নামটি তার কম্পিউটার: মানুষ নাকি যন্ত্র
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে “কম্পিউটার” শব্দটি এমনভাবে মিশে গেছে যে আমরা প্রায়ই ভুলে যাই এই প্রযুক্তিটি কীভাবে আমাদের জীবন, চিন্তা-ভাবনা, আর কাজের ধরন বদলে দিচ্ছে। কিন্তু প্রশ্নটি হলো, কম্পিউটার কি সত্যিই এক নিষ্ক্রিয় যন্ত্র নাকি এটি হয়ে উঠেছে আমাদের সঙ্গী? কিংবা বলা যায়, এটি কি কেবল যন্ত্র নাকি কোনোভাবে আমাদের মতো কিছু “বোধ” ধরে রাখতে সক্ষম?
কম্পিউটার মূলত এমন এক যন্ত্র, যা গণনা করতে সক্ষম। এর আবিষ্কারকরা চেয়েছিলেন একটি যন্ত্র, যা দ্রুত হিসাব করতে পারে, এমনকি ত্রুটি ছাড়াই। ধীরে ধীরে গণনার এই ক্ষমতা বেড়েছে এবং এটি কাজের নানা শাখায় ছড়িয়ে পড়েছে। বর্তমানের সুপারকম্পিউটারগুলো এক সেকেন্ডে বিলিয়ন-বিলিয়ন গণনা করতে পারে এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাথে মানুষের মতো চিন্তা করতেও পারছে।
আজকের কম্পিউটারে যুক্ত হয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Artificial Intelligence) যা অনেকেই ভাবেন “যন্ত্রের বোধ।” কিন্তু আসলে এটি যন্ত্রের নিজস্ব চিন্তাভাবনা নয় বরং প্রোগ্রামারদের নির্দেশনার মাধ্যমে শেখা একটি পদ্ধতি। যেমন, গুগলের সার্চ ইঞ্জিন কিংবা অ্যালেক্সার মতো ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট – এরা আমাদের প্রশ্ন বুঝে উত্তর দেয়, যা দেখে মনে হয় যেনো এদেরও চিন্তার ক্ষমতা আছে। তবে এগুলো কেবল পূর্বনির্ধারিত তথ্যের উপর ভিত্তি করে কাজ করে।
কম্পিউটারের অনেক ক্ষমতা থাকলেও, এটি মানুষের মতো অনুভূতি, চিন্তা এবং সৃষ্টিশীলতা ধারণ করতে অক্ষম। মানুষের মস্তিষ্ক বহু সংবেদনশীল, যা স্নায়ুতন্ত্রের মাধ্যমে বুদ্ধিবৃত্তি ও আবেগ প্রকাশ করে। অন্যদিকে, কম্পিউটার কাজ করে সংকেত এবং নির্দেশনার মাধ্যমে। মানুষের মতো কম্পিউটার কখনো ক্লান্ত হয় না, এটি নির্দিষ্ট কোড অনুসারে কাজ চালিয়ে যেতে পারে। তবে মানুষের মতো সৃজনশীল চিন্তা করতে বা আবেগ প্রকাশ করতে পারে না।
বর্তমানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে কম্পিউটারগুলো এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যেখানে তারা আমাদের দৈনন্দিন সহচর। তারা আমাদের কাজ, সময়, এবং অনেক সিদ্ধান্তের দায়িত্ব সহজ করছে। যেমন, গুগল ম্যাপের নির্দেশনা বা স্পটিফাইয়ের গানের পরামর্শ, এগুলোই বলে দিচ্ছে যে, কম্পিউটার আমাদের সঙ্গী হয়েই থাকছে। তবে সবসময় মনে রাখতে হবে, কম্পিউটার একটি যন্ত্র মাত্র – এটি আবেগ, বিবেক বা নৈতিকতা ধারণ করে না।
একসময় হয়তো আরও উন্নত কম্পিউটার তৈরি হবে যা মানুষের মতো আরও বেশি সাড়া দেবে। তবে, শেষ পর্যন্ত কম্পিউটার কেবল মানুষের তৈরি এক উদ্ভাবন। একে যন্ত্র হিসেবেই ভাবা উচিত এবং মানুষের মতো সত্ত্বা হিসেবে নয়।
কম্পিউটার তাই আমাদের কাজের সহজীকরণের জন্য অসাধারণ এক সঙ্গী, কিন্তু আবেগ, অনুভূতি আর সৃজনশীলতার জন্য আমাদের নিজস্ব চিন্তাশক্তিই অপরিহার্য।