এআই কাজে লাগিয়ে সংগীত সংরক্ষণের প্রচেষ্টা
বিশ্বায়নের চাপে স্থানীয় পর্যায়ের সংস্কৃতি, সংগীত, ভাষা ইত্যাদি হারিয়ে যাচ্ছে৷ কিন্তু আধুনিক প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে সেই ঐতিহ্য বাঁচানো যে সম্ভব, দক্ষিণ অ্যামেরিকায় এমন এক অভিনব উদ্যোগ চলছে৷
ল্যাটিন অ্যামেরিকার সংগীতের উপর অ্যালগোরিদমের প্রভাব নিয়ে নিকোলাস মাডোরে ও ফিউচারএক্স টিম গবেষণা করছে৷ বিষয়টি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘‘কোনো এআই মডেলের পক্ষে ল্যাটিন অ্যামেরিকার মতো কোনো অঞ্চলের জটিলতা ও নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য বোঝা কঠিন৷ সেটাই হলো চ্যালেঞ্জ৷ আমাদের অঞ্চলের প্রতিনিধিত্ব করবে, এমন সব টুল আমরা কীভাবে সৃষ্টি করবো?”
ল্যাটিন অ্যামেরিকার ১৬টি দেশে সমীক্ষা চালিয়ে দেখা গেছে, যে সৃজনশীল মানুষ এআই-এর এখনো সম্পূর্ণ সদ্ব্যবহার করছেন না৷ নিকোলাস মাডোরে মনে করেন, মূলত প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্টের জন্য আমরা এআই কাজে লাগাই, সৃজনশীল কাজের জন্য নয়৷
ল্যাটিন অ্যামেরিকার সব প্রান্তের সংগীতশিল্পীরা ফিউচারএক্সের জন্য কাজ করেন৷ মিউজিক প্রোডাকশনে এআই-এর প্রয়োগ খতিয়ে দেখতে তাঁরা নানা এআই টুল ব্যবহার করে একটি গান সৃষ্টি করেছেন৷ সেই উদ্যোগ সম্পর্কে নিকোলাস বলেন, ‘‘আমাদের ছয় থেকে আট মাস সময় লেগেছে৷ আমরা একাধিক টুল ব্যবহার করে নানা পরীক্ষানিরীক্ষা করেছি৷ প্রথম দিকে শুনলে বুঝতেই পারতেন না, যে আমরা এআই ব্যবহার করছি৷ বেশিরভাগই বাদ্যযন্ত্র৷ পরে আমরা বিখ্যাত ল্যাটিন অ্যামেরিকান গায়কদের কণ্ঠ দিয়ে এআই মডেলকে প্রশিক্ষণ দিয়েছি৷”
সেই গানে বেশ এক্সপেরিমেন্টাল সাউন্ড রয়েছে৷ কিন্তু সেই প্রচেষ্টা ধ্বনি গবেষকদের মূল্যবান কিছু উপলব্ধি দিয়েছে৷ নিকোলাস বলেন, ‘‘সেই গান আসলে আমাদের কণ্ঠ, নারী এবং নানা কণ্ঠের মেলবন্ধনের কাহিনি শোনাবে, এমনটাই ভাবা হয়েছিল৷ ভালো গান সৃষ্টি করা মোটেই মূল উদ্দেশ্য ছিল না৷ বরং সব কণ্ঠ একত্র করলে কী ফল হয়, সেটাই জানতে চেয়েছিলাম৷ এটা অনেকটা ‘মেগা ভয়েস’ সৃষ্টির প্রচেষ্টা৷”
অন্যান্য সংগীতশিল্পী ও বিজ্ঞানীদের সঙ্গে মিলে তিনি এআই অডিও টুলগুলিকে নিজের দেশের সংগীতের ঐতিহ্য শেখাচ্ছেন৷ সেটা না করলে অনেক আঞ্চলিক সাংগীতিক শৈলি হারিয়ে যাবে বলে তার মনে আশঙ্কা রয়েছে৷ নিকোলাস মাডোরে বলেন, ‘‘আমার মতে, এআই-কে কীভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, তা জানা জরুরি৷ এমন সব মডেল ব্যবহার করে আমাদের সংস্কৃতির মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হওয়া কাম্য নয়৷ বরং প্রযুক্তি আমাদের সাংস্কৃতিক পরিচয় আরো গভীর করবে এবং স্থানীয় ঐতিহ্যগত সংগীত সবার নাগালে নিয়ে আসবে, এমনটাই কাম্য৷”
অনন্যা/এআই