Skip to content

২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | শনিবার | ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রোবটের কর্মদক্ষতা কি মানবশক্তির বিকল্প হয়ে উঠছে?

রোবটের ক্রমবর্ধমান ব্যবহার বৈশ্বিক অর্থনীতি, কর্মসংস্থান এবং সামাজিক সম্পর্কের ক্ষেত্রগুলোতে বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে রোবট এখন মানুষের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হয়ে উঠছে। তবে প্রশ্ন থেকে যায়-এই রোবটের ব্যাপক ব্যবহার কি মানুষের প্রয়োজনীয়তা কমিয়ে দিচ্ছে?

রোবটের ব্যবহার বৃদ্ধি এবং এর কারণ

রোবটের ব্যবহার সাম্প্রতিক সময়ে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। উৎপাদনশীল খাত, বিশেষ করে অটোমোবাইল, ইলেকট্রনিক্স এবং খাদ্য শিয়ো রোবটের ব্যবহার খুবই সাধারণ হয়ে উঠেছে। এর মূল কারণ হলো, রোবট কোনো নির্দিষ্ট কাজ অত্যন্ত নির্ভুলভাবে করতে সক্ষম, যা মানুষের পক্ষে সবসময় সম্ভব হয় না। রোবট দিনে ২৪ ঘন্টা কাজ করতে পারে, ছুটি বা বিশ্রামের প্রয়োজন হয় না, এবং ভুল করার সম্ভাবনাও অনেক কম। এজন্যই অনেক প্রতিষ্ঠান রোবটিক্স ব্যবস্থাকে তাদের উৎপাদন প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করছে, যাতে খরচ কমে এবং মুনাফা বাড়ে। অন্যদিকে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং মেশিন লার্নিং-এর অগ্রগতির ফলে রোবট আরও বেশি জটিল এবং চিন্তাশীল কাজও করতে সক্ষম হচ্ছে। যেমন, গাড়ি চালানো, শল্য চিকিৎসা, এবং গ্রাহক সেবা দেওয়ার মতো কাজও রোবট আজকাল সম্পন্ন করতে পারে। এর ফলে এমন কিছু কর্মস্থল তৈরি হচ্ছে, যেখানে রোবটের বিকল্প হিসেবে মানুষের কর্মশক্তির চাহিদা কমে যাচ্ছে।

রোবটের সাথে মানুষের সমন্বয়

যদিও রোবট কিছু ক্ষেত্রে মানুষের কাজকে প্রতিস্থাপন করছে, তবে মানুষের কাজ পুরোপুরি প্রতিস্থাপন করতে এখনও অনেক পথ বাকি। বিশেষ করে সৃজনশীল, কৌশলগত এবং সামাজিক যোগাযোগমূলক কাজগুলোতে রোবট এখনও মানুষের সমান দক্ষ হতে পারেনি। উদাহরণস্বরূপ, যেসব কাজের জন্য মানুষের
আবেগ, সহমর্মিতা বা মনস্তাত্ত্বিক বোঝাপড়ার প্রয়োজন, সেখানে রোবট বা AI-এর ভূমিকা সীমিত। অনেক ক্ষেত্রে রোবট এবং মানুষ একসাথে কাজ করছে, থাকে কোবটিক্স বলা হয়। এটি এমন একটি ধারণা যেখানে রোবট মানুষের কাজকে সহজতর করে। যেমন, কারখানায় ভারী বস্তু তোনার ক্ষেত্রে রোবট মানুষের সহায়ক হিসেবে কাজ করে, কিন্তু পুরো প্রক্রিয়াটি মানুষের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়।

কর্মসংস্থান: সংকট নাকি রূপান্তর?

রোবটের বাড়বাড়ন্তে সরাসরি কিছু ক্ষেত্রে মানুষের কর্মসংস্থানের সংখ্যা কমতে পারে, বিশেষ করে যান্ত্রিক এবং পুনরাবৃত্তিমূলক কাজগুলোতে। যেমন-কারখানার শ্রমিক, গুলামকর্মী, এবং কল- সেন্টার এজেন্টদের কাজ এখন রোবট বা এআই অটোমেশনের মাধ্যমে করা সম্ভব হচ্ছে। এর ফলে ঐসব ক্ষেত্রে চাকরির সংখ্যা কমে যাচ্ছে তবে, এটি কেবল সংকট নয়, বরং কর্মসংস্থানের ধরন বদলে যাচ্ছে। রোবটের উন্নয়ন, পরিচালনা, রক্ষণাবেক্ষণ, এবং প্রোগ্রামিংয়ের জন্য বিশেষজ্ঞদের প্রয়োজন হচ্ছে। সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, রোবটিক্স ইঞ্জিনিয়ার, এবং এআই ডেভেলপারদের চাহিদা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি।
এ ধরনের কাজগুলোতে উচ্চ দক্ষতা এবং প্রযুক্তিগত জ্ঞান প্রয়োজন, যা মানুষকে নতুন করে প্রস্তুতি নিতে বাধ্য করছে। এর অর্থ হলো, যান্ত্রিক কাজের সংখ্যা কমলেও, প্রযুক্তিগত এবং সৃজনশীল কাজের চাহিদা বাড়ছে।

মানবিক দক্ষতা ও রোবটের সীমাবদ্ধতা

রোবট যতই দক্ষ হয়ে উঠুক, মানবিক কিছু কাজ এখনও
রোবটের দ্বারা প্রতিস্থাপন করা সম্ভব নয়। সুজনশীলতা, আবেগপ্রবণতা, এবং জটিল সামাজিক সমস্যার সমাধান মানুষের বৈশিষ্টা, যা কোনো রোবটের পক্ষে অর্জন করা অসম্ভব। যেমন-শিক্ষা, মনোবিদ্যা, এবং কাস্টমার সার্ভিসের মতো পেশাগুলোতে মানুষের উপস্থিতি অপরিহার্য। একজন শিক্ষক শুধু তথ্য সরবরাহ করেন না, শিক্ষার্থীদের আবেগগত এবং সামাজিক উন্নয়নেও সহায়তা করেন, যা রোবটের পক্ষে সম্ভব নয়। রোবটগুলি একটি নির্দিষ্ট নিয়ম এবং নির্দেশনার উপর

ভিত্তি করে কাজ করে, যেখানে মানুষের প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং সৃজনশীল সমাধান প্রদান করার ক্ষমতা রয়েছে। ভাই, যতই রোবটের উন্নয়ন ঘটুক, মানবিক গুণাবলীর চাহিদা এখনও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ এবং তা ভবিষ্যতেও থাকবে। রোবটগুলি একটি নির্দিষ্ট নিয়ম এবং নির্দেশনার উপর ভিত্তি করে কাজ করে, যেখানে মানুষের প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং সৃজনশীল সমাধান প্রদান করার ক্ষমতা রয়েছে। তাই, যতই রোবটের উন্নয়ন ঘটুক, মানবিক গুণাবলীর চাহিদা এখনও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ এবং তা ভবিষ্যতেও থাকবে।

ভবিষ্যতের শ্রমবাজার

রোবটের ব্যাপক ব্যবহার শ্রমবাজারের অনেক ক্ষেত্রেই পরিবর্তন নিয়ে আসছে। যেসব কাজ যান্ত্রিক এবং পুনরাবৃত্তিমূলক, সেসব ক্ষেত্রে রোবট মানুষের বিকল্প হিসেবে কাজ করছে। তবে, মানবিক বৈশিষ্ট্য ও সৃজনশীলতা যেখানে প্রয়োজন, সেখানে মানুষের চাহিদা কমছে না। ভবিষ্যতের শ্রমবাজারে মানুষের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি হচ্ছে-প্রযুক্তির সঙ্গে খাপ খাওয়ানো এবং নতুন দক্ষতা অর্জন করা। তবে, এই পরিবর্তনগুলো শুধু সংকট নয়, বরং নতুন সম্ভাবনারও জন্ম দিচ্ছে। রোবটের সঙ্গে সহাবস্থানে কাজ করার দক্ষতা এবং প্রযুক্তিগত জ্ঞান অর্জনই ভবিষ্যতের কর্মসংস্থানের মূল চাবিকাঠি হয়ে উঠবে।
পরিশেষে যেহেতু রোবটগুলি একটি নির্দিষ্ট নিয়ম এবং নির্দেশনার উপর ভিত্তি করে কাজ করে, যেখানে মানুষের প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং সৃজনশীল সমাধান প্রদান করার ক্ষমতা রয়েছে। তাই, যতই রোবটের উন্নয়ন ঘটুক তার কাজ একঘেয়ে, ঝুঁকিপূর্ণ এবং শ্রমঘন কাজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ