Skip to content

২০শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | বুধবার | ৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

স্বর্গরাজ্য জম্মু-কাশ্মীরে

পৃথিবীর সর্গরাজ্য বা ভূসর্গ বলা হয় কাশ্মীরকে। নিজের চোখে এই সর্গরাজ্য দেখার লোভ সবারই কম বেশি জেগে উঠে।
প্রকৃতির এই অপূর্ব সৃষ্টিকে কয়েকটি শব্দ দিয়ে বর্ণনা করা খুবই কঠিন। নিজের চোখে না দেখলে কাশ্মীরের সৌন্দর্য্য ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না। তাই সুযোগ হলে নিজের চোখে দেখার অভিজ্ঞতা মিস করবেন না।

সবুজ হিমালয়ের উঁচুতে অবস্থিত কাশ্মীর। পাহাড় আর পাহাড়, সবুজ উপত্যকা, ঝকঝকে হ্রদ, মন্দির, দর্শনীয় মুঘল আমলের উদ্যান, গাছের সারিবদ্ধ রাস্তা, সবুজ বাগান গাছে গাছে আপেল, অদ্ভুত কাঠের সেতু, জমজমাট বাজার, সুফি মাজার এবং দুর্গের আবাসস্থল সাথে সুস্বাদু কাশ্মীরি খাবার সব মিলিয়ে মনোরম এবং মনোমুগ্ধকর করে তুলে দুর্দান্ত এই পর্যটন অঞ্চলকে। অবিশ্বাস্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য সারা বিশ্বে সমাদৃত এই কাশ্মীর।
শীতকালে যেন কাশ্মীর একটি সাদা কার্পেটে ঢেকে যায়। নরম তুষারে আবৃত থাকে অঞ্চলটি। আবার গ্রীষ্মে যেন বরফের কার্পেট গলে ফোটে উঠে তৃণভূমিতে রংবেরঙের ফুল। কাশ্মীরে অতুলনীয় রূপে মুগ্ধ হয়েছিলেন ভারতের মোঘল সম্রাট বাদশাহ জাহাঙ্গীর এবং তিনিই করেছিলেন কাশ্মীরকে স্বর্গের সাথে তুলনা। এছাড়াও কাশ্মীর সবসময়ই সিনেমা পরিচালকদের পছন্দের শুটিং লোকেশন। বলিউড ছবিতে বারবার ঘুরে ফিরে এসেছে কাশ্মীরের নৈসর্গিক সৌন্দর্য।
উঁচু উঁচু পাহাড়ে ঘেরা আর সাদা বরফের মেলা পুরোটাই বা শহরটিই যেন স্বের্গর রাজ্য। দেখার মতো স্থান এখানে অভাব নেই, যেদিকে চোখ পরবে সেদিকই মনোমুগ্ধকর। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি স্থানের নাম হলো। 

শ্রীনগর: 
জম্মু ও কাশ্মীর এর গ্রীষ্মকালীন রাজধানী শ্রীনগর এবং প্রাচ্যের ভেনিস হিসাবে পরিচিত যা পশ্চিম কাশ্মীরের ঝিলম নদীর তীরে অবস্থিত। কাশ্মীর ঘুরতে গেলে পর্যটকদের সবার আগে শ্রীনগরই উঠতে হয় এবং ফেরার সময়ও শ্রীনগর হয়েই যেতে হয়। সুতরাং কাশ্মীর ভ্রমণের একটা বড় অংশ জুড়ে থাকবে শ্রীনগর।
এখানে ঘুরার জায়গাগুলো হলো মোঘল গার্ডেন, টিউলিপ গার্ডেন, হযরত বাল মসজিদ, ডাল লেকের ভাসমান শহর ও নাগিন লেক। জাব তাক হ্যায় জান এর আনুশকা শর্মার ‘জিয়ে রে’ গানটি কাশ্মীরের বিখ্যাত ডাল লেকেই শুটিং করা হয়েছে।

গুলমার্গ:

তাজ অফ কাশ্মীর বলা হয় গুরমার্গকে। শ্রীনগর থেকে ৫২ কিলোমিটার দূরে এবং ৮৮২৫ ফুট উপরে এই হিল স্টেশনে গেলে দ্বিধা সৃষ্টি হবেই যে এটি গুলমার্গ নাকি সুইজারল্যান্ডের কোনো বরফ ঢাকা শহর। এশিয়ার অন্যতম সেরা স্কিয়িং করার জায়গা রয়েছে গুলমার্গেই। এখানে বিংশ শতকে ব্রিটিশ শাসনের সময়ে স্কিয়িং ক্লাব তৈরি হয়। এটি সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয় রূপ নেয় এপ্রিল-মে মাসের মধ্যে যা গুলমার্গ ভ্রমনের উপযুক্ত সময়। আরও দেখার আছে, গন্ডোলা, গলফ কোর্স, বাবা ঋষির মাজার, আফারওয়াত পিক, সেন্ট ম্যারি চার্চ।

পেহেলগাম:
জুলাই থেকে অক্টোবরের মাঝে এখনে গেলে দেখা মিলবে রাস্তার দুধারের আপেল বাগান। আছে দেখার মতো অনেক কিছু এখানে- লিদার নদী, বেতাব ভ্যালি, চান্দেরওয়ারি, আরু ভ্যালি, ধাবিয়ান, কাশ্মীর ভ্যালি পয়েন্ট, কানিমার্গ, পেগেলহাম ভিউ পয়েন্ট।

সোনামার্গ:

সোনার তৃনভূমি এরজন্য বলা হয়ে থাকে এ যায়গাকে সোনামার্গ। সুন্দর উপত্যকা ও ঝর্ণার দেখা মিলবে এই সোনামার্গে। আরও আছে থাজিয়ান হিমবাহ। এছাড়াও আছে সিন্ধু নদী, স্লেজিং, স্নো বাইক ও ঘোড়ায় চড়ার সুযোগ। এছাড়াও ঘোরার জায়গার মধ্যে জাজিলা পাস, থাজিওয়াস গ্লেসিয়ার দুধপত্রী, কোকরনাগ, ডাকসুম কিংবা সিনথেনটপের সৌন্দর্য্য আরো অনেক মনোমুগ্ধকর। আহারবালের জলপ্রপাতটিও অনন্য এক গন্তব্য।

এতোকিছু শুনে নিশ্চয়ই মন টানছে একবার ভ্রমনের জন্য যাওয়ার এই সর্গরাজ্যে। তাহলে জেনে নিন –

কাশ্মীর যেভাবে যাবেন

কলকাতা থেকে সরাসরি কাশ্মীর বা জম্মু যাওয়ার দুটি ট্রেন আছে। হিমগিরি ও জম্মু তাওয়াই। হিমগিরি সপ্তাহে ৩ দিন যায় এবং সময় লাগে এতে ৩৫ ঘণ্টা ৩০ মিনিট। আর জম্মু তাওয়াই প্রতিদিন চললেও সময় একটু বেশি লাগে। ভাড়া পড়বে ১২০০ থেকে ৫০০০ পর্যন্ত স্লিপার,এসি থ্রি/টু টায়ার।
জম্মু নেমে শ্রীনগর যেতে হবে বাস বা রিজার্ভ কারে করে। বাসের ভাড়া পড়বে ‪৮০০-১৫০০‬ রুপি। আর গাড়ি ভাড়া পড়বে ৫০০০-৮০০০‬ রুপি পর্যন্ত। জম্মু থেকে শ্রীনগর যেতে সময় লাগবে ৮-১০ ঘণ্টা।

আর, এয়ারে কাশ্মীর যেতে হলে ঢাকা থেকে আন্তর্জাতিক বিমানে প্রথম যেতে হবে দিল্লি ইন্ধিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে, সেখান থেকে শ্রীনগর। অথবা ঢাকা থেকে কলকাতা যেতে হবে ট্রেনে বা বাসে করে, সেখান থেকে ডোমেস্টিক বিমানে জম্মু অথবা শ্রীনগর বিমানবন্দরে যাওয়া যাবে। কলকাতা থেকে সরাসরি শ্রীনগরে কোনো ফ্লাইট নেই তাই দিল্লী হয়ে যেতে হয়।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ