পাত্রী দেখতে এসেছেন, কিনতে নয়
বিয়ে হল একটি সামাজিক বন্ধন যাতে দুটি মানুষ পরস্পর পরস্পরের প্রতি দায়বদ্ধ থাকে। বিয়ের মাধ্যমে পারিবারিক সম্পর্ক সৃষ্টি হয় মানুষ কখনও একাকী বাস করতে চায় না। একাকী বাস করা মানুষের পক্ষে সম্ভবও নয়। পৃথিবীতে প্রত্যেকে তার জীবনসঙ্গীর সঙ্গেই সঙ্গেই জীবনের সুখ-দুঃখ ভাগ করে নিতে চায়। এক্ষেত্রে নারী-পুরুষ তাদের জীবণে পছন্দমতো সঙ্গীরই কামনা করে। যদিও নারীদের থেকে পুরুষরা স্ত্রী হিসেবে যাকে পেতে চায় তাকে একটু বেশিই যাচাই বাছাই করতে তৎপর থাকে। তবে এ প্রচলনটি অন্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে কিছুটা বাড়াবাড়ি রকমের দেখা যায়।
সাধারনত আমাদের সমাজ ছেলে-মেয়ের বিয়ের ক্ষেত্র অভিভাবকের পছন্দকেই প্রধান্য দেয়া হয় বেশির ভাগ সময়। এই মেয়ে দেখা পদ্ধতির জন্ম অনেক বছর আগে। এ যুগেও দেখা যায় বেশ কিছু ক্ষেত্রে প্রথাটা এখনও বয়েছে।
শুধুমাত্র এই ব্যাপারটিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু ম্যাচমেকার সংস্থা এবং ওয়েবসাইট। বিশেষ করে ইন্ডিয়ার শাদী ডট কম, বা রেডিফ ডট কমের মত ওয়েবসাইট গুলো এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
বিশেষ করে সেটল ম্যারেজের আধিক্যই বেশি আমাদের মধ্যবিত্য পরিবারে। আর এ ক্ষেত্রে ছেলেকে বিয়ে করানোর আগে খুব ঘটা করে মেয়ে দেখা নামক একটি বিদঘুটে প্রথাও চালু আছে যদিও পুরো প্রসেসটি বেশ জটিল এবং অর্থ ও সময় দুটেরই অপচয় ঘটায়।
আর বাঙালি ছেলের পরিবারে ‘সোনার আঙটি ব্যাকাও ভলো’ এমন একটি ভাবনা থেকে ছেলেকে সোনার টুকরা মনে করা হয়। ছেলের যোস্ততা যেমনই থাকুক তাকে বিয়ে করানোর সময় যেন বেছে বেছে সবচেয়ে ভাল্যে ও ও সুন্দর মেয়েটিই ঘরের বউ হিসেবে নিয়ে আসতে পারে সেই চেষ্টায় তারা উন্মীব থাকে।
যখন ঘটক বা মধ্যবর্তী কারও মাধ্যমে মেয়ের খোঁজ পায় তার বাড়িতে শুধু প্রস্তাব দিয়েই ক্ষান্ত থাকেনা ছেলের পরিবার। রীতিমতো তো সৈন্যসামন্ত নিয়ে ওই মেয়েটিকে দেখতে যায় তার বাড়িতে।
এটা ঠিক একজন অপরজনকে বিয়ের আগে দেখে বুঝে নেওয়া দরকার তা নাহলে ম্যাচিং বা আডাস্টান্ডিং হওয়া কঠিন হবে। তাই বলে একটি মেয়েকে পরিবারের সবাই দলবেঁধে দেখতে যাওয়াটা খুবই অস্বস্তিকর ও অপমানেরও বটে।
যখন একটা ভাল সম্বন্ধ খুঁজে পাওয়া গেলে শুরু হয় মেয়ে দেখা। বিষয়টির মূল কনসেপ্ট হচ্ছে মেয়ের বাড়িতে গিয়ে ছেলের বাসার সবাই চেখে দেখবেন সবকিছু ঠিক আছে কিনা মেয়ের বাড়ির রান্না থেকে শুরু করে, মেয়ের চেহারা ছবি, পরিবারের অন্যান্যদের অবস্থা ইত্যাদি।
কখনো কিছু পরিবার মেয়ে দেখা বিষয়টিকে বাজারের লাউ কিংবা কোরবানির হাটের গরু কিনতে যাওয়ার পর্যায়ে নিয়ে যায়।এই ব্যাপারটা যে কি ভয়ঙ্কর তা সে মেয়ে মাত্রই জানে। সেজেগুঁজে বসে থাকো, হেঁটে দেখাও, গান শুনাও, ধাঁধার উত্তর দাও, হাসি মশকরা সহ্য কর এরকম বিভিন্ন বিচিত্র ব্যাপারের মধ্যে দিয়ে যেতে হয় মেয়েটিকে।
অনেকে নামাজের মাশলা-মাসায়েল জিজ্ঞেস করে মেয়েকে। অনেকে আবার ভেজা পায়ে হেঁটে যেতে। বলে পায়ের নিচের ফাঁকা জায়গাটা ঠিক আছে কিনা দেখার জন্য যেন ওটা ঠিক না থাকলে কেয়ামত হয়ে যাবে। মুরুব্বীরা মেয়েটার শরীরের বিশেষ জায়গায় তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে – আমাগো পোলাড়া মজা গাইবো ইবো কিনা সেইটা নিশ্চিত করতে হইবো না?”
অথচ ছেলেটাকে এসবের কিছুই করতে হয়না।। বসে বসে সে খালি মজা দেখে। এদিকে মেয়েটার পরিবারকে ১০/১২ জন লোক খাওয়ানোর ব্যবস্থা করতে করতে কালঘাম ছুটে যায়। যদিও তখনও নিশ্চিত নয় যে তাদের মেয়েটির সঙ্গে এই ছেলের বিয়ে হচ্ছে কিনা। ছেলের পরিবারের সবার মেয়েটিকে পছন্দ হয়েছে কিনা তা না জেনেই আপ্যায়ের কোনো ত্রুটি রাখেনা মেয়ের পরিবার।
তবে ইদানিং আবার এর ধরন বদলেছে। কোন
দোকানে ছেলের পরিবারের একজন দুজন যায়, আর মেয়েটাও কাউকে নিয়ে যায়। দেখা সাক্ষাত হয় কথা বার্তা হয় যেন সাজানো নাটক। শরীর বিশ্লেষন চলতে থাকে এরই ফাঁকে। আধুনিক নাগরিক জীবনের শর্টকাট মেয়ে দেখা।
মেয়ের দেখার আরেকটা নতুন ফর্ম আছে যেখানে মেয়ে ছেলে ফোনে কিছুদিন কথা বলে নিজেদের জেনে নেয়। তারপর নিজেরা কোথাও ডেটিং এ গিয়ে আরেকটু একান্ত হয় দুজনার। এই পদ্ধতিটাকে কিছুটা আধুনিকই মনে হয়। তবে এক্ষেত্রে অনেক ছেলে একাধিক মেয়ের সঙ্গে একই আচরণ করে ওই মেয়েদের পক্ষে অপমানের যাদের রেখে ছেলেটা একজনকে জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নেয়।