নারীর স্বাবলম্বী হওয়ার শক্তি পরিবার
পরিবারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন একজন নারী। মা, মেয়ে, বোন কিংবা স্ত্রী, প্রতিটি রূপেই তিনি নিজেকে ফুটিয়ে তোলেন সমানভাবে। সবসময় নিজের স্বপ্নের কথা না ভেবে পরিবারের কথা চিন্তা করেন কিংবা লোকে কি বলবে, সে চিন্তা করে নিজেকে চার-দেয়ালে বন্দি করে রাখেন তিনি। কিন্তু নারীরাও পারে পুরুষের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে। ঘর সামলানো থেকে অফিস, সব জায়গায় নিজেদের অবস্থান তুলে ধরতে পারেন একজন নারী। কিন্তু নারীর স্বপ্ন-পূরণে তার পাশে থাকবে কে?
নারীর স্বপ্ন পূরণে তার পাশে থাকতে পারে তার পরিবার। তার পরিবারই তাকে দিতে পারে শক্তি, ভরসা। বাইরে থেকে অনেকে অনেক কথা বলে নারীকে পিছিয়ে দিতে চাইবে, কিন্তু নারীকে এই সব বাঁধা অতিক্রম করে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে শুধুমাত্র তার পরিবার।
একজন বাবা তার মেয়ের ভালো বন্ধু হতে পারে। ঠিক একইভাবে ভাইও বোনের ভালো বন্ধু হতে পারে। কারণ ভাইবোন একইসাথে বেড়ে উঠে, তাই তাদের মধ্যে নিবির সম্পর্কও গড়ে উঠে। একজন মেয়ের ইচ্ছাপূরণে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে পারেন বাবা ও ভাই। মেয়ে ১৮ বছর হলেই তার বিয়ে দিতে হবে কিংবা মেয়েদের বেশি পড়াশোনা করিয়ে কি হবে, এসব চিন্তাধারার বাইরে গিয়ে মেয়েকে পড়াশোনা করান বাবা। আবার সমাজের বিরুদ্ধে গিয়ে বোনকে তার লক্ষ্যে পৌছাতে সাহায্য করতে পারে তার বড় ভাই। সমাজে মেয়েদের পড়াশোনা, চালচলন নিয়ে সবসময়ই নেতিবাচক কথা ভেসে উঠে এসব থেকে মেয়েকে রক্ষা করতে পারে তার পরিবার। শুধু যে বাবা কিংবা ভাই মেয়ের স্বপ্ন পূরণে সারথি হতে পারে এমনটা নয়। স্বামীও তার স্ত্রীর স্বপ্ন পূরণে সহায়ক হতে পারে।
ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় বেগম রোকেয়া, নুরজাহান বেগম, নীলিমা ইব্রাহিম, সুফিয়া কামালের মতো ইতিহাস রচনাকারী নারী। যারা নারী জাগরণ ও নারীর অগ্রযাত্রায় নিজের জীবন অতিবাহিত করেছেন তাদের সকলের স্বপ্ন পূরণের সারথি ছিল তাদের পরিবার। অর্থাৎ পরিবারের সমর্থনে নারীরা সকল বাধা অতিক্রম করে নিজেদের অবস্থান তৈরি করতে পারে।
গ্রামীণ পরিবেশে মেয়েদের বয়স ১৮ বছর হওয়ার আগেই তাদের বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়। অনেক সময় দেখা যায় অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী যারা বিদ্যালয়ে প্রথম সারীর শিক্ষার্থী। তাদের স্বপ্ন থাকে বড় হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে কিছু করা। কিন্তু পরিবারের চাপে বিয়ে করে দেখা যায় যে, তারা নিজেদের পায়ে দাঁড়ানো তো দূরের কথা ঘর-সংসারের বাইরে নিজেদের ভাবতে পারেন না। নিজেদের স্বপ্নের ইতি টেনে দেয়। তাদের মেধা বিকশিত হবার পরিবর্তে চার দেয়ালের ভিতর আটকা পরে যায়।
নারীরাও যে পারে তা তুলে ধরতে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে তার পরিবার। সমাজ নানানভাবেই নারীদের আটকে রাখার চেষ্টা করে ও করবে। আর এই বাধা অতিক্রম করতে হলে সমাজের বিপরীতে গিয়ে দাঁড়াতে হয় নারীদের। তাই এই সময় যদি তাদের পাশে কেউ না থাকে তাহলে তারা পিছনের দিকেই পিছিয়ে যাবে, সামনে আর তাদের আগানো হবে না। একজন মেয়ে তার বাবার কাছে যে স্বাধীনতা পায় সেই স্বাধীনতা তাকে অন্যকেউ নাও দিতে পারে। তাই একজন বাবাই পারে মেয়ের স্বপ্ন-পূরণে প্রধান সহায়ক। একজন ভাই পারে সমাজের নেতিবাচক কথা থেকে বোনকে রক্ষা করতে, বোনের ঢাল হয়ে বোন সমাজের কটূ কথা থেকে রক্ষা করতে। নারীর স্বপ্ন-পূরণের আরেকজন বড় সারথি হলেন তার স্বামী। বিয়ের পর মেয়েদের জীবন ঘরের চার-দেয়ালে আটকে না রেখে তাকে স্বাধীন ভাবে চলতে দেওয়া এবং তার পাশে ছায়া হয়ে দাঁড়ানো, এসবকিছু করতে পারে একজন স্বামী।
একজন নারী যেমন মা, মেয়ে, বোন কিংবা স্ত্রী প্রতিটি অবস্থানেই নিজের অবস্থান ফুটিয়ে তুলতে পারে। ঠিক সেভাবেই সমাজের সকল বাধা অতিক্রম করে একজন নারীর স্বপ্ন পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে তার বাবা, ভাই কিংবা স্বামী। অর্থাৎ নারীর স্বপ্নের সারথি হতে পারে তার পরিবার। পরিবারের সহায়তায় নারীরা স্বাবলম্বী হয়ে উঠতে পারে। নিজের পরিচয় তৈরি করতে পারে। নারীকে স্বাবলম্বী করতে পরিবারের পাশে থাকা জরুরি। একটি পরিবার পিছনে থেকে নারীকে যে শক্তি দিবে তা অন্য কোথাও থেকে পাওয়া যাবে না। অর্থাৎ নারীর স্বাবলম্বী হওয়ার শক্তি তার পরিবার।
অনন্যা/এসএএস