শিশুদের আঁকা চিত্রকর্ম নিয়ে দ্য ফ্রিডম ফান্ডের প্রদর্শনী
শিশুদের বাণিজ্যিক যৌন শোষণ ও পাচারের বিপক্ষে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে পথশিশুদের আঁকা চিত্রকর্ম নিয়ে দ্য ফ্রিডম ফান্ড, রাজধানীর ছায়ানট সাংস্কৃতিক ভবনে একটি চিত্র প্রদর্শনী করেছে।
শিশুদের বানিজ্যিক যৌন শোষণ ও পাচারের বিপক্ষে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে, পথে বসবাসরত ও পাচারের ঝুঁকিতে থাকা শিশুদের অংকিত চিত্রকর্ম নিয়ে, দ্যা ফ্রিডম ফান্ড ১৬ মে, বৃহস্পতিবার সকাল ১০:০০ টা থেকে বিকাল ৩:০০ টা পর্যন্ত, ছায়ানট ধানমন্ডিতে একটি চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করছে।
এই আয়োজনে, নারী যৌন কর্মী মায়েদের শিশুরা এবং বানিজ্যিক যৌন শোষণ, পাচারের ঝুঁকিতে থাকা ৬৫ জন ঢাকা, রাজবাড়ী এবং ফরিদপুরের শিশুরা এঁকেছে, তাদের কাছে স্বাধীনতা মানে কি। রাসেল নামে একজন শিশু ছবি এঁকে লিখেছেন, “স্বাধীনতা মানে সব সুযোগ সুবিধা প্রাপ্তির অধিকার”। জান্নাতুল তার ছবিতে বলার চেষ্টা করেছেন,“স্বাধীনতা মানে পরিবারে নিরাপদে থাকা”। রোদেলা তার ছবির মাধ্যমে বলছেন “স্বাধীনতা মানে যৌন হয়রানী থেকে মুক্তি পাওয়া।“
তাদের আঁকা এই ছবিগুলোর মাধ্যমে উঠে এসেছে, তারা সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের দ্বারা অবহেলার স্বীকার হচ্ছে। আয়োজকরা বলেছেন, শিশুদের বাণিজ্যিক যৌন শোষন ও পাচারের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এই চিত্র প্রদর্শনী আয়োজন করাই ছিল মূল উদ্দেশ্য। এছাড়াও শিশুদের প্রতি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গী পরিবর্তনও ছিল একটি বড় বিষয়।
এ প্রদর্শনী বা শিশুদের অংকিত চিত্রকর্মের মাধ্যমে কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা একটি গোষ্ঠীর গল্প বলা হয়নি, তবে আয়োজকদের চেষ্টা ছিল শিশুদের অনুভূতি প্রকাশ করার, যে বোধের মধ্য দিয়ে শিশুরা গিয়েছেন, আয়োজকরা সেটি প্রকাশের প্রয়োজন মনে করেছেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, এম.এম. মাহামুদুল্লাহ অতিরিক্ত পরিচালক, সমাজসেবা অধিদপ্তর (ডিএসএস), ঢাকা, এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন, খন্দকার মনিরুজ্জামান। সেক্রেটারি, কমিউনিটি ভিত্তিক শিশু সুরক্ষা কমিটি (সিবিসিসিসি) এবং এ.কে. এম মাসুদ আলী নির্বাহী পরিচালক, ইনসিডিন বাংলাদেশ।
পুরো আয়োজনে, আয়োজন সহকারী হিসেবে আছেন, ইনসিডিন বাংলাদেশ, শাপলা মহিলা সংস্থা এবং কর্মজীবি কল্যাণ সংস্থা যারা দীর্ঘদিন ধরে নারী যৌন কর্মী মায়েদের শিশুরা, বানিজ্যিক যৌন শোষণ, পাচারের ঝুঁকিতে থাকা শিশুদের নিয়ে কাজ করে আসছে। আয়োজনে ইভেন্ট পার্টনার হিসেবে রয়েছে ট্রাশ বক্স লিমিটেড এবং ভলান্টিয়ার অপারচুনেটিজ।
দ্যা ফ্রিডম ফান্ড, শিশুদের প্রতি যৌন শোষণ ও নির্যাতন প্রতিরোধ, বাল্যাবিবাহ প্রতিরোধ, শিশুপাচার রোধ, শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োগ বন্ধ, শিশুদের সরকারি- বেসরকারি সেবাপ্রাপ্তি সুনিশ্চিতকরণ ইত্যাদি বিষয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।
অনুষ্ঠানে আসা দর্শনার্থীরা উৎসুক দৃষ্টিতে প্রতিটি ছবি দেখছিলেন আর ভাবছিলেন শিশুদের কাছে স্বাধীনতা মানে কি? সারা আডিটরিয়াম জুড়ে ভর করেছিল নীরবতা। যারা এসেছেন সবাই ঘুরে ঘুরে যেন একদিকেই দৃষ্টিপাত। কি করুণ চাহুনি তাদের দৃষ্টিতে।
এক একটা ছবি যেন এক একটা গল্প বলে। কোন ছবি যেমন বলে আনন্দের গল্প, আবার কোন ছবির মাঝেই ফুটে ওঠে একরাশ বেদনা। প্রতিটা ছবি যেন এক একটা জীবনের প্রতিচ্ছবি।
অনুষ্ঠানে আসা একজন দর্শনার্থী নীলয় দাস আদ্র বলেন, ছবি মূলত মনের প্রতিচ্ছবি। শিশুদের মন ও মানসিকতা বিকাশিত এবং প্রস্ফুটিত করার জন্য তাদের কথা শুনতে হবে। শিশুদের এত সুন্দর হৃদয়ের কথা দাবির মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলতে পারে বাস্তবে না দেখলে কেউ বিশ্বাস করবে না।
আরেকজনের সাথে কতাহ বলে জানা যায়, তার নাম আইরিন সূচনা। কাজ করছেন ভলান্টিয়ার হিসেবে। তার মতে,
এমন ভিন্নধর্মী প্রদর্শনী আমি সচরাচর দেখিনা, আমি মনে করি এমন প্রদর্শন আরো দরকার। এতে করে পথে বসবাসরত ও পাচারের ঝুঁকিতে থাকা বাচ্চাদের সাথে কত রকমের হেনস্তা হয় তা আমরা বুঝতে পারিনা, এই প্রদর্শনের মাধ্যমে আমি উপলব্ধি করতে পাচ্ছি, তাদের জীবন কত বেদনাদায়ক। তাদের পাশে আমাদের দরকার।
আজকের পরিবেশ অনেক সুন্দর ছিলো। প্রদর্শনী দেখতে আসা শিশুদের, অনেক পছন্দ হয়েছে। তারা তাদের মা বাবাদের কে আনন্দের সাথে নিয়ে এসেছে। তারা ও বুঝতে পারছে প্রদর্শনের মাধ্যমে, তাদের বয়সের বাচ্চাদের সাথে কত কি হয়ে যাচ্ছে। এবং শিশুরা কিভাবে পাচার থেকে সচেতন হতে পারবে, তাও জেনেছে।
ফারজানা আফরোজ, সহকারী পরিচালক, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, বলেন, ‘বাংলাদেশের আগামী প্রজন্মের শিশুদের সুরক্ষায় সরকার কাজ করছে। পথশিশু, যৌন নির্যাতনের শিকার শিশু, পাচারের শিকার ও ঝুকিতে থাকা শিশুদের শিক্ষা, আশ্রয় ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে হবে। এই শিশুরা আমাদের সম্পদ এবং তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নিশ্চিতের জন্য যেকোন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপে সরকার আপনাদের পাশে আছে, থাকবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে।