শিশুরা কোন বয়সে কেমন ধরনের ভয় পায়
প্রথম বার যখন আপনার সন্তান অন্ধকারে একা থাকতে ভয় পায়, তখন হয়তো ভাবছেন, এই ভয় আসলে কেন? বয়স অনুযায়ী শিশুদের মানসিক বিকাশের সাথে সাথে তাদের ভয়ের অনুভূতিও বদলায়। জীবনের প্রথম দিকের এই ভয়গুলো তাদের মানসিক গঠন ও বোধের অংশ হয়ে ওঠে। তবে কেবল একটি সাধারণ অনুভূতি নয়, বরং প্রতিটি বয়সে আলাদা আলাদা ভয় শিশুরা কীভাবে অনুভব করে, তা বুঝতে পারলে আমরা তাদের আরও ভালোভাবে সাহায্য করতে পারি।
শিশুরা তাদের বেড়ে ওঠার প্রতিটি ধাপেই ভিন্ন ভিন্ন ধরনের ভয় পেয়ে থাকে। এসব ভয় তাদের মানসিক বিকাশের সাথে জড়িত। প্রত্যেক বয়সে তাদের নিরাপত্তা ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে ভয়গুলো আলাদা রূপ নেয়। সাধারণত প্রাথমিক মানসিক প্রতিক্রিয়া হিসেবেই এই ভীতিগুলো শুরু হয় এবং বয়স বাড়ার সাথে সাথে তা পরিবর্তিত ও বিবর্তিত হয়। আসুন জেনে নি, কোন বয়সে শিশুদের কোন বিষয়ে ভয়ের প্রভাব সবচেয়ে বেশি এবং কীভাবে আমরা তাদের সাহস দিতে পারি।
০-২ বছর
জন্মের পর প্রথম কয়েক বছরে শিশুরা তাদের মা-বাবা বা প্রিয়জনের সাথে সবসময় থাকতে চায় এবং তাদের আশেপাশে নিজেকে নিরাপদ মনে করে। ০-২ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে প্রধানত উচ্চ শব্দ, অপরিচিত চেহারা এবং মা-বাবার থেকে আলাদা হয়ে যাওয়ার ভয় কাজ করে। এই বয়সে শিশুরা স্বাভাবিকভাবেই আশ্রয় এবং নিরাপত্তার জন্য নির্ভরশীল থাকে এবং যে কোনো অপ্রত্যাশিত পরিবর্তন তাদের মধ্যে শঙ্কা সৃষ্টি করতে পারে।
৩-৪ বছর
এই বয়সে শিশুদের কল্পনাশক্তি বেড়ে যায়। এজন্য তাদের কল্পনার জগতে ভূত, দানব বা অন্যান্য কাল্পনিক চরিত্রের ভয় জন্ম নেয়। এই বয়সে তারা কল্পনা আর বাস্তবের মধ্যে পরিষ্কার পার্থক্য করতে শেখে না। এজন্য রাতে অন্ধকারে ঘরে থাকলে বা একা ঘুমাতে গেলে এসব ভয় প্রকট হয়ে ওঠে।
৫-৭ বছর
স্কুলে যাওয়ার বয়স থেকে শিশুদের বাস্তব জীবনের বিষয়গুলো সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি পায়। তারা আগুন, চুরি বা দুর্ঘটনার মতো পরিস্থিতির ভয় পেতে শুরু করে। তারা যখন বাস্তব জীবনের কিছু অভিজ্ঞতা লাভ করে, তখন এসব ভয় আরও বাড়তে পারে। এছাড়া সামাজিক পরিবেশেও নতুন কিছু ভীতির সৃষ্টি হয়, যেমন নতুন বন্ধুদের সাথে মানিয়ে না চলা বা উপহাসের শিকার হওয়া।
৮-১১ বছর
৮-১১ বছর বয়সে শিশুরা তাদের পড়াশোনা, পরীক্ষা, এবং পারফর্ম্যান্স নিয়ে চিন্তিত হয়। তারা পরীক্ষায় ভালো করতে ব্যর্থ হলে বা শিক্ষকদের সামনে কিছু ভুল করলে অপমানিত হওয়ার ভয় পায়। এ সময় তাদের নিজের সাফল্য এবং ব্যর্থতার গুরুত্ব বোঝা শুরু হয়, যা তাদের মধ্যে ব্যর্থতার ভয় তৈরি করে। সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা এবং অন্যদের মনোযোগ পাওয়ার ইচ্ছা তাদের চিন্তার সাথে মিশে যায় এবং নতুন ধরনের ভয়ের সৃষ্টি করে।
১২ বছর ও তদূর্ধ্ব
কিশোর বয়সে শিশুরা ব্যক্তিত্ব ও সামাজিক অবস্থানের বিষয়ে সচেতন হতে শুরু করে। বন্ধুদের সাথে সম্পর্ক, গ্রুপে অন্তর্ভুক্তি, এবং ভবিষ্যৎ সম্পর্কে চিন্তা এই বয়সে তাদের ভয় বাড়ায়। তাদের মধ্যে একাকিত্বের ভয়, সামাজিক ব্যর্থতার ভয়, এবং আত্মবিশ্বাসে ফাটল দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে যেসব শিশুরা সামাজিকভাবে নিজেকে সবার মাঝে মানিয়ে নিতে পারে না, তাদের মধ্যে এই ভীতি বেশি দেখা দেয়।
অভিভাবকদের ভূমিকা
অভিভাবকদের এসব ভয়কে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করে শিশুদের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে হবে। শিশুরা ভীত হলে তাদের নিরাপত্তাবোধ বাড়ানোর জন্য পাশে থাকা এবং এ সম্পর্কে বুঝিয়ে বলা গুরুত্বপূর্ণ। বয়সের সাথে সাথে তাদের ভীতিগুলো পরিবর্তিত হবে এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারা এগুলো কাটিয়ে উঠতে পারে। অভিভাবকদের ভূমিকা এই ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ শিশুরা তাদের প্রতিক্রিয়া দেখে নিজেদের ভয়ের প্রতি সাড়া দিতে শেখে।
সর্বোপরি, শিশুমনে নানা বয়সে নানা ধরনের ভয়ের সঞ্চার হয়, যা তাদের মানসিক বিকাশের স্বাভাবিক অংশ। বুঝেশুনে শিশুদের মানসিক বিকাশে সহায়তা করলে তারা এই ভয়গুলো জয় করতে শিখতে পারবে।