পরিচালক মোছা. রোখসানা খাতুন বলেন, ‘প্রায় সব কাজেই মজুরি বৈষম্যের শিকার নারী। এর মূল কারণ আমাদের দেশে কর্মক্ষেত্রে নারীদের অবদান ছোট করে দেখা হয়। আমি নিজেই যাব সেখানে। নারী শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানো নিয়ে শুঁটকি ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলব।’
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মসগুল আজাদ বলেন, নারী শ্রমিকদের মজুরি বাড়াতে তাগিদ দেওয়া হয়েছে শুঁটকি ব্যবসায়ীদের।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুইচিং মং মারমা দৈনিক ইত্তেফাককে বলেন, ‘নারী শ্রমিকদের মজুরিবৈষম্যে দূরীকরণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’