কোন রঙের ক্যাপসিকাম বেশি উপকারী
ক্যাপসিকাম বা বেল পেপার, একটি জনপ্রিয় এবং পুষ্টিকর শাক-সবজি। লাল, হলুদ, কমলা এবং সবুজ রঙের ক্যাপসিকাম আপনারা অনেকেই দেখেছেন। তবে বেগুনি রঙের ক্যাপসিকাম দেখেছেন কি? ক্যাপসিকাম বিভিন্ন রঙের হয়। আর বিভিন্ন রঙের ক্যাপসিকাম আমাদের শরীরের বিভিন্ন প্রয়োজনীয় পুষ্টি মিটাতে পারে। বিভিন্ন মুখরোচক খাবারে আমরা প্রায়ই ক্যাপসিকাম ব্যবহার করে থাকি। এইসব মুখরোচক খাবারে ক্যাপসিকাম বা বেল পেপার ব্যবহার কেবলমাত্র খাবারের স্বাদই বাড়ায় না, বরং আমাদের শরীরের জন্য বেশ উপকারী। সাধারণত ক্যাপসিকাম সবুজ, হলুদ, লাল, কমলা ও বেগুনি রঙে পাওয়া যায় এবং প্রতিটি রঙের ক্যাপসিকামে ভিন্ন পুষ্টি উপাদান থাকে। আজ আমরা জানব, কোন রঙের ক্যাপসিকাম বেশি উপকারী এবং কেন।
লাল ক্যাপসিকাম
লাল ক্যাপসিকাম সবচেয়ে বেশি পুষ্টিকর। লাল ক্যাপসিকাম ভিটামিন C এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে পরিপূর্ণ, যা শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে। বিশেষ করে, লাল ক্যাপসিকামে বিটা-ক্যারোটিন (ভিটামিন A-এর প্রাকৃতিক উৎস) থাকে, যা ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি ত্বকের কোষ পুনর্জন্মে সহায়তা করে এবং বয়সের ছাপ কমাতে সাহায্য করে।
হলুদ ক্যাপসিকাম
হলুদ ক্যাপসিকামেও অনেক পুষ্টি উপাদান রয়েছে, তবে এর পুষ্টিগুণ লাল ক্যাপসিকামের চেয়ে কিছুটা কম। এতে ভিটামিন C, ফোলেট, এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস থাকে। হলুদ ক্যাপসিকাম চোখের স্বাস্থ্য রক্ষা করতে সাহায্য করে, কারণ এতে লুটেইন এবং জেক্সানথিন নামক ক্যারোটেনয়েডস রয়েছে, যা চোখের পিগমেন্টকে সুরক্ষা দেয় এবং দীর্ঘসময় পর্যন্ত দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে সহায়তা করে।
এছাড়া, হলুদ ক্যাপসিকামে থাকা ফোলেট আমাদের কোষের গঠন এবং রক্তকণিকার উৎপাদন বাড়ায়, যা শরীরের সঠিক কার্যক্রমের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সবুজ ক্যাপসিকাম
সবুজ ক্যাপসিকাম পাকা না হওয়া ক্যাপসিকাম, এবং এতে অন্যান্য রঙের তুলনায় কিছু কম পুষ্টি উপাদান থাকে। তবে সবুজ ক্যাপসিকাম ফাইবার এবং ভিটামিন C-এ ভালো উৎস। সবুজ ক্যাপসিকামও কিছু পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে পূর্ণ, যা শরীরের অভ্যন্তরীণ ক্ষতির বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং কোষের সুরক্ষা দেয়। তবে সবুজ ক্যাপসিকাম পাকা ক্যাপসিকামের তুলনায় কিছুটা তেতো হয়ে থাকে, তাই অনেকের জন্য সবুজ ক্যাপসিকাম কম পছন্দনীয়।
কমলা ক্যাপসিকাম
কমলা ক্যাপসিকামে ভিটামিন C এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসের পরিমাণ যথেষ্ট, তবে এর পুষ্টিগুণও লাল এবং হলুদ ক্যাপসিকামের মতো উচ্চমানের নয়। তবুও, কমলা ক্যাপসিকাম ভিটামিন A এবং ফাইবারের একটি ভালো উৎস , যা হজমশক্তি বাড়ায়। কমলা ক্যাপসিকাম হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী ভুমিকা পালন করে।
বেগুনি ক্যাপসিকাম
বেগুনি ক্যাপসিকাম অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমৃদ্ধ, যা শরীরকে ফ্রি র্যাডিক্যালের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। এতে থাকা অ্যান্থোসায়ানিন হৃদরোগ, ক্যান্সার এবং জ্বালাপোড়া কমাতে সহায়তা করে। বেগুনি ক্যাপসিকামে প্রচুর ভিটামিন সি রয়েছে, যা ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এতে থাকা পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে এবং হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এ ছাড়া এতে ফাইবার থাকায় এটি হজমে সহায়ক এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
সবশেষে, দেখা যাচ্ছে যে লাল ক্যাপসিকাম সবচেয়ে বেশি পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্যকর। এতে ভিটামিন C, বিটা-ক্যারোটিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস এবং অন্যান্য উপকারি উপাদান রয়েছে, যা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। তবে, প্রতিটি রঙের ক্যাপসিকামেরই কিছু বিশেষ উপকারিতা রয়েছে, এবং এগুলো খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করলে আমরা ভিন্ন ভিন্ন পুষ্টি উপাদান পেতে পারি। তাই, খাবারের বৈচিত্র্য বজায় রাখতে বিভিন্ন রঙের ক্যাপসিকাম খাওয়া উচিত।