স্কেটিংয়ে মুক্তি খোঁজে যে নারীরা
স্কেটিংয়ে ‘মুক্তি’ খুঁজছেন একদল নারী৷ নাইরোবিতে এতে পুরুষের অংশগ্রহণই বেশি ছিল এতকাল৷ এই পরিস্থিতি বদলাতে কাজ করছেন দুই স্কেটবোর্ডার৷ নানা প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছেন তারা৷
নাইরোবিতে শুধু নারীদের স্কেট ক্লাব আছে৷ তবে সেখানে শুধু স্কেট শেখানো হয় না, বরং ক্লাবটির পরিধি অনেক বিস্তৃত৷ কেনিয়ার তরুণীদের ক্ষমতায়নে ভূমিকা রাখছে গার্ল স্কেট নাইরোবি৷ পাশাপাশি পুরুষ অধ্যুষিত এক ক্রীড়ায় নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে লড়ছে ক্লাবটি৷
স্কেটবোর্ডার অ্যান্টোনেট আপোনডি বলেন, ‘‘আমার কাছে গার্ল স্কেট নাইরোবি এমন নিরাপদ স্থান, যেখানে আমি আসতে পারি এবং স্কেট করতে পারি৷ এখানে নারীরা আসেন, ক্ষমতায়িত হন৷ এখানে যে-কেউ আসতে পারেন এবং প্রতিনিধিত্ব করতে পারেন৷ এটা সত্যিই চমৎকার স্থান৷”
অ্যান্টোনেট এবং জেলিমো ‘গার্ল স্কেট নাইরোবি’ প্রতিষ্ঠা করেন৷ এটা শুধু নারীদের গতানুগতিক কোনো আড্ডাস্থল নয়৷ এটি স্কেটবোর্ডিংয়ে নারীদের অন্তর্ভুক্তির জন্য কাজ করছে৷ এমনকি ইতোমধ্যে তারা আন্তর্জাতিক স্কেটবোর্ড তারকা টনি হওক-এর মনোযোগ আকর্ষণেও সক্ষম হয়েছেন৷ ভাবছেন, তারা এতদূর কীভাবে গেছেন? সেটা পরে বলছি৷ আগে দেখি তারা ঠিক কী করছেন?
স্কেটবোর্ডার জেলিমো চেবোই বলেন, ‘‘গার্ল স্কেট নাইরোবি স্কেটবোর্ড করা নারীদের একটি কমিউনিটি৷ আমি যখন দুই বছর আগে স্কেটিং শুরু করি তখন খুব একটা নারী স্কেটার দেখিনি৷ মূলত শুধু পুরুষ স্কেটার দেখতাম৷ তাই আমি ২০২৩ সালে অ্যান্টোনেটের সঙ্গে মিলে নাইরোবির নারী স্কেটারদের কীভাবে একত্র করা যায় সেই আলোচনা শুরু করি৷ তখন আমরা একটি ইন্সটাগ্রাম পাতা চালু করি, পরে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ চালু হয় আর এখন এই পর্যায়ে আছি৷”
আরেক স্কেটবোর্ডার অ্যান্টোনেট আপোনডি বলেন, ‘‘আমাদের এখন নির্দিষ্ট সময়সূচি রয়েছে৷ মেয়েদের একটি স্কেটিং টিম এখন অনুশীলন করছে৷ আমরা এই মুহূর্তে এখানে পার্কে রয়েছি৷ আমরা কীভাবে স্কেট করি, একসঙ্গে স্কেটিংয়ের জন্য আমাদের একটি সময়সূচি রয়েছে৷ আমরা সপ্তাহে দুবার স্কেট পার্কে এসে স্কেট করি৷ আমরা শাঙ্গিলিয়া স্কেট পার্কে আসি, আমরা মলে যাই এবং স্ট্রিট স্কেটও করি৷”
এখন অবধি ৫০ জনের মতো নারী এই ক্লাবের মাধ্যমে স্কেটিং শিখেছেন৷ আর অধিকাংশ নারীর ক্ষেত্রে ক্লাবটি একটি সহায়তা ব্যবস্থা হিসেবেও কাজ করে৷
স্কেটবোর্ডার ক্লারা ওমল বলেন, ‘‘একজন স্কেটবোর্ডার হিসেবে গার্ল স্কেট নাইরোবি আমার কাছে একটি চমৎকার সহায়তা ব্যবস্থা৷ আমি কিছুদিন ধরে স্কেটবোর্ডিং করছি এবং দেখেছি যে পার্কে যাওয়ার এবং আমার মতো অন্য কারো সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়াদি নিরুৎসাহিত করা হয়৷ সুতরাং একজন তরুণ স্কেটবোর্ডার হিসেবে এই জায়গাটি আমার জন্য উৎসাহব্যাঞ্জক৷”
স্কেটবোর্ডার ট্রেসি আকিনি মনে করেন, ‘‘আমি গার্ল স্কেট নাইরোবির প্রশংসা করি, কেননা, আবেগগতভাবে আমি সুস্থ, কিন্তু মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলাম৷ আমি মানুষের সঙ্গে মিশতে পারতাম না৷ কিন্তু এখানে আসার পর আমি নিজেকে প্রকাশ করতে পারছি এবং সামাজিক মেলামেশার ক্ষেত্রেও আমার উন্নতি হয়েছে৷ এই কারণে আমি অত্যন্ত সন্তুষ্ট৷”
গার্ল স্কেট নাইরোবি স্কেটবোর্ডিংয়ের চেয়েও বেশি কিছু করছে৷ এটির সদস্যরা লিঙ্গ সমতা আনতে এবং ক্রীড়াজগতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে প্রচারণা চালাচ্ছেন৷
স্কেটবোর্ডার অ্যান্টোনেট আপোনডি বলেন, ‘‘গার্ল স্কেট নাইরোবি সামাজিক সমতার মতো সামাজিক বিচারের প্রতি সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করছে৷ আমাদের দলের এক নারী প্যাড তৈরি করেন এবং আমরা সেই প্যাড মেয়েদের মাঝে বিনামূল্যে বিতরন করতে পারছি৷”
নারী স্কেটবোর্ডারদের এই কমিউনিটি বিভিন্ন উদ্যোগ শুরুর সময় সীমিত সম্পদের কারণে নানা প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ে৷
স্কেটবোর্ডার জেলিমো চেবোই বলেন, ‘‘আমরা আসলে অনেক প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়েছি৷ প্রথম কথা হচ্ছে, আমরা সবাই নারী, আমরা সবাই মেয়ে৷ আর মেয়ে হিসেবে আপনি শুরুতেই বৈষম্যের লক্ষ্য হয়ে যান৷ আরেকটি প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে নাইরোবিতে স্কেটিং করা কঠিন৷ একজন নারী হিসেবে একা স্কেট করতে পারবেন না৷ রাস্তায় এটা বেশ বিপজ্জনক৷”
সৃজনশীল এক আউটলেট এবং নিজেকে প্রকাশের এক স্থান হিসেবে গ্রুপটি তৈরি হয়েছে৷
অনন্যা/এআই