Skip to content

২৬শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | মঙ্গলবার | ১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশে মেয়েদের ক্রীড়ায় সাফল্যের আড়ালে ভিন্ন চিত্র

“দেশের অর্ধেক জনসংখ্যাই নারী। তাদের পিছিয়ে রেখে দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব নয়”-বহুবার বলা এই কথা বুধবার নতুনভাবে আবারো বলেছেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রী নাজমুল হাসান নারী উদ্যোক্তাদের এক পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে।

এই অনুষ্ঠানে তিনি দাবি করেছেন বাংলাদেশে এখন নারীদের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন হয়েছে। প্রশাসন, বিচার বিভাগ, পুলিশ বিভাগ সহ সর্বত্র আজ নারীরা চাকরীর সুযোগ পেয়েছে।”নারীরা আজ দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে।”

কিছু নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে নারীর এগিয়ে যাওয়ার দাবি করলেও নাজমুল হাসান যে বিষয়ে বিশেষ ভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত সেই ক্রীড়াঙ্গন নিয়ে এই অনুষ্ঠানে তিনি তেমন কিছু আলাদা করে বলেননি। অথচ সমাজের অন্য অনেক ক্ষেত্রের চেয়ে এখানে নারীর উপস্থিতি অনেক বেশি। তাদের সাফল্যও সামান্য নয়। কিন্তু নারীর ক্ষমতায়ন বলতে যা বোঝায় বাংলাদেশে সেটি কতটুকু হয়েছে তা তর্কসাপেক্ষ।

প্রায় এক যুগ বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি নাজমুল হাসান। কিন্তু এখানে এখন পর্যন্ত তার কোনো নারী সহকর্মী নেই। মাঠে বাংলাদেশ নারী দল সরব। কিন্তু মাঠের বাইরের চিত্রটা ফাঁপা। খেলাধুলার সঙ্গে সম্পৃক্ত এমন কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে শুধু ক্রিকেট নয়, গোটা ক্রীড়াঙ্গন জুড়েই নারীদের কিভাবে অবহেলা করা হচ্ছে তার বড় একটা চিত্র খুঁজে পাওয়া গেছে।

ক্রিকেট প্রসঙ্গেই শুরুতে আসা যাক। ২০২১ সালে বাংলাদেশ নারী দল টেস্ট স্ট্যাটাস পেয়েছে। এখনো কোনো টেস্ট ম্যাচ খেলতে পারেনি। টেস্টের জন্য প্রস্তুত হতে যে ঘরোয়া অবকাঠামো দরকার সেটাই এখনো তৈরি হয়নি। ক্রিকেটে মেয়েদের সাফল্য বা সম্ভাবনা যেমনই থাকুক, তাদের জন্য ঘরোয়া প্রতিযোগিতা রয়েছে হাতে গোনা দুই একটা।

মূল যে প্রতিযোগিতা, প্রিমিয়ার লীগ, গত দুই বছর তা হয়েছে মে-জুন মাসে। সর্বশেষ জাতীয় লীগ হয়েছে ২০২২ সালের অগাস্টে। বাংলাদেশে জুন-জুলাই-অগাস্ট এই সময়টা ক্রিকেট খেলার জন্য খুব একটা উপযুক্ত সময় নয়। বৃষ্টিতো থাকেই, আবহাওয়া একটু শুকনো হলে গরমও থাকে তীব্র। অনেক ম্যাচই বৃষ্টিতে কাটা পড়ে। যে ম্যাচ গুলো কোনভাবে শেষ করা যায় তাতেও মানসম্পন্ন ক্রিকেট খেলাটা দুরূহ হয়ে পড়ে।

বর্ষায় মেয়েদের ঘরোয়া লীগ আয়োজনের মূল কারণ মাঠ সংকট। ক্রিকেট টুর্নামেন্টের সংখ্যা বাড়লেও বাড়েনি মাঠের সংখ্যা। হাতে গোনা অল্প কয়েকটা মাঠে পুরুষ দল ও বয়স-ভিত্তিক দলগুলোর ঘরোয়া প্রতিযোগিতার আয়োজন হয়। সবার প্রয়োজন শেষ হলে আয়োজন করা হয় মেয়েদের টুর্ণামেন্ট। অনেক পরিবারে যেমন হয়, সবার খাওয়া শেষে মায়েরা, বৌয়েরা খেতে বসেন। তাতে তাদের পুষ্টির চাহিদা পূরণ হলো কি-না খোদ পরিবারের লোকজনই সেই খবর রাখে না।

কয়েক মাস আগে বিসিবির নারী উইংয়ে যোগ দিয়েছেন সাবেক জাতীয় অধিনায়ক হাবিবুল বাশার। কাজ শুরু করার পর প্রথম যে দু’টি সমস্যা তার চোখে পড়েছে তা হচ্ছে পর্যাপ্ত খেলোয়াড়ের অভাব আর অসময়ে মেয়েদের ঘরোয়া প্রতিযোগিতার আয়োজন। “এই মুহূর্তে খুব বেশি অপশন আমাদের হাতে নেই। অপশন বাড়ানোটা খুবই দরকার। বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। প্রয়োজন সঠিক সময়ে ঘরোয়া ক্রিকেট আয়োজন।

“আমি আগেও দেখেছি, এবারও দেখছি, প্রিমিয়ার লিগ শুরু হচ্ছে জুন মাসে। এটা একদমই রাইট টাইম না খেলার জন্য। প্রিমিয়ার লিগ খুবই ইম্পর্টেন্ট একটা টুর্নামেন্ট। এই সময়ে প্রচণ্ড গরম থাকে, বৃষ্টির কারণে অনেক খেলা পরিত্যক্ত হয়ে যায়। সঠিক সময়ে টুর্নামেন্ট আয়োজন করা জরুরি। আমাদের অনেক কাজ করতে হবে। অড টাইমে টুর্নামেন্ট করলে খেলোয়াড় তুলে আনা কঠিন।”

দায়িত্ব নিয়ে বাশার দেখেছেন অন্য দেশগুলো মেয়েদের ক্রিকেটেও অনেক এগিয়ে গেছে, স্কিল এবং ফিটনেস দুই দিক দিয়েই। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের উপায় হিসেবে খেলোয়াড় সংখ্যা বাড়ানোর কথা বলছেন। বাশার জানিয়েছেন, তারা বিভিন্ন স্কুলে যাওয়া শুরু করেছেন। মেয়েদের ক্রিকেট খেলার জন্য বোঝাচ্ছেন। “আমরা স্কুলে যাচ্ছি, মেয়েদের বলছি ক্রিকেটে আসতে। এটা মেক শিউর করতে পারলে ক্রিকেট অনেক কম্পিটিভ হবে। “

তার এই উদ্যোগ কতোটা ফল দেবে সেটা সময়ই বলে দিবে। কিছুটা আশার কথা শুনিয়েছেন সাথিরা জাকির জেসি। আলোচিত এক ঘটনায় ক’দিন আগে প্রিমিয়ার লিগে আম্পায়ার হিসেবে তার অভিষেক হয়েছে। ২০১৩ সালে খেলা ছাড়ার পর আম্পায়ার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে জেসির সময় লেগেছে প্রায় এক দশক। জেসির পরে আরো একটা প্রজন্ম এখন খেলা ছেড়ে দেওয়ার পথে। নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই জেসি বলেছেন, চাইলে মেয়েরাও এখন ক্রিকেটকে পেশা হিসেবে নিতে পারে পুরোদস্তুর। এটা যে কেবল খেলোয়াড় হিসেবে তা নয়। খেলা ছাড়ার পর ও মেয়েরা নানা ভাবে ক্রিকেটে নিজেকে জড়িয়ে রাখতে পারে।

“এই জায়গাটায় অনেক অপশন আছে মেয়েদের এখন, যেটা একটা সময় ছিল না। একটা সময় প্লেয়াররা চিন্তা করতো আমি যদি খেলাটা ছাড়ি তাহলে কি করব। আমাদের জীবনের পিক টাইমটা আমরা তো খেলার মধ্যেই দিয়ে দিয়েছি, এই সময়টা হয়তো অনেকের চাকরি শুরু করার সময়, বা খেলতে খেলতে অনেকের চাকরির বয়স চলে যায়। খেলা শেষ হওয়ার পর দেখা যায়, না চাকরি করার অপশন থাকে, না অন্য কিছু করার অপশন থাকে।”

নিজে আম্পয়ারিংয়ে জড়িত হয়েছেন বলে এটাকে ভাল একটা অপশন বলছেন জেসি। পাশাপাশি, মেয়েদের কাজ করার আলাদা কয়েকটি ক্ষেত্রও চিহ্নিত করেছেন। ধারাভাষ্য, স্কোরিং, কোচিং এসবে জড়িত হয়ে ক্যারিয়ার গড়তে পারেন অনেক নারী ক্রিকেটার।

“আমাদের জাতীয় দলে এখনো কোনো মেয়ে নির্বাচক নাই, মেয়ে ম্যানেজার নাই। সালমারা খেলা ছাড়ার দিকে। যদি ক্রিকেট বোর্ড চিন্তা করে হ্যাঁ সালমা আমাদের লিজেন্ড ক্রিকেটার, তাকে আমি নির্বাচক করে দিলাম, বা স্পিন কোচ করে দিলাম, সেটা কিন্তু করার অনেক অপশন আছে।”

কাজ করার এই ক্ষেত্র গুলো এখনো নতুন। প্রতিযোগিতা কম। “এখন যদি কেউ আসে, মোটামুটি ভাল করলে খেলার পরেও একটা নতুন প্রফেশন শুরু করার সময় আছে,”- বলেছেন জেসি।

তবে এই বিষয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের অনেক কিছুই যে করণীয় আছে সেটা বলেছেন প্রথম প্রজন্মের নারী ক্রিকেটার পারভীন নাসিমা নাহার পুতুল। ১৯৮৩ সালে ইডেনে খেলা বাংলাদেশ নারী দলের উইকেটকিপার ছিলেন তিনি, পরে কোচিংয়ে জড়িত ছিলেন। “আমার বিসিবির কাছে একটাই অনুরোধ। বিসিবি জানে কোন কোন নারী কোথায় কাজ করছে। বিসিবি যদি তাদের এক জায়গায় করে তবে অবশ্যই ভাল ফল পাবে-” বলেছেন তিনি।

ইডেনের সেই ম্যাচে পুতুলের সতীর্থ ছিলেন মনোয়ারা আনিস খান। ক্রীড়াঙ্গনে মিনু আপা নামে যার পরিচিতি। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের প্রথম এবং এখন পর্যন্ত একমাত্র নারী পরিচালকও তিনি। ২০০৭-০৮ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে কাজ করেছেন। তার পদের পোশাকি নাম ছিল উপদেষ্টা। এখন একজন পরিচালক যে ভূমিকায় থাকেন, সেই সময় সেই ভূমিকাতেই ছিলেন মনোয়ারা।

রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর ক্রিকেট বোর্ডের প্রশাসনিক কাঠামোতেও অনেক পরিবর্তন এসেছে। তবে সেই পরিবর্তনে ঠাঁই হয়নি কোনো নারীর, যা হওয়া উচিত ছিল বলে মনে করেন তিনি। বোর্ডের এখন যা সিস্টেম, এটা পুরোপুরিই তাদের উপর নির্ভর করে বলে তিনি মনে করেন। “তারা যদি চায় আরো ইনক্লুড করতে পারে।” পরিচালকতো বটেই, বিসিবির কোনো স্থায়ী কমিটিতেও কোনো নারী নেই এখন, এমনকি নারী বিভাগেও। এটা নিয়ে আক্ষেপ ঝরেছে তার কণ্ঠে।

ক্রিকেটে যা নেই, ফুটবলে কিন্তু তা আছে। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের নির্বাহী কমিটির সদস্য মাহফুজা আক্তার কিরণ কেবল ফুটবল ফেডারেশন নয়, ফিফাতেও গোটা এশিয়া মহাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তার দায়িত্বে থাকাকালীন সময়ে বাংলাদেশে মেয়েদের ফুটবলে বেশ কিছু সাফল্যও এসেছে। এখনতো বাংলাদেশ সাফেই চ্যাম্পিয়ন। কেবল জাতীয় দল নয়, মেয়েদের বয়স-ভিত্তিক ফুটবলেও এই মুহূর্তে দক্ষিণ এশিয়ার সেরা বাংলাদেশ।

কিন্তু প্রদীপের আড়ালের চিত্রটা ভিন্ন। সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে যখন ফুটবলার রাজিয়ারা মারা যান তখন সেই চিত্র কিছুটা দৃশ্যমান হয়। মেয়েদের ফুটবলে আর্থিক সামান্য যা-কিছু সুযোগ সুবিধা সেটা জোটে হাতে গোনা মাত্র কয়েকজনের।

ফুটবল সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের ওমেন্স এলিট ফুটবল একাডেমিতে বর্তমানে মোট ৮০ জন নারী ফুটবলার আছেন। নারী জাতীয় ফুটবল দলের পাশাপাশি অনূর্ধ্ব ১৬, অনূর্ধ্ব ১৯ ও অনূর্ধ্ব ২০ বয়স ভিত্তিক দলও আছে। নারী দলের স্পন্সর ঢাকা ব্যাংক। স্পন্সর থেকে পাওয়া অর্থ ক্যাম্প পরিচালনায় ব্যয় করা হয়, কিন্তু তাদের থেকে পাওয়া অর্থ দিয়ে বছর জুড়ে ক্যাম্প পরিচলনা করা সম্ভব হয় না। এই ক্যাম্পে প্রতি দিন একজন ফুটবলারের খাবার খরচই ৮৯০ টাকা। যা সব সময় যোগাড় করা কঠিন হয়ে যায়, জানিয়েছন বাফুফের কর্মকর্তা সাদমান সাকিব।

বেতনভুক্ত ফুটবলাররা তিনটি গ্রেডে বেতন পান। এ গ্রেডে ৫০ হাজার টাকা, বি গ্রেডে ১৫ হাজার টাকা আর সি গ্রেডে ১০ হাজার টাকা। সিংহ ভাগ ফুটবলার প্রতি মাসে এখন ৫০ হাজার টাকা করে পান। ফিফার অনুদান থেকে এই বেতন দেওয়া হয় বলে এটি নিয়ে ফুটবল ফেডারেশন খুব একটা সমস্যায় পড়ে না । তবে এই বেতন কাঠামোর বাইরে যেসব নারী ফুটবলার রয়েছেন তাদের সংগ্রামটা অনেক বেশি।

চলমান নারী ফুটবল লীগে কোন পেশাদার লীগের ক্লাব অংশ না নেওয়ায় ফুটবলারদের পারিশ্রমিক কাঠামো গতবারের তুলনায় অনেক কমেছে। অফিসিয়ালি এই মৌসুমে সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক ৪ লাখ টাকা। যদি গড় পারিশ্রমিক ধরা হয়, তাহলে আনুমানিক ৫০ হাজার টাকা হবে। এছাড়া এমন নারী ফুটবলার আছেন যারা শুধুমাত্র খাবার ও যাতায়াত ভাতা পেয়েই লীগ খেলছেন – জানিয়েছেন বাফুফেরই এক কর্মকর্তা।

সিনিয়র ক্রীড়া সাংবাদিক আনিসুর রহমান যেমন বলছিলেন, “পেশাদার লীগের ক্লাব গুলো একজন খেলোয়াড়কে যে টাকা দেন, নারী ফুটবল লীগের সব ফুটবলারের সম্মিলিত পারিশ্রমিক তার চাইতেও কম।” ছেলেদের ফুটবলে টানা পাঁচবারের লীগ চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংস একটা সময়ে নারী ফুটবলেও আগ্রহী হয়ে উঠেছিল। কিন্তু মাত্র এক বছর পরই তারা নারী লীগ থেকে সরে দাঁড়ায়। এ নিয়ে বসুন্ধরা যদিও কখনো কোনো কারণ দেখায়নি। তবে অনেক নারী ফুটবলার ছেলেদের কাছাকাছি বেতন চাওয়াতে বসুন্ধরা সরে দাঁড়িয়েছে, ফুটবল সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র এরকমটাই দাবি করেছে।

নারী ফুটবল লিগে ফুটবলার ছাড়াও টেকনিক্যাল স্টাফ, কোচ, রেফারিদের অংশগ্রহণ থাকে। লিগ হলে তারাও আর্থিক ভাবে কিছুটা উপকৃত হন। তবে কারও জীবন জীবিকা এই লীগের উপর নির্ভরশীল নয় বলে মনে করেন এই কর্মকর্তা। নতুন ফুটবলার তৈরির উদ্যোগও সীমিত। গত কয়েক বছর সরকারি ভাবে আয়োজন করা হয় বঙ্গমাতা অনূর্ধ্ব-১৭ জাতীয় ফুটবল। নতুন খেলোয়াড় তুলে আনায় যা এখন একমা্ত্র ভরসা হয়ে আছে।

ফুটবল, ক্রিকেটের বাইরে অন্য খেলাগুলো অনেকটাই বাহিনী নির্ভর। একটা সময় পাটকল সংস্থা বিজেএমসি মেয়েদের খেলাধুলায় পৃষ্ঠপোষকতা করতো। পাটের যে দিন গেছে তা একেবারেই গেছে। রাষ্ট্রয়াত্ব পাট কল গুলো ব্যক্তির মালিকানায় তুলে দেওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। মেয়েদের খেলাধুলায় তারা আবারো পৃষ্ঠপোষকতা করবে সেই সম্ভাবনা তাই নেই বললেই চলে।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী অ্যাথলেটিক্স, সাঁতারের মত খেলা গুলোকে পৃষ্ঠপোষকতা করে। খেলাধুলার সুবাধে অনেক মেয়েই এই দুই বাহিনীতে চাকরি পান। এদের বাইরে বাংলাদেশ আনসার একটা বড় ভূমিকা পালন করে। ভারোত্তলন, শুটিং, কাবাড়ি, হ্যান্ডবল, আর্চারি, রোলার স্কেটিং সহ বেশ কিছু খেলায় তাদের নিজস্ব দল আছে। অনেক খেলোয়াড়ই আনসারে স্থায়ীভাবে চাকরী করেন।

যাদের তাৎক্ষণিক চাকরি দেওয়া সম্ভব হয় না, তারা ভাতা পান। জাতীয় প্রতিযোগিতায় সোনা জিতলে এই ভাতার পরিমাণ ১৮,০০০ টাকা। আর ব্রোঞ্জ জিতলে ৬,০০০ টাকা। জাতীয় প্রতিযোগিতা যেমন বছরে একবার হয় এই ভাতা তেমন বছরে একবারই মিলে। দুর্মূল্যের বাজারে এটা দিয়ে জীবিকা নির্বাহ কারো পক্ষেই সম্ভব হয়না।

খেলোয়াড়রা তাই আশায় থাকেন কখন স্থায়ী চাকরি হবে। সেটা হলেই যে তাদের শনৈ শনৈ উন্নতি হবে সে কথাও হলফ করে বলা যায়না। সাফ সোনা জয়ী ভারোত্তলক মাবিয়া আক্তার সীমান্ত যেমন জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে তার বেতন স্কেল ৯,০০০ টাকা। মার্চ পর্যন্ত তার মাসিক বেতন ছিল ১৪,০০০ হাজার টাকা। সম্প্রতি স্কেল পরিবর্তন হওয়া এটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০,০০০ টাকা। ক্রীড়াবিদ মাত্রই জানেন, এটা কত কম পরিমাণ টাকা। একজন ভারোত্তলক, যার খাবারের চাহিদা অন্য যে কোনো স্বাভাবিক মানুষের চেয়ে বেশি তার পক্ষে এই টাকা দিয়ে নিজের পারফর্মেন্স ধরে রাখা অনেক কঠিন।

মাবিয়া এখন মোটেও আশা করেন না এই পরিস্থিতির রাতারাতি উন্নতি হবে। “শোনেন, বাংলাদেশে কখনো সুযোগ সুবিধা বাড়ে না, আর যদি সেটা বাড়েও তা আমাদের কাছে আসে না।” বেশ আক্ষেপ নিয়েই বলছিলেন মাবিয়া।

২০১৬ সালে গুয়াহাটি সাফ গেমসে সোনা জয়ের মঞ্চে মাবিয়া যেদিন অঝোরে কাঁদছিলেন তার আবেগ দেশের অনেক মানুষকেই ছঁয়ে গেছে। সামান্য হলেও মাবিয়া তার সাফল্যে পুরস্কৃত হয়েছেন। কিন্ত যেসব ক্রীড়াবিদ পদক জয়ের মঞ্চে উঠতে পারেননি, তাদের অশ্রু ঝরছে দেশের প্রতিটি কোণে।

সেইসব মাবিয়াদের খোঁজ কেউ রাখেনি।

অনন্যা/এআই

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ