Skip to content

৪ঠা মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | শনিবার | ২১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মেরিনা তাবাসসুম: অভিনন্দন আলোর পথের যাত্রী

মেরিনা তাবাসসুম এক অদম্য প্রতিভার নাম। যিনি সম্প্রতি বেশ আলোচিতও। তিনি একজন স্থপতি। ২০২০ সালে, স্থপতি মেরিনা তাবাসসুমকে কোভিড-১৯ যুগের তৃতীয়-বড় চিন্তাবিদ হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছিল একটি আন্তর্জাতিক ম্যাগাজিন। ১৯৯৫ সালে তাবাসসুম আরেক স্থপতি কাশেফ চৌধুরীর সঙ্গে স্থাপত্য ফার্ম আরবানা প্রতিষ্ঠা করেন। এই ফার্মটি প্রায় দশ বছর ধরে বেশ কয়েকটি প্রকল্প নকশা করে আসছে। যা সত্যিই প্রশংসনীয়। এই প্রতিভাবান নারী সম্প্রতি খ্যাতনামা মার্কিন সাময়িকী টাইম–এর করা বিশ্বের প্রভাবশালী ১০০ ব্যক্তির তালিকায় স্থান পেয়েছেন। ১৭ এপ্রিল ২০২৪ সালের প্রভাবশালী ১০০ ব্যক্তির এই তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।

বাংলাদেশি নারীদের জন্য স্বাধীন চিন্তা ও স্বাধীন জীবন সহজ কথা নয়। ফলে তার জন্য অনেক প্রতিবন্ধকতার পাহাড় ডিঙিয়ে টাইম ম্যাগাজিনের প্রভাবশালী নারীর তালিকায় স্থান পাওয়া রীতিমতো এক দীর্ঘ লড়াই ও বিস্ময়ের ইতিহাস! স্থাপতি মেরিনা সে কাজটি করে দেখালেন। শত প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে আত্মপরিচয় যেন খুঁজে পেলেন। ‘দ্য হান্ড্রেড মোস্ট ইনফ্লুয়েনশিয়াল পিপল অব ২০২৪’ শীর্ষক এই তালিকায় উদ্ভাবক শ্রেণীতে স্থান পেয়েছেন তিনি। তার বেশকিছু স্থাপত্যকর্মের উদ্ভাবনী বৈশিষ্ট্য, নান্দনিকতা ও পারিপার্শ্বিক প্রভাবের জন্যই মূলত এই খেতাব পেয়েছেন।

তার সঙ্গে তালিকায় থাকা প্রভাবশালী ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন রাশিয়ার ইউলিয়া নাভালনায়া, শান্তিতে নোবেলজয়ী ইরানের মানবাধিকার কর্মী নার্গিস মোহাম্মদী, পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্কসহ পরিচিত অনেক মুখ। এছাড়া বলিউড অভিনেত্রী আলিয়া ভাটও শিল্পীশ্রেণীতে এই তালিকায় স্থান পেয়েছেন। শত প্রভাবশালী নারীর মধ্যে স্থান করে নিয়ে তিনি দেশ ও জাতিকে গর্বিত করেছেন৷ বিশ্বের বুকে সোনার বাংলার নাম ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করেছেন। তিনি স্থাপত্য চর্চায় এমন এক রীতির উদ্ভাবন করেছেন যেখানে স্থানীয় সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের পাশাপাশি পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক সচেতনতাও স্থান পেয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় যেমনটা হওয়া উচিত, ঠিক তেমন স্থাপত্যই নির্মাণ করেছেন। যা একদিকে তাকে নতুনভাবে বিশ্বের বুকে তুলে ধরেছে, অন্যদিকে জলবায়ুর পরিবর্তন মোকাবিলায় জাতিকে নতুনভাবে বার্তা দিয়েছে।

ঢাকার দক্ষিণখানে বায়তুর রউফ মসজিদের ব্যতিক্রম ডিজাইনের কারণে ২০১৬ সালে মর্যাদাসম্পন্ন আগা খান অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হন মেরিনা তাবাসসুম। এছাড়া ২০১৮ সালে পান জামিল প্রাইজ। অন্যান্য কাজের জন্য ২০২১ সালে যুক্তরাজ্যের মর্যাদাপূর্ণ সন পদক লাভ করেন। ২০২০ সালে ব্রিটিশ সাময়িকী প্রসপেক্ট–এর ৫০ চিন্তাবিদের শীর্ষ দশেও স্থান করে নিয়েছিলেন তিনি। ২০০৪ সালের পেয়েছেন অনন্যা শীর্ষ দশ পুরস্কার। তিনি ২০০৫ সালে তার নিজস্ব ফার্ম, মেরিনা তাবাসসুম আর্কিটেক্টস প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এর প্রধান স্থপতি হিসেবেও রয়েছেন তিনি। ২০০৫ সাল থেকে তাবাসসুম ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন পরিদর্শন অধ্যাপক। যেখানে তিনি সমসাময়িক দক্ষিণ এশিয়ার স্থাপত্যের ওপর প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। এশিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক স্টুডিদেরও পরিচালনা করা দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। অন্যান্য বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সম্মেলনে বক্তৃতা ও উপস্থাপনা করেছেন। তিনি ২০১৫ সাল থেকে স্থাপত্য, ভূদৃশ্য, বসতির বেঙ্গল ইনস্টিটিউটে অ্যাকাডেমিক প্রোগাম পরিচালক ছিলেন।

তার উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে ১৯৯৭-২০০৬: স্বাধীনতা জাদুঘর, ঢাকা,বাংলাদেশ।২০০১: এ৫ বাসভবন, ঢাকা, বাংলাদেশ, ২০০৬-২০১১: কমফোর্ট রিভেরি, ঢাকা, বাংলাদেশ, ২০০৯: ফরিদাবাদের অবকাশ বাড়ি, ঢাকা, বাংলাদেশ, ২০১২: বায়তুর রউফ মসজিদ, ঢাকা, বাংলাদেশ, ২০১৮: পানিগ্রাম ইকো রিসোর্ট ও স্পা, যশোর, বাংলাদেশ, ২০২০: খুদি বাড়ি, বাংলাদেশের উপকূলবর্তী চরসমূহ।

মেরিনা তাবাসসুমের মতো নারীরা সমাজের অনুপ্রেরণাদায়িনী। তারা মসৃণ পথে না হাঁটলেও জীবনে থমকে যাননি। বাধা-বিপত্তি ডিঙিয়ে আলোকের অনুসন্ধান করেছেন। স্থাপত্যবিদ্যায় ভয় না করে জয় করেছেন। আমাদের সমাজে আগে নারীরা পেশা নির্বাচারে দ্বিধান্বিত ছিল। এখন নিজেদের যে যোগ্য করে তুলছে, এটা আশা জাগানিয়া ঘটনা। স্থপতি মেরিনা যে সময় স্থাপত্য নিয়ে এভাবে এগুনোর কথা ভেবেছেন, সে-সময়টা হয়তো সবার কাছ থেকে সমান সমর্থন-সহযোগিতা তিনি পাননি। তবু এ পথে তিনি আলোর যাত্রী। তার এই অর্জন দেশের অর্জন।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ