নারী কেন উদ্যোক্তা হতে চায়
সমাজে নারীদের ভূমিকা এবং দায়িত্বের পরিধি প্রতিনিয়তই পরিবর্তিত হচ্ছে। একসময় যেখানে নারীরা কেবল ঘরের চার দেয়ালের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল, আজকের দিনে তারা সমাজ, ব্যবসা, প্রযুক্তি এবং শিক্ষা সবক্ষেত্রেই সমান তালে নিজেদের অবস্থান গড়ে তুলছেন। নারী উদ্যোক্তা হওয়ার প্রবণতা প্রতিনিয়ত বাড়ছে এবং এই পরিবর্তনের পেছনে রয়েছে বিভিন্না ধরনের কারণ। নারীদের উদ্যোক্তা হওয়ার চাহিদার পেছনে রয়েছে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা, আত্ম-স্বীকৃতি, সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, নতুন কিছু সৃষ্টির তাড়না এবং বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের শক্তি। প্রথমত, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্জন নারীদের উদ্যোক্তা হওয়ার অন্যতম বড় কারণ। দীর্ঘদিন ধরে সমাজে নারীদের আর্থিক নির্ভরতা পুরুষদের উপরেই ছিল। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে আজকের নারীরা আর্থিকভাবে স্বাধীন হওয়ার জন্য চেষ্টা করছেন এবং এই স্বাধীনতা অর্জনের মাধ্যমে ভারা নিজেদের অবস্থানকে শক্তিশালী করে তুলতে চান। একজন উদ্যোক্তা হয়ে নিজের ব্যবসা গড়ে তোলার মাধ্যমে নারী কেবল নিজের জীবনের গতি বদলাতে পারেন না, বরং পরিবার ও সমাজের উন্নয়নে বড় ধরনের অবদান রাখতে পারেন। এভাবেই আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী নারীরা নিজেদের ও পরিবারের ভবিষ্যত সুরক্ষিত করতে সক্ষম হন।
নারী উদ্যোক্তা হওয়ার আরেকটি কারণ হলো আত্ম-স্বীকৃতি এবং নিজের ক্ষমতা প্রমাণের ইচ্ছা। নারীরা আজ স্বকীয় পরিচয় প্রতিষ্ঠা করতে চান এবং এই চাহিদা তাদের উদ্যোক্তা হওয়ার দিকে পরিচালিত করছে। অনেক নারী চাকরিতে যোগ দেওয়ার পরিবর্তে নিজের কিছু তৈরি করতে চান, যা তাদের ব্যক্তিগত পরিচয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। নিজের নামে একটি উদ্যোগ গড়ে তোলা, তা পরিচালনা করা এবং সাফল্যের চুড়ায় পৌঁছানো নারীদের আত্মবিশ্বাস বাড়ায় এবং নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে সাহায্য করে।
সামাজিক প্রভাব ও সমাজ পরিবর্তনের লক্ষ্যও নারীদের উদ্যোক্তা হওয়ার পেছনে বড় ভূমিকা পালন করে। অনেক নারী উদ্যোক্তা তাদের উদ্যোগের মাধ্যমে সমাজের প্রয়োজনীয় সমস্যাগুলোর সমাধান করতে চান। উদাহরণস্বরূপ, গ্রামীণ অঞ্চলে অনেক নারী শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি, স্বাস্থ্যসেবা বা নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছেন। তারা তাদের উদ্যোগের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে অন্য নারীদের ক্ষমতায়ন এবং সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার জন্য কাজ করছেন। উদ্যোক্তা হয়ে নারীরা নিজেদের কাজের মাধ্যমে সমাজে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে চান এবং অন্য নারীদের জন্য একটি উদাহরণ স্থাপন করতে চান।
নারীদের উদ্দ্যোক্তা হওয়ার পেছনে তাদের সৃজনশীলতার একটি বড় প্রভাব রয়েছে। নারীদের মধ্যে সৃজনশীলতা এবং উদ্ভাবনী শক্তি অনেক বেশি, যা তাদের উদ্যোক্তা হওয়ার দিকে টানে। তারা চিরাচরিত চাকরি বা কর্পোরেট জীবনের বাঁধা ধরা রুটিনের বাইরে গিয়ে নতুন কিছু সৃষ্টি করতে চান, যেখানে তারা নিজেদের মনের মতো করে কাজ করতে পারেন। এই সৃজনশীলতাকে কাজে লাগিয়ে অনেক নারী নতুন পণ্য, সেবা বা ব্যবসায়িক মডেল তৈরি করে থাকেন। এই ধরনের উদ্যোগ নারীদের শুধু সৃজনশীলতাকে বিকশিত করে না, বরং তাদের আর্থিক স্থিতিশীলতারও সুযোগ করে দেয়। অনেক নারী উদ্যোক্তা হওয়ার মাধ্যমে কর্মক্ষেত্রে বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করে। কর্পোরেট বা চাকরির ক্ষেত্রে এখনও অনেক নারীকেই নানা ধরনের বৈষমোর সম্মুখীন হতে হয়, যা তাদের পক্ষে সহনীয় নয়। তাই তারা নিজের উদ্যোগ গড়ে তোলার মাধ্যমে নিজের নিয়ন্ত্রণে একটি কর্মক্ষেত্র তৈরি করতে চান, যেখানে বৈষম্য থাকবে না এবং তাদের কৃতিত্বের সঠিক মূল্যায়ন হবে। নিজের ব্যবসায় নিজের দায়িত্বে সবকিছু পরিচালনা করার মাধ্যমে নারীরা সমাজে নিজেদের সম্মান এবং মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে চান।
সবশেষে, উদ্যোক্তা হওয়া নারীদের জন্য কেবল একটি পেশাগত পরিবর্তন নয়; বরং এটি তাদের ব্যক্তিত্ব ও জীবনধারায় কড় ধরনের প্রভাব ফেলে। উদ্যোক্তা হয়ে নারীরা কেবল অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ও সামাজিক স্বীকৃতি ও পান না, বরং তাদের মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলী, আত্মবিশ্বাস এবং আত্মনির্ভরশীলতা বৃদ্ধি পায়। নারীদের এই অদম্য ইচ্ছাশক্তি, আত্মবিশ্বাস এবং নিজস্বতা অর্জনের আকাঙ্ক্ষাই তাদের উদ্যোক্তা হওয়ার পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, এবং এটি সমাজে নারীদের অবস্থান আরও সুদৃঢ় করছে।
অর্থনৈতিক স্বাধীনতা, আত্ম-স্বীকৃতি, সামাজিক পরিবর্তন, সৃজনশীলতার বিকাশ, বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই এবং আত্মনির্ভরতার চাহিদা নারীদের উদ্যোক্তা হওয়ার পেছনে প্রধান কারণ। এভাবেই তারা নিজেদের জীবনে নতুন মাত্রা সংযোজন করছেন, যা তাদের জীবনকে শুধু আর্থিক নয়, বরং মানসিক এবং সামাজিক দিক থেকেও সমৃদ্ধ করে তুলছে।