উষ্ণ দিনে হবু মায়ের বসন
নারী জীবনের প্রত্যেকটি পর্যায়ের মধ্যে সুন্দরতম একটি অধ্যায় গর্ভাবস্থা। পৃথিবীর সবচেয়ে শ্রেষ্ঠতম একটা অনুভূতির মধ্য দিয়ে যায় একজন মা অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায়। এ সময় সবচেয়ে আগে যে পরিবর্তনটা আসে সেটা হচ্ছে শারীরিক পরিবর্তন। এই শারীরিক পরিবর্তন দৈনন্দিন জীবনে বেশ প্রভাব ফেলে। গর্ভাবস্থায় নারীদের বিভিন্ন মানসিক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। এ সময় নারীদের সাধারণত মানসিক চাপও একটু বেশি থাকে।
আমাদের দেশে একধরনের ট্যাবু আছে যার কারণে অনেক সময় নারীদের একঘরে করে দেওয়া হয়। বলা হয়, এ সময় শুধুমাত্র বাচ্চার জন্য বেশি করে, খাবার দাবার আর বিশ্রামের প্রয়োজন। কিন্তু একজন অন্তঃসত্ত্বা নারীর এ সময়টাতে থাকা উচিত হাস্যোজ্জ্বল, উৎফুল্ল ও প্রাণবন্ত। আর এক্ষেত্রে পোশাক ও সাজগোজ অনেকটাই সাহায্য করতে পারে। সাজগোজ বলতে ভারি মেকআপ নয় নিজের যত্ন ও নিজেকে পরিপাটি রাখাকে বোঝানো হয়েছে। আমাদের দেশে সাধারণত গর্ভকালীন সময়ের পোশাক বলতে শুধু ম্যাক্সিকেই ধরা হয়। অনেকে তো আবার নিজেকে আড়ালই করে ফেলেন।
স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগের ডাক্তার শুভজিৎ রায় বলেন, এই সময়টা অন্য সময় থেকে আলাদা। এসময় পোশাক-আশাকে অবশ্যই পরিবর্তন আনতে হবে। একটু ঢিলে ঢালা পোশাকের দিকে নজর দিতে হবে। প্রতিদিনের পোশাক প্রতিদিন ধুয়ে ফেলতে হবে। সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পোশাক পড়তে হবে। কারণ এই সময়ে শ্বাস-প্রশ্বাসে অনেক ধরনের বাধা সৃষ্টি হয়। এছাড়াও পেটে চাপ পড়ে। অন্যান্য সমস্ত বছরে তুলনায় এই বছরের গরমের তাপমাত্রা অনেক বেশি। যা গর্ভবতী নারীদের সহ্য সীমানার বাইরে। তাই পোশাক আশাকের দিক থেকে প্রত্যেকটা গর্ভবতী নারীদের সচেতন থাকা আবশ্যক।
তবে যারা নিজেকে একঘরে করতে না চান, ঘরের ভেতরে ম্যাক্সি পরে থাকলেও বাইরে বেরুতে হলে আলাদা পোশাকের প্রয়োজন পড়ে। আর মাতৃত্বকালীন সময় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যেতে হলেও পোশাকের ব্যাপারে বিপাকে পড়েন তারা। তবে এক্ষেত্রে চিন্তার কিছু নেই, চাইলে বৈচিত্র্যময় পোশাক পরতে পারেন গর্ভবতী নারীরাও। মায়েদের আরামদায়ক বিভিন্ন ধরণের প্রচলিত ড্রেস রয়েছে। যা একাধারে ফ্যাশনেবল আবার আরামদায়ক। যেমন-
নার্সিং ড্রেস
মেটারনিটি বা নার্সিং ড্রেসকে এখন একটি সুন্দর পোশাক হিসেবে ধরা হয়। এই পোশাক শুধু স্টাইলিশ নয়, আরামদায়কও বটে। গাউন, মিডিস বা কাফতান পোশাক এই সময়ে ওয়্যার্ড্রোবে রাখতে ভুলবেন না যেন। বিভিন্ন ধরনের নকশা, উপাদান, রঙ ও ফ্যাশন-শৈলীর দিকে নজর রাখতে পারেন। এ ছাড়া সেই পোশাক দীর্ঘমেয়াদী ও বহুমুখী কাজের জন্য ফেব্রিক কিনা তা-ও দেখে নেবেন। এমন পোশাক বাছুন যা প্রসবের আগে ও পরে, দু’ সময়েই পোশাক পরতে পারেন।
লেগিংস
গর্ভাবস্থায়ও মেয়েরা একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত নিয়মিত অফিসে যান। তারা কিন্তু আরামসে লেগিংস পরে অফিসে যেতে পারেন। সুতি বা লিনেনের কুর্তির সঙ্গে লেগিংস খুবই মানানসই। বেশির ভাগ মহিলাই জিনস ও টপ পরতে বেশি স্বচ্ছন্দ বোধ করেন।
মেটারনিটি জিনস
গর্ভাবস্থায় জিনস পরাটা একটু চাপের হয়ে যায় কোনো কোনো সময়ে। এখন গর্ভবতী নারীদের কথা মাথায় রেখে বাজারে নানা ডিজাইনের ও প্যাটার্নের মেটারনিটি জিনস কিনতে পাওয়া যায় যেগুলো পরে ফ্যাশন করা তো যায়ই পাশাপাশি এগুলো খুব আরামদায়কও হয়।
ফ্রক
যেহেতু এই সময় খুব দ্রুত স্বাস্থ্যের পরিবর্তন ঘটে। প্রায় প্রতি সপ্তাহ থেকে শুরু করে প্রতি মাসেই এই সময়ে স্বাস্থ্যের পরিবর্তন ঘটে এবং সে পরিবর্তনগুলো চোখে পরার মতো। সেই ক্ষেত্রে সব সময় নতুন পোশাক বানানো সম্ভব না। তাই ফ্রক হতে পারে গর্ভবতী মায়েদের জন্য অন্যতম একটি পোশাক। কারণ কারণ এই পোশাকটি ঢিলেঢালা ধরনের তাই এই পোশাকটি পরে আরাম করে স্বস্তি নিয়ে চলাফেরা করা যায়। বিশেষ করে চাকরিজীবী গর্ভবতী মায়েদের জন্য এই পোশাকটি একদম মানানসই।
টিউনিক
টিউনিক কিন্তু বহু কাল ধরেই ফ্যাশনের ক্ষেত্রে একটি জায়গা করে নিয়েছে। এই পোশাকটি কিন্তু গর্ভাবস্থায় পরার জন্য আদর্শ। টিউনিক যেহেতু ডিজাইন হিসেবেই একটু ঢিলেঢালা পোশাক, তাই গর্ভবতী মহিলাদের কাছে এটি অত্যন্ত প্রিয় ও আরামদায়ক পোশাক।
নানা ধরনের স্কার্ট
ম্যাক্সি স্কার্ট থেকে শুরু করে এ-লাইন স্কার্ট, প্লিটেড স্কার্ট, এমনকি শর্ট লেয়ারড স্কার্ট গর্ভাবস্থায় পরা যেতে পারে। মানানসই টপ বা শার্ট দিয়ে। আসলে গর্ভাবস্থায় স্কার্ট পরার অনেক সুবিধে রয়েছে। স্কার্ট বেশ আরামদায়ক ঢিলেঢালা পোশাক, গর্ভবতী মহিলাই নিজেকে ফ্যাশনেবল করে তুলতে এ সময়ে স্কার্ট পরতে পছন্দ করেন।
কাপড়ের ধরণ ও নকশা
সেই সময় অবশ্যই প্রধান প্রাধান্য হওয়া উচিত সুতি কাপড়। এছাড়াও এই গরমে অন্য কোন কাপড় পরার দুঃসাহস না দেখানোই ভালো। আর হবু মায়েদের তো একদমই নয়। নকশার কথা যদি বলা হয়, সেইক্ষেত্রে খুব হালকা নকশার পোশাক পরা উচিত। সাধারণ যেকোনো অবস্থা থেকে গর্ভবতী অবস্থায় যেকোনো ব্যাপারে খুব দ্রুত অস্বস্তি অনুভূত হয়। তাই খুব বেশি নকশা আছে এই সমস্ত পোশাক অবশ্যই এড়িয়ে চলা উচিত।
গর্ভাবস্থায় নারীদের শরীরে বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। তাই সাধারণ সময়ের মতো সবধরনের কাজে আপনি অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। সন্তান এবং নিজের সুস্বাস্থ্যের জন্য কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবেই। তার মধ্যে পোশাক একটি। পোশাক নির্বাচন এমনভাবে করতে হবে তা যেন মা বা সন্তান কারও জন্য ক্ষতির কারণ না হয়।